Triple Unnatural Death in Garia

‘যা ডিসিশন নেওয়ার নিয়ে ফেলেছি’! ফেসবুক লাইভ করে বলেছিলেন গড়িয়া স্টেশন এলাকার সুমনরাজ

কিছুটা অসংলগ্ন ভাবে সুমনরাজকে বলতে শোনা যায়, ‘‘ইউটিউব ভিডিয়োয় একটা কমেন্ট নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছিলাম। এখন যদি সেটা নিয়ে কেউ মার মার কাট কাট করে, তা হলে কী করা উচিত?’’

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২৪ ১৬:৩১
Share:

— নিজস্ব চিত্র।

গড়িয়া স্টেশনের কাছে একটি বন্ধ ফ্ল্যাটের ভিতর থেকে উদ্ধার হয়েছে বাবা-মা এবং তাঁদের পুত্রসন্তানের ঝুলন্ত দেহ। তাঁরা আত্মহত্যা করেছেন কি না বা করলেও কেন করেছেন, তার উত্তর খুঁজতে গিয়ে বুধবার পুলিশের হাতে এসেছে একটি ফেসবুক লাইভের লিঙ্ক। ওই ফেসবুক লাইভটি করেন সুমনরাজ মৈত্র। ৩৯ বছরের সুমনরাজ সেই লাইভে জানিয়েছেন, তিনি একটি ‘ডিসিশন’ নিয়েছেন। আর সেই ‘ডিসিশন’ বা সিদ্ধান্ত তাঁকে নিতেই হতো।

Advertisement

বুধবার সকালেই প্রকাশ্যে আসে গড়িয়া স্টেশন এলাকায় ওই আত্মহত্যার ঘটনা। বন্ধ ফ্ল্যাটের দরজা খোলার পর তিন জনের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মৃতদের নাম অপর্ণা মৈত্র (৬৮), তাঁর স্বামী স্বপন মৈত্র (৭৫) এবং তাঁদের ছেলে সুমনরাজ। স্থানীয়রা জানিয়েছিলেন, গত তিন দিন ধরে মৈত্র পরিবারের কাউকে বাইরে বেরোতে দেখেননি তাঁরা। বুধবার সকালে ফ্ল্যাটের ভিতর থেকে দুর্গন্ধ ছড়ানোয় পুলিশকে খবর দেন। এর পরেই ফ্ল্যাটের ভিতরে তিনটি আলাদা জায়গায় তিন জনের দেহ ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ ঘটনাটিকে আত্মহত্যার ঘটনা বলে মনে করলেও বুধবার বিকেল পর্যন্ত ওই ফ্ল্যাট থেকে কোনও সুইসাইড নোট পাওয়া যায়নি। এর মধ্যেই পুলিশের হাতে আসা এই ফেসবুক লাইভটি উসকে দিল আত্মহত্যার জল্পনা।

ওই ফেসবুক লাইভে কিছুটা অসংলগ্ন ভাবে সুমনরাজকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘ঘরের মধ্যে ইউটিউব ভিডিয়ো দেখছিলাম। সেটা নিয়ে একটা কমেন্ট নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছিলাম। এখন যদি সেটা নিয়ে কেউ মার মার কাট কাট করে, তা হলে আমার কী করা উচিত? আমাকে দেখতে পেলেই ওরা মেরে দেবে বলছে!’’

Advertisement

এর পরে কিছুটা থেমে আবার সুমনরাজকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমার এক ছোটোমামা আছে তাকে এটা বলেছি। জানি না, উনি বলছেন একটু অপেক্ষা করে যেতে। এখান থেকে হয়তো আমাদের শিফট করে দেবেন। কিন্তু চলে যাওয়াটা এই সমস্যার সমাধান নয়।’’

এর পরের বক্তব্যে ‘ডিসিশনে’র বিষয়টি কিছুটা স্পষ্ট হয়। কারণ সুমন বলেছেন, ‘‘বেশ কিছু দিন হল, এখানকার বাচ্চারা আমাকে পাগল পাগল বলে যাচ্ছে। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আজই আমাকে একটা ডিসিশনে আসতে হবে। হয়তো আমি সেই ডিসিশনটা নিয়েও ফেলেছি।’’ যদিও এই ‘ডিসিশন’ বা সিদ্ধান্তই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত কি না তা ফেসবুক লাইভে স্পষ্ট জানাননি সুমনরাজ। তাঁর বাবা-মায়ের কথাও সেখানে উল্লেখ করেননি তিনি।

ফেসবুক লাইভটি করা হয়েছে একটি আপাত বিস্রস্ত ঘরে। নেপথ্য দেখা যাচ্ছে এক জন বৃদ্ধ মানুষ শুয়ে আছেন বিছানায়। তাঁর হাত কাঁপছে। অগোছালো ওই ঘরেই বসে এর পর সুমনরাজ কথা বলতে বলতে প্রসঙ্গ থেকে প্রসঙ্গান্তরে গিয়েছেন। বলেছেন, ‘‘আমার বেশি বন্ধু নেই। তবে আমার এক প্রিয় বন্ধুর আজ জন্মদিন। তাকে হয়তো আমি শুভেচ্ছা জানাতে পারব না। তাকে বলতে চাই ‘শুভ জন্মদিন’।’’

এর পর আবার গিয়েছেন অন্য প্রসঙ্গে। বলেছেন, ‘‘আমার এক কাকা ছিলেন, তাঁর কাছে আমি কাজ করতাম। আমার বাবা মার এত বয়স হয়ে গিয়েছে যে, তাদের নিয়ে বেরোতে পারব না।’’ লাইভের শেষের দিকে সুমনরাজ বলেছেন তাঁর একাকীত্বের যন্ত্রণার কথাও। তিনি বলেন, ‘‘আমাকে একঘরে করে রাখা হয়েছে। গত ৯ বছরে আমি কারও সঙ্গে কোনও কথা বলিনি।’’

তবে কি এই একাকীত্ব, এই পাগল বলে ডাকার বেদনা বা কোনও হুমকির ভয়েই কি তাঁর ‘ডিসিশন’ নিলেন সুমন? পুলিশ তদন্ত করছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement