সাঁতরাগাছি ঝিল। —ফাইল চিত্র।
সাঁতরাগাছি ঝিলের দূষণ কমানোর প্রক্রিয়া নিয়ে জটিলতা কাটছেই না। এ বার ঝিলের দূষণ কমানো সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রকল্পের আর্থিক অনুমোদন ও অগ্রগতি সম্পর্কে রাজ্যের মুখ্যসচিবের জমা দেওয়া হলফনামা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিল জাতীয় পরিবেশ আদালত।
গত মার্চে পরিবেশ আদালত মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দিয়েছিল, ঝিলের দূষণ কমাতে গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্প কত দিনের মধ্যে শেষ হবে, তা যেন নির্দিষ্ট করে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়। ১৮ মার্চ দেওয়া ওই নির্দেশে আদালত চার সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা জমা করতে বলেছিল। সেই মতো রাজ্যের মুখ্যসচিব হলফনামা জমা করেন। কিন্তু তাতে ঝিলের দূষণ কমানোর জন্য গৃহীত প্রকল্পগুলি কবে শেষ হবে, সে ব্যাপারে কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমার উল্লেখ নেই বলে আদালত মন্তব্য করে। তা ছাড়া, ঝিল সংলগ্ন জমি থেকে দখলদারদের উচ্ছেদের বিষয়েও কিছু উল্লেখ করা নেই। সে কারণে সংশ্লিষ্ট হলফনামার পরিবর্তে আদালত ফের নতুন করে তা জমা দিতে বলেছে। মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ১৫ জুলাই। তার মধ্যে নতুন হলফনামা জমা দিতে হবে মুখ্যসচিবকে।
কিন্তু এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছে, বার বার ঝিলের দূষণ কমানোর ক্ষেত্রে রাজ্যের জমা দেওয়া হলফনামা সংক্রান্ত এই বিভ্রান্তি কেন তৈরি হচ্ছে। এর আগে ফেব্রুয়ারিতে মুখ্যসচিবের জমা দেওয়া আর একটি হলফনামা নিয়েও একই প্রশ্ন তুলেছিল আদালত। প্রসঙ্গত, ঝিলের দূষণ কমানোর ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার, তাদের অধীনস্থ একাধিক দফতর, হাওড়া পুরসভা, রেল-সহ একাধিক পক্ষের ভূমিকা থাকায় আদালতের তরফে অতীতে মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি তৈরি করে দেওয়া হয়। গত নভেম্বরে সেই কমিটি বৈঠক করে। যার ভিত্তিতে মুখ্যসচিবের তরফে গত ৩ ফেব্রুয়ারি হলফনামা জমা দেওয়া হয়।
কিন্তু সে বার আদালতের তরফে রীতিমতো ‘ভর্ৎসনা’ করা হয় মুখ্যসচিবকে। তাঁর নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হলেও ঝিলের দূষণ কমানোর সঙ্গে যুক্ত সব পক্ষ পরস্পরবিরোধী মন্তব্য করছে এবং প্রত্যেকেই নিজেদের দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করে আদালত। এখানেই শেষ নয়। আদালত এ-ও বলে— রেলের কাছ থেকে তো বটেই, এমনকি, নিজের অধীনস্থ দফতর থেকেও সঠিক তথ্য সংগ্রহ করতে মুখ্যসচিব ব্যর্থ হয়েছেন।
যার পরিপ্রেক্ষিতে এক পরিবেশবিজ্ঞানী বলেন, ‘‘বার বার এই ঘটনা ঘটছে, যা খুবই আশ্চর্যের। রাজ্য সরকারের তরফে এটা দায়িত্বজ্ঞানশীলতার পরিচয় নয় একেবারেই।’’ মামলার আবেদনকারী সুভাষ দত্তের বক্তব্য, ‘‘রাজ্যের মুখ্যসচিব সব বিষয়ে না-ই জানতে পারেন। কিন্তু তাঁর অধীনস্থ দফতর, যারা সরাসরি এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, তারা জানবে না কেন? এটা সরকারের সার্বিক ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছু নয়।’’