বন্ধ: উদ্বোধন হয়ে গেলেও যান চলাচলের জন্য এখনও খোলা হয়নি টালা সেতু। ফাঁকা সেতুতে খেলা তিন খুদের। [ডান দিকে, টালা সেতুতে ওঠার জন্য চলে আসা গাড়িগুলি ঘুরিয়ে দেওয়ার জেরে যানজট বেলগাছিয়া সেতুতে। শুক্রবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী
আশঙ্কা ছিলই। উদ্বোধন হয়ে গেলেও এখনই গাড়ি চলবে কি নবনির্মিত টালা সেতুতে? পুলিশ-প্রশাসনের তরফে এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনও নির্দেশ না থাকায় এক রকম ধোঁয়াশাও তৈরি হয়েছিল। সেই ধোঁয়াশা সঙ্গে নিয়েই টালা সেতু ব্যবহার করে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছতে গিয়ে শুক্রবার ভুগতে হল অনেককে। কেউ ওই রাস্তা ধরে গিয়ে দেখলেন, সেতু বন্ধ। ফলে তাঁদের আটকে থাকতে হল যানজটে। কেউ আবার তড়িঘড়ি বিকল্প রাস্তা নিতে গিয়ে পড়লেন আরও ফ্যাসাদে। পুলিশ গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়ায় দেরিতে পৌঁছলেন গন্তব্যে। এই বিভ্রান্তির জেরে এ দিন চাপ বেড়েছে বেলগাছিয়া সেতু এবং চিৎপুর লকগেট উড়ালপুলেও। দুপুর পর্যন্ত যান নিয়ন্ত্রণে নাজেহাল এক ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীর মন্তব্য, ‘‘নতুন সেতু ব্যবহার করতে পারবেন ভেবে যাঁরা এই পথে এসেছিলেন, তাঁদের নিয়েই নাজেহাল অবস্থা। উদ্বোধন আর সেতুতে যান চলাচল যে এক নয়, অনেকেরই সেই ধোঁয়াশা কাটেনি।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, ধোঁয়াশা কাটেনি তাদেরও। টালা সেতু দিয়ে কবে থেকে যান চলাচল করাতে হবে, তা-ই এখন বুঝতে পারছেন না পুলিশকর্মীরা। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও উদ্বোধন করতে গিয়ে বলেছেন, ‘‘এখনই বড় বড় ভারী গাড়ি হয়তো আমরা সেতুতে উঠতে দিচ্ছি না কয়েক দিনের জন্য। একটু সময় দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, যে কোনও নতুন কাজে একটু সময় দিতে হয়।’’ কিন্তু কবে থেকে ছোট গাড়ি চলবে, তারও স্পষ্ট নির্দেশ ছিল না। ফলে কখনও ধরা হচ্ছে, উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে শ্যামবাজারের দিক থেকে সেতুতে ওঠার ঠিক মুখে যে মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল, তা খোলা হয়ে গেলেই যান চলাচল করানো যাবে। কখনও মনে করা হচ্ছে, টালা সেতু দিয়ে যান চলাচল করাতে আরও দিন দুয়েক লেগে যাবে। তবে তখনও দু’টি ফ্ল্যাঙ্ক ব্যবহার করা যাবে না। ডানলপের দিক থেকে শ্যামবাজারের দিকে আসার যে ফ্ল্যাঙ্কটি রয়েছে, আপাতত সেটি দিয়েই ছোট গাড়ি কলকাতার দিকে নিয়ে আসা হবে। এর পরে ধীরে ধীরে খুলবে অন্য ফ্ল্যাঙ্কটি। এর পাশাপাশি, পুজোর পরে কিছু কাজের জন্য ফের টালা সেতু বন্ধ হওয়ার কথাও ঘুরপাক খাচ্ছে নানা মহলে। এ নিয়ে ওই সেতু নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক আধিকারিক বললেন, ‘‘কী হবে আর কী হবে না, সেটাই পরিষ্কার নয়। তবে আমাদের প্রচুর কাজ বাকি, দ্রুত তা শেষ করতে হবে সেটা বোঝা যাচ্ছে।’’
এ দিন টালা সেতু চত্বরে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মঞ্চ খোলার কাজ চলছে জোরকদমে। শ্যামবাজার এবং পাইকপাড়ার দিকে টালা সেতুতে ওঠার রাস্তা বন্ধ করা হয়েছে কলকাতা পুলিশের গার্ডরেল বসিয়ে। দু’দিকেই সর্বক্ষণের নজরদারিতে রয়েছে লালবাজারের বিশেষ বাহিনী। সেতুতে কেউ যাতে কোনও ভাবে উঠে না পড়েন, সেটি যেমন তাঁরা দেখছেন, তেমনই দেখছেন মঞ্চ খোলার কাজ যাতে দ্রুত হয়। টালা সেতু খুলে গিয়েছে ভেবে এসে পড়া গাড়ি, মোটরবাইক ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে গ্যালিফ স্ট্রিট দিয়ে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মতো এ দিনও গাড়ি ঢুকতে দেওয়া হয়নি আর জি কর সেতু থেকে মন্মথনাথ গাঙ্গুলি রোডে। তেমনই বন্ধ চিৎপুর লকগেটের ডান দিকের রাস্তা ধরে আর জি কর হাসপাতালের দিকে যাওয়ার পথও। দুপুর দেড়টাতেও এর জেরে প্রবল গাড়ির চাপ বেলগাছিয়া সেতুতে। মাঝেমধ্যেই এক দিকের গাড়ি আটকে ভিড় হালকা করাতে হচ্ছে ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীদের। তার মধ্যেই গাড়ির লম্বা লাইন ক্যানাল ওয়েস্ট রোডে। শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ের কাছের সিগন্যালেও অপেক্ষা করতে হচ্ছে দীর্ঘক্ষণ।
যা নিয়ে শ্যামবাজার ট্র্যাফিক গার্ডের এক পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘সেতু ভাঙার কাজ শুরু হওয়ার আগে থেকে এই জিনিস চলছে। আড়াই বছরেরও বেশি সময় এই ট্র্যাফিক গার্ডের পুলিশকর্মীরা দিন-রাত এক করে কাজ করছেন। সেতু খুলে যাচ্ছে, একটু হালকা হওয়া যাবে ভেবে গতকাল আশ্বস্ত হয়েছিলাম। কিন্তু এ দিন সকাল থেকেই আবার যে-কে-সেই!’’
ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীর কথা শুনে দাঁড়িয়ে পড়া এক স্থানীয় বাসিন্দা বললেন, ‘‘ভোগান্তি আর শেষ হচ্ছে না। সেতু যখন ব্যবহারই করা যাবে না, তা হলে এত তড়িঘড়ি উদ্বোধন করার কী অর্থ?’’ স্পষ্ট উত্তর মিলছে না পুলিশ বা প্রশাসন কারও কাছেই।