ফাইল চিত্র।
দিনের পর দিন কলকাতা পুরসভার হেরিটেজ কমিটির কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন তুলছিল রাজ্য হেরিটেজ কমিশন। ‘নিয়ম বহির্ভূত’ ভাবে পুরসভা ঐতিহ্যশালী ভবনের ‘গ্রেডেশন’ পাল্টে দিচ্ছে, ইচ্ছে মতো তার অবনমন ঘটাচ্ছে, এমন একগুচ্ছ অভিযোগ ছিল কমিশনের। এ বার সেই পুরসভার সঙ্গেই বৈঠক করার কথা হয়েছে কমিশনের। কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, শহরের ঐতিহ্য বিষয়ে কমিশন এবং পুরসভা যৌথ ভাবে কাজ করবে।
পুরকর্তাদের একাংশের প্রশ্ন, হঠাৎ কমিশনের এই অবস্থান বদলের পিছনে কি কোনও ‘চাপ’ রয়েছে? না হলে এত দিন তো শহরের কোনও বাড়িকে হেরিটেজ ঘোষণা করলেও সে তথ্য পুরসভাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করত না কমিশন। গত জুলাইয়েই পুরসভাকে ‘অন্ধকারে’ রেখে শরৎ বসু রোডের একটি বাড়িকে হেরিটেজ বলে ঘোষণা করে কমিশন। পুরসভাকে না জানানোর বিষয়ে সে বার কমিশনের যুক্তি ছিল, রাজ্যের যে কোনও প্রান্তেই হেরিটেজ সংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার তাদের রয়েছে। কলকাতাও রাজ্যের বাইরে নয়। তাই পুরসভাকে আলাদা করে জানানোর প্রয়োজন পড়ে না।
পুর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারপার্সন ফিরহাদ হাকিম তখন বলেছিলেন, ‘‘ঐতিহ্য রক্ষার ক্ষেত্রে প্রধান নিয়ামক সংস্থা হিসেবে রাজ্য হেরিটেজ কমিশন কোনও বাড়িকে হেরিটেজের মর্যাদা দিতেই পারে। কিন্তু সেটা স্থানীয় পুরসভাকে জানানো দরকার। কারণ বাড়ির নকশা অনুমোদন, মিউটেশন অথবা সংস্কার সংক্রান্ত যাবতীয় সিদ্ধান্ত পুরসভাই নেয়। তাদের না জানিয়ে একক ভাবে কমিশন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।’’
পুরকর্তাদের একাংশের অনুমান, ফিরহাদের ওই প্রতিক্রিয়ার পরেই কমিশন ‘চাপে’ পড়ে যায়। তখনই ঐতিহ্য রক্ষায় যৌথ ভাবে কাজের বিষয়টি উঠে আসে। রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে পুরসভা যা বলার বলবে। আমি কথা বলতে প্রস্তুত নই।’’ আর ফিরহাদ বলেন, ‘‘রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের সঙ্গে কথা হয়েছে। ওদের সঙ্গে বৈঠক করব আমরা। শহরের ঐতিহ্য নিয়ে যৌথ ভাবে কাজ হবে।’’
পুরকর্তাদের একাংশের মতে, শহরের ঐতিহ্য রক্ষা নিয়ে ফিরহাদ শুরু থেকেই ‘সংবেদনশীল’। ব্যক্তিগত পরিসরেও সে কথা জানিয়েছেন একাধিক বার। হেরিটেজ তালিকা সংক্রান্ত যে সমস্ত ত্রুটি রয়েছে, সেগুলি সংশোধনের উপরেও জোর দিয়েছেন পুর প্রশাসক। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘শহরের ঐতিহ্য সংক্রান্ত বিভ্রান্তি দূর করে যৌথ ভাবে কাজ করার জন্যই ফিরহাদ হাকিম কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চেয়েছেন। এ বার দেখা যাক, রাজ্য হেরিটেজ কমিশন সে ব্যাপারে কতটা সদিচ্ছা দেখায়।’’