রাতে বেআইনি পার্কিং নিয়ে কড়া হল পুরসভা

নোটিসে লেখা, বেড়ি খুলতে হলে এক হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। পুরসভার কোনও ট্রেজারিতে ওই টাকা জমা দিলে রসিদ মিলবে। তা পার্কিং দফতরে দেখালেই বেড়ি খুলে দেওয়া হবে। অভিযানের সময় কেউ সঙ্গে সঙ্গে টাকা মিটিয়ে দিলে বেড়ি মুক্তি ঘটবে গাড়ির।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৭ ০২:৪১
Share:

শাস্তি: ফুটপাথে গাড়ি রাখায় চাকায় ক্ল্যাম্প পরিয়ে দিচ্ছেন পুরকর্মীরা। সোমবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী

প্রথম রাতের অভিযানেই ফল মিলল হাতেনাতে।

Advertisement

রাতের শহরে রাস্তায়, ফুটপাথে কোথায় কোথায় বেআইনি ভাবে গাড়ি রাখা হয়েছে, তা দেখতে গিয়ে সোমবার ৬০টি গাড়ির চাকায় বেড়ি (ক্ল্যাম্প) পরিয়ে দিল পুলিশ। গাড়ির কাচে নোটিস লটকে দিল পুরসভা।

রাত পৌনে ১২টা নাগাদ পুরসভার বিশেষ দলের সঙ্গে গিয়ে সিআইটি রোডে গিয়ে দেখা গেল ওই রাস্তার ফুটপাথ, অলিগলি, সুন্দরীমোহন অ্যাভিনিউয়ের উপরে ফুটপাথে সার সার গাড়ি। পুরসভার খাতায় কোনও গাড়িই নথিভুক্ত নয়।

Advertisement

নোটিসে লেখা, বেড়ি খুলতে হলে এক হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। পুরসভার কোনও ট্রেজারিতে ওই টাকা জমা দিলে রসিদ মিলবে। তা পার্কিং দফতরে দেখালেই বেড়ি খুলে দেওয়া হবে। অভিযানের সময় কেউ সঙ্গে সঙ্গে টাকা মিটিয়ে দিলে বেড়ি মুক্তি ঘটবে গাড়ির।

সোমবার রাতের অভিযানের সময় সিআইটি রোডের এক গাড়ির মালিকের আর্জি, ‘‘আমার গাড়ি রাখার কোনও জায়গা নেই। এত দিন ধরে ফুটপাথেই গাড়ি থাকত। এখন কী হবে?’’ অভিযানের নেতৃত্বে থাকা পুর-কর্তা জানিয়ে দিলেন, পুরসভার কাছে পার্কিং ফি দিয়ে অনুমোদন নিতে হবে। কোনও ছোট গলিতে গাড়ি রাখা যাবে না। কারণ দমকল, অ্যাম্বুল্যান্স ঢুকতে অসুবিধা হতে পারে।

অভিযানের প্রথম দিনেই ৬০টি ছোট গাড়ির চাকায় বেড়ি পরাল পুরসভা। পুরসভার এই ‘আচমকা’ অভিযানে ফাঁপরে পড়েছেন অনেক বাসিন্দাই। রাতে বাসস্থানের নীচে, বা কাছাকাছি কোথাও গাড়ি রেখে যাঁরা নিশ্চিন্তে ছিলেন এত দিন, এ বার গাড়ি রাখার চিন্তায় তাঁদের কপালে ভাঁজ।

রাত-পার্কিংয়ের বিধিনিষেধ

রাখা যাবে: বাড়ির নীচে, আশপাশের রাস্তা, ফুটপাথে।

সময়: রাত ১০টা থেকে সকাল ৭টা।

ভাড়া: মাসে ৪০০ টাকা। কমপক্ষে এক বছরের জন্য। বাড়ির কেউ অসুস্থ থাকলে (প্রমাণ দেখিয়ে) ২-৩ মাস।

আবেদন: সঙ্গে ব্লু-বুক এবং প্যানকার্ডের ফোটোকপি।

ভারপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার জানান, বিনা অনুমতিতে রাতে শহরের রাস্তা, ফুটপাথে গাড়ি রাখা নিষিদ্ধ। সেই নিয়ম না মেনে যত্রতত্র ছোট গাড়ি রাখার প্রবণতা বাড়ছে। অনেক সময় রাতে অলিগলিতে আগুন লাগলে এই সব গাড়ির জন্য দমকল ঢুকতে পারে না। পুরসভার রাস্তায় গাড়ি থাকলেও তা থেকে কোনও আয় হচ্ছে না। তাই পুর প্রশাসন দিনের মতো রাতেও বেড়ি পরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

পুরসভা সূত্রের খবর, অতীতে রাতের বেআইনি গাড়ি রাখার বিরুদ্ধে অভিযানের খবর স্থানীয় থানার একাংশের মাধ্যমে গাড়ির মালিক জেনে যেতেন। তাতে অভিযান পণ্ড হতো। এ বার স্থানীয় থানাকে না জানিয়ে সরাসরি লালবাজারে খবর দিয়ে পুলিশের ব্যবস্থা করবে পুরসভা।

পুরসভা সূত্রের খবর, সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে বেআইনি পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে অভিযানের ঘোষণা করেছিল পুরসভা। এ বার কাজ শুরু হল। পুরসভা সূত্রের দাবি, রাতে শহর জুড়ে হাজার হাজার গাড়ি থাকলেও কোনও আয় হতো না পুরসভার। স্থানীয় ভাবে কেউ কেউ অবশ্য গাড়ি মালিকের থেকে টাকা নেন বলে অভিযোগ।

প্রথম দিনে যে ৬০টি গাড়িতে বেড়ি লাগানো হয়েছে, তার মধ্যে ৩১টি গাড়ির মালিক ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই জরিমানা দিয়ে গাড়িকে বেড়ি মুক্ত করেছেন। ওই ৩১ জনের মধ্যে ২০ জন আবার রাতে পুরসভার অনুমোদন নিয়ে স্থায়ী পার্কিংয়ের জন্য আবেদন করেছেন। দেবাশিসবাবুর কথায়, ‘‘আমরা চাই মানুষ স্থায়ী পার্কিংয়ে গাড়ি রাখুন। তাতে পুরসভা আয়ও বাড়বে এবং রাতের শহরের চলার পথও বাধামুক্ত হবে।’’

আগেও পুরসভা এ ধরনের অভিযান চলিয়েছে। কয়েকটি অভিযানের পরেই তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এ বারের অভিযানের ভবিষ্যৎ সে রকম হবে না বলে দাবি পুর-কর্তৃপক্ষের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement