বন্ধ হয়ে রয়েছে লালদিঘিতে গঙ্গার জল ঢোকা-বেরোনোর পথ। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।
শহরের প্রাণকেন্দ্র বি বা দী বাগে অন্যতম ঐতিহ্যশালী লালদিঘির জলই দূষণের কবলে। যার ফলে বিপদের মুখে সেখানকার মৎস্যকুল।
প্রাচীন এই জলাশয় রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে বি বা দী বাগ অ্যাঙ্গলার্স অ্যাসোসিয়েশন। তাদের তরফে জানানো হয়েছে, জোয়ারের সময়ে গঙ্গার জল ঢোকা এবং ভাটার সময়ে তা বার করার জন্য লালদিঘিতে স্লুইস গেট ছিল। কিন্তু বছর ছয়েক আগে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজের জন্য সেই গেটটি বন্ধ করে দেয় কলকাতা মেট্রো রেলওয়ে কর্পোরেশন লিমিটেড (কেএমআরসিএল)। অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আহমেদ আলি বলেন, ‘‘মেট্রোর তরফে বলা হয়েছিল, কাজ শেষ হয়ে গেলে স্লুইস গেটটি খুলে দেওয়া হবে। কিন্তু দীর্ঘ দিন কেটে গেলেও তা হয়নি। ফলে, গঙ্গার জল দিঘিতে ঢুকতে না পারায় বিভিন্ন জলজ প্রাণীকে বাঁচিয়ে রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।’’ বিষয়টি জানিয়ে ওই সংগঠনের তরফে চিঠি দেওয়া হয়েছে রাজ্য মৎস্য দফতর, কেএমআরসিএল এবং কলকাতা পুরসভাকে।
স্লুইস গেট বন্ধ থাকলে সমস্যা কোথায়? প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিভাগের ডিন তথা অ্যাকোয়াটিক এনভায়রনমেন্ট ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক বিপুলকুমার দাস বলেন, ‘‘স্লুইস গেটের মাধ্যমে গঙ্গার জল ঢোকা-বেরোনোর কারণে পুকুর বা জলাশয়ের ভৌত-রাসায়নিক গুণাবলী উন্নত হয়। কিন্তু কোনও জলাশয় বদ্ধ হয়ে পড়লে জল দূষিত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। শহরের বুকে এমন ঐতিহ্যশালী জলাশয়ে গঙ্গার জল ঢোকা-বেরোনোর ব্যবস্থা অবিলম্বে চালু করা প্রয়োজন। যাতে মাছ ও অন্যান্য প্রাণী সুস্থ ভাবে বাঁচতে পারে।’’
ওই সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, লালদিঘিতে গঙ্গার জল ঢোকা-বেরোনোর ব্যবস্থা ছিল সেই ব্রিটিশ আমল থেকে। জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেলে গঙ্গার জল প্রবেশ করিয়ে জলাশয়ের সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখা হত। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের অভিযোগ, ‘‘এত দীর্ঘ সময় স্লুইস গেট বন্ধ থাকায় অনেক সময়েই বহু মাছ মরে ভেসে উঠছে।’’
এ ব্যাপারে কলকাতা পুরসভার জল সরবরাহ দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আমরা একাধিক বার লালদিঘি পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। ওই সংযোগ যাতে দ্রুত চালু করা যায়, সে বিষয়ে কেএমআরসিএল কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’’ কেএমআরসিএল-এর জেনারেল ম্যানেজার শৈলেশ কুমার বলেন, ‘‘বিষয়টি জানি না। তবে লালদিঘির সঙ্গে গঙ্গার সংযোগ-পথ দ্রুত চালু করার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’