শিয়ালদহ স্টেশন থেকে বৌবাজারের বিপত্তিস্থলের মধ্যে যে তিনটি সংযোগকারীপথ তৈরির কথা ছিল, তা বাতিল করতে হয়েছে। ফাইল ছবি।
এসপ্লানেড থেকে হাওড়া ময়দানের মধ্যে গঙ্গার নীচ দিয়ে ইতিমধ্যে ইইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর এক দফা মহড়া-দৌড় সম্পন্ন হয়েছে। আগামী কয়েক মাস সেই মহড়া চলবে। কিন্তু যে রেকটি মহড়া-দৌড়ে কাজে লাগানো হচ্ছে, সেটিকে কোনওভাবেই সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্ক ডিপোয় ফেরানো যাবে না। কোনও সমস্যা দেখা দিলে হাওড়া ময়দান স্টেশনে রেক দাঁড় করিয়েই প্রয়োজনীয় কাজ সারতে হবে। তার কারণ, বৌবাজারে জোড়া টানেল বোরিং মেশিন (টিবিএম) বার করার জন্য যে চৌবাচ্চা খোঁড়া হয়েছিল, সেটির গা-ঘেঁষে একটি বিশেষ পথ তৈরির কাজ শুরু হচ্ছে আর কিছু দিনের মধ্যেই। আপৎকালীন পরিস্থিতিতে সুড়ঙ্গ থেকে যাত্রীদের সরাসরি বার করে আনা যাবে ওই পথ দিয়ে। আর এই নির্মাণের ক্ষেত্রে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে পূর্ব এবং পশ্চিমমুখী সুড়ঙ্গেআলাদা করে ঠেকনা বা সাপোর্ট বসাতে হচ্ছে।
ফলে, ওই বিশেষ পথের কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত মেট্রোর রেকের ঠিকানা হাওড়া ময়দান অথবা এসপ্লানেড। সূত্রের খবর, ভারত আর্থ মুভার্স লিমিটেডের সাহায্য নিয়ে ইতিমধ্যেই হাওড়া ময়দান স্টেশনে রক্ষণাবেক্ষণের কাজের প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছে।
এর পাশাপাশি, বৌবাজারে আপৎকালীন পরিস্থিতিতে যাত্রীদের উদ্ধার করার জন্য যে নির্গমন-পথ (ইভ্যাকুয়েশন শ্যাফট) তৈরি করা হচ্ছে, তার ক্ষেত্রেও নিতে হয়েছে বিশেষ সতর্কতা। তবে মেট্রোর আধিকারিকেরা মনে করছেন, ওই পথ তৈরির কাজ মিটে গেলে শিয়ালদহ এবং এসপ্লানেডের মধ্যে জোড়া সুড়ঙ্গ খুলেদেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকটাই এগোনো যাবে।
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো সূত্রের খবর, আপৎকালীন পরিস্থিতিতে যাত্রীদের উদ্ধার করার জন্য জোড়া সুড়ঙ্গের মধ্যে নির্দিষ্ট দূরত্বে সংযোগকারী পথ (ক্রস প্যাসেজ) আছে। যে পথ দিয়ে এক সুড়ঙ্গ থেকে পাশের সুড়ঙ্গে আসা যায়। শিয়ালদহ থেকে এসপ্লানেডের মধ্যে এমন আটটি পথ তৈরি করার কথা ছিল। তার মধ্যে এসপ্লানেড থেকে বৌবাজারের মধ্যে চারটি সংযোগকারী পথ তৈরি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু, শিয়ালদহ স্টেশন থেকে বৌবাজারের বিপত্তিস্থলের মধ্যে যে তিনটি সংযোগকারীপথ তৈরির কথা ছিল, তা বাতিল করতে হয়েছে বৌবাজারের মাটির খাম খেয়ালি চরিত্রের জন্য।
সংশ্লিষ্ট নির্মাণ সংস্থা নতুন করে বিপত্তির আশঙ্কায় ওই সংযোগকারী পথের জায়গায় খননকাজ চালাতে চায়নি। পরিবর্তে মেট্রোর নিয়ামক সংস্থার অনুমোদন সাপেক্ষে বৌবাজারের দুর্গা পিতুরি লেন এবং সেকরাপাড়া লেনের সংযোগস্থলে ওই বিশেষনির্গমন-পথ তৈরি করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। পশ্চিমমুখী সুড়ঙ্গের গা-ঘেঁষে দু’টি সুড়ঙ্গের মাঝের পরিসরে ওই পথ তৈরি হবে। প্রায় ১৭ মিটার গভীর ওই পথে সিঁড়ি দিয়ে যাত্রীরা সরাসরি বাইরে বেরিয়ে আসতে পারবেন।
টানেল বোরিং মেশিন (টিবিএম) ‘উর্বী’ এবং ‘চণ্ডী’কে উদ্ধার করার জন্য বৌবাজারে চৌবাচ্চার মতো যে গর্ত খোঁড়া হয়েছে, শিয়ালদহ প্রান্তে তারই উত্তর-পূর্ব কোণ ঘেঁষে এই পথ তৈরি হবে বলে মেট্রো সূত্রেরখবর। ওই পথের সঙ্গে পশ্চিমমুখী সুড়ঙ্গকে জুড়ে দিতে সেটির একাংশের নির্মাণকাজ এখনও বাকি রাখাহয়েছে। ওই কাজ সম্পূর্ণ হলে পাশের পূর্বমুখী সুড়ঙ্গের একাংশেফুটো করে সেটিও যুক্তকরা হবে।
এ দিন ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সার্বিক অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে এসে বৌবাজারে বিপত্তিস্থলে ওই পরিকল্পনার খুঁটিনাটি শোনেন রেল বোর্ডের পক্ষ থেকে সারা দেশে পরিকাঠামো দেখাশোনার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক রূপ এন সুনকর। তাঁর সঙ্গে ছিলেন কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন লিমিটেডের (কেএমআরসিএল)ম্যানেজিং ডিরেক্টর এইচ এন জায়সওয়াল এবং অন্য আধিকারিকেরা।
পরে শিয়ালদহে কেএমআরসিএলের এমডি এবং কলকাতা মেট্রোর চিফ অপারেশন্স ম্যানেজার চন্দ্রিমা রায়ের উপস্থিতিতে রূপ বলেন, ‘‘মেট্রোর পক্ষ থেকে কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক। সমস্যা মেটানোর ক্ষেত্রে যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তাযথাযথ। আমরা আশা করছি, ডিসেম্বর মাসের মধ্যে পশ্চিমমুখী সুড়ঙ্গের সমস্যা মিটে যাবে।’’