গত মে মাসে সুড়ঙ্গের ভিতের মেঝে তৈরি করতে গিয়ে যে ৯ মিটার অংশ থেকে জল বেরিয়ে এসেছিল, সেখানেই গত তিন দিনে মেঝে তৈরির কাজ শেষ করা হয়েছে। ফাইল ছবি।
সাড়ে তিন বছর পরে দুর্গা পিতুরি লেন পার হতে না-পারার ফাঁড়া কাটাতে চলেছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর পশ্চিমমুখী সুড়ঙ্গ। গত মে মাসে সুড়ঙ্গের ভিতের মেঝে তৈরি করতে গিয়ে যে ৯ মিটার অংশ থেকে জল বেরিয়ে এসেছিল, সেখানেই গত তিন দিনে মেঝে তৈরির কাজ শেষ করা হয়েছে। এ বার উপর থেকে সুড়ঙ্গের ওই অংশের ঢালাইয়ের কাজ শেষ হলেই পশ্চিমমুখী সুড়ঙ্গের এসপ্লানেডের সঙ্গে জুড়ে যাবে শিয়ালদহ প্রান্ত। সেই কাজে নতুন করে কোনও বাধা আসবে না বলেই মনে করছেন মেট্রোর আধিকারিকেরা।
এসপ্লানেডের দিক থেকে সুড়ঙ্গ নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ার পরে মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে আসা জলের তোড়ে ২০১৯ সালের ৩১ অগস্ট দুর্গা পিতুরি লেনের কাছে থেমে গিয়েছিল টিবিএম ‘চণ্ডী’। সে সময়ে জল রুখতে চণ্ডী-সহ সুড়ঙ্গের মুখ বন্ধ করে দিতে হয়। তার পরে পূর্বমুখী সুড়ঙ্গের নির্মাণকাজ সেরে শিয়ালদহ থেকে ফেরার পথে অপর টিবিএম ‘ঊর্বি’, ‘চণ্ডী’র অসমাপ্ত কাজ সম্পূর্ণ করে। বছর দেড়েক আগে ওই কাজ শেষ হলে চণ্ডী এবং ঊর্বির অবশেষ তুলে ফেলা হয়। তবে মাঝের ৩৮ মিটার অংশে দু’প্রান্তেরসুড়ঙ্গ জোড়ার কাজ বাকি ছিল। তার মধ্যে ২৯ মিটার অংশে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির কাজও গত মে মাসের মধ্যে মিটে যায়। কিন্তু বাদ সাধে দুর্গা পিতুরি লেন লাগোয়া ৯ মিটার অংশ। সেখানে সুড়ঙ্গ নির্মাণের প্রস্তুতি হিসেবে পুরু কংক্রিটের মেঝে তৈরির সময়ে ফের আচমকা জল বেরোতে শুরু করে। আবারও বেশ কিছু বাড়িতে ফাটল দেখা দেয়। তড়িঘড়ি কংক্রিট ঢেলে জল ঢোকা আটকানো হয়। ফলে আটকে যায় এসপ্লানেড থেকে আসা, চণ্ডী-র তৈরি করা সুড়ঙ্গের মুখও।
স্তূপীকৃত কংক্রিট কেটে মেঝে ঢালাইয়ের কাজ করতে গিয়ে গত কয়েক মাসে বার বার থমকে গিয়েছে মেট্রো। ওই অংশে হাত দিলেই জল বেরোনোর আশঙ্কায় কাজ থামাতে হয়েছে। এমনকি যে অংশে কাজ হচ্ছে, সেখানে দুর্গা পিতুরি লেনের দিক থেকে জল ঢোকাঠেকাতে মাটির নীচে টন টন কংক্রিট পাঠিয়েও পরিস্থিতি পুরোপুরি আয়ত্তে আসেনি।
মেট্রো সূত্রের খবর, সম্প্রতি মাটির নীচে তরল কংক্রিট পাঠিয়ে জলের সামনে দেওয়াল তৈরির পাশাপাশি, গত কয়েক মাসের টানা শুষ্ক আবহাওয়ার সুবিধা মিলেছে। গত জানুয়ারিতে ড্রিল করে পরীক্ষার পরে দেখা যায়, মাটির নীচে জল বেরিয়ে আসার চাপ কমছে। এর পরেই মেঝের কাজ গুটিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন আধিকারিকেরা। সেই মতো তিনটি বাড়ির ৪৫ জন বাসিন্দাকে সরানো হয়। গত শুক্রবার কাজ মিটে যাওয়ার এক দিন পরে তাঁদের বাড়িতে ফেরানো হয়।
আপাতত জলের মুখ চাপা দেওয়া গিয়েছে বলেই জানাচ্ছেন আধিকারিকেরা। জোড়া টিবিএম বার করার চৌবাচ্চায় ৯ মিটার অংশে সুড়ঙ্গ তৈরি এ বার শুধুই সময়ের অপেক্ষা— এমনই দাবি করছেন তাঁরা। এক মেট্রো আধিকারিকের কথায়, ‘‘ধৈর্য ধরে চেষ্টার পাশাপাশি প্রকৃতি সদয় হওয়ায় এ যাত্রায় সাফল্য এসেছে।’’