মান্ধাতা: এমন খোলা নর্দমাই বাড়াচ্ছে সমস্যা। নিজস্ব চিত্র।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রাচীন জনপদে লেগেছে নগরোন্নয়নের ছোঁয়া। গজিয়ে উঠেছে বহুতল। তবে আজও সেখানে নিকাশির জন্য মূল ভরসা খাল এবং সাবেক কালের খোলা নর্দমা। এ ছাড়া বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে এবং যশোর রোড থেকে কিছুটা নীচে অবস্থান করছে এই পুর এলাকা। ফলে বৃষ্টি হলেই কোথাও গোড়ালি সমান, কোথাও বা হাঁটুজল জমে যায়। ফলে উত্তর দমদমের বাসিন্দাদের বর্তমানে সবচেয়ে বেশি মাথাব্যথার কারণ এই জল-যন্ত্রণা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বাম আমল থেকেই জমা জলের দুর্ভোগ চলছে এলাকায়। তবে গত বছরে সেই দুর্ভোগ বেড়েছে কয়েক গুণ। সমস্যার কথা স্বীকার করে প্রাক্তন পুরকর্তারা জানাচ্ছেন, এলাকার নিকাশি নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশাসন নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করেছে। যদিও বিরোধীদের দাবি, উত্তর দমদমে জমা জল সরাতে পুরসভা থেকে রাজ্য প্রশাসন, সব তরফই চূড়ান্ত ব্যর্থ।
কেন এই অবস্থা? স্থানীয় এক বাসিন্দা আশিস মণ্ডল বলছেন, ‘‘কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে, বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে এবং যশোর রোডের মাঝখানে এই এলাকার অবস্থান অনেকটা কড়াইয়ের মতো। তাই জল জমার প্রবণতা থাকেই। সেই সঙ্গে এখানে জলাশয় বুজিয়ে উঠছে বহুতল, কিন্তু পরিকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি। ফলে ভারী বা অতিবৃষ্টিতে জল জমে সহজেই।’’ স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, বর্তমানে জমা জল নামতে বেশি সময় লাগছে। ফলে বহু জায়গায় বেশ কিছু দিন
জলবন্দি থাকতে হচ্ছে। এই সমস্যা সবচেয়ে বেশি রয়েছে দেবীনগর, প্রতাপগড়, পটনা-ঠাকুরতলা, দুর্গানগর, রাজা রামমোহন পথ এলাকায়। ২, ৩, ৭, ৮, ১১, ১২, ১৮, ২১ নম্বর-সহ পুরসভার মোট ১৩ থেকে ১৪টি ওয়ার্ডে এই সমস্যা দিন দিন বাড়ছে।
এর সঙ্গে রয়েছে খাল সংস্কার না হওয়ার মতো বড় সমস্যাও। প্রাক্তন পুরকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, এলাকার নিকাশি আংশিক ভাবে বিরাটি খাল, সোনাই খাল, উদয়পুর খালের মাধ্যমে বাগজোলা খালে গিয়ে পড়ে। অন্য দিকে খলিসাকোটা, শক্তিগড়, রবীন্দ্রপল্লি এলাকার জল গিয়ে মেশে ফতেশা খালে, তার পরে তা নোয়াই বেসিনের মাধ্যমে গিয়ে পড়ে বিদ্যাধরী নদীতে। এলাকার তৃণমূল প্রার্থী সুবোধ চক্রবর্তী বলেন, “ওই খালগুলি যে সংস্কার হয়নি, তা নয়। তবে গত বছর অতিবৃষ্টিতে সব জায়গায় বেশি জল জমেছে।’’
আসন্ন পুরভোটের আগে এই সমস্যাকেই হাতিয়ার করছেন বিরোধীরা। তাঁদের অভিযোগ, গত সাত বছরে নিকাশি সমস্যার সমাধানে কার্যত ব্যর্থ তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ড। দমদমের তিনটি পুরসভা এলাকাকে ঘিরে থাকা বাগজোলা, নোয়াই ও ক্যান্টনমেন্ট কেষ্টপুর খালের সংস্কার না হওয়ায় জল-যন্ত্রণা তীব্র আকার নিয়েছে। বিজেপি নেতা অরিজিৎ বক্সী বলেন, ‘‘কোনও দীর্ঘমেয়াদি, সুসংহত পরিকল্পনা দেখা গেল না। উপরন্তু যে ভাবে রাস্তায় পিচ ঢেলে ঢেলে উচ্চতা বাড়ানো হচ্ছে, তাতে আশপাশের বাড়িতে জল ঢুকছে। এ ভাবে চললে আখেরে লাভ কার, তা সহজেই অনুমেয়।’’
যদিও অভিযোগ খারিজ করে তৃণমূলের দাবি, দীর্ঘ দিন ধরে এই পুর এলাকায় ক্ষমতায় থাকলেও নিকাশি নিয়ে কোনও পরিকল্পনা করেনি বামেরা। পুরসভার প্রাক্তন মুখ্য প্রশাসক তথা তৃণমূল প্রার্থী বিধান বিশ্বাস বলেন, “স্থানীয় বিধায়ক তথা পুরমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের উদ্যোগে ইতিমধ্যে নিকাশি নিয়ে যে সুসংহত পরিকল্পনা করা হয়েছে, তাতে এলাকায় খোলা নর্দমা থাকবে না। তার বদলে হবে একাধিক হাইড্রেন। ইতিমধ্যে ১৩ কোটি টাকার অনুমোদন মিলেছে।”
যদিও পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা সিপিএম প্রার্থী সুনীল চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘তৃণমূল জোর করে অতীত অস্বীকার করতে চাইলেও আদতে বাম আমলেই ওই এলাকায় এম বি রোডের পাশে খাল কাটা হয়। অলিগলির বহু নর্দমা পাকা করা হয়। তৃণমূলের আমলে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তার অনেকটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে।’’ বরং তাঁর পাল্টা দাবি, গত কয়েক বছরে তৃণমূল কিছুই করেনি।
এমনকি সেচ দফতর এলাকার নিকাশির জন্য টাকা অনুমোদন করলেও কাজ হয়নি। সেই সঙ্গে এলাকায় বহুতল গজিয়ে ওঠার প্রবণতা বেড়েছে। একাধিক বার চেয়ারম্যান পরিবর্তন করেও কাজ হয়নি। যদিও তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, চেয়ারম্যান পরিবর্তন হলেও কাজের ধারা অব্যাহত ছিল। তাই পুরভোটের আগে দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে নিকাশি-পরিকল্পনা কার্যকর করার দাবি জানাচ্ছেন বাসিন্দারা। আগামী পুরবোর্ড এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান করুক, এটুকুই আশা তাঁদের।