Covid-19

এত ভিড় কেন, প্রশ্ন রক্তদান শিবির নিয়েও

চিকিৎসক থেকে শুরু করে রক্তদান আন্দোলনে যুক্ত লোকজনের বক্তব্য, উপসর্গহীন কোনও কোভিড-আক্রান্ত যদি এই ভিড়ে থাকেন, তা হলে তাঁর থেকে অন্যদের সংক্রমণের আশঙ্কা থাকবেই।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০২০ ০২:১১
Share:

এক ইউনিট রক্ত থেকে নানা উপাদান আলাদা করে চারজন অসুস্থ মানুষের চাহিদা মেটানো যায়। ফাইল ছবি

একটি ঘরে পরপর শয্যায় শুয়ে রয়েছেন পুরুষ ও মহিলারা। বুকে ব্যাজ বা গলায় উত্তরীয় ঝোলানো লোকজন এসে তাঁদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে যাচ্ছেন। এগিয়ে দিচ্ছেন গোলাপ। কেউ আবার তুলছেন ছবিও। দূরত্ব-বিধির তোয়াক্কা না-করে এ ভাবেই শহর ও শহরতলির বিভিন্ন জায়গায় রক্তদান শিবির করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। প্রশ্ন উঠেছে, করোনা সংক্রমণ রুখতে দূরত্ব-বিধি মানার উপরে যেখানে এত জোর দেওয়া হচ্ছে, সেখানে রক্তদান শিবিরে এই নিয়ম লঙ্ঘন চলছে কী করে?

Advertisement

চিকিৎসক থেকে শুরু করে রক্তদান আন্দোলনে যুক্ত লোকজনের বক্তব্য, উপসর্গহীন কোনও কোভিড-আক্রান্ত যদি এই ভিড়ে থাকেন, তা হলে তাঁর থেকে অন্যদের সংক্রমণের আশঙ্কা থাকবেই। কারণ, রক্তদান শিবিরে যাঁরা আসছেন বা রক্তদান করছেন, তাঁদের থার্মাল স্ক্রিনিং হলেও অন্য কোনও পরীক্ষা সম্ভব নয়। ফলে উপসর্গহীন রোগীদের চিহ্নিত করা মুশকিল।

করোনা পরিস্থিতিতে রাজ্য জুড়ে তৈরি হওয়া রক্তের সঙ্কট মেটাতে আনলক-পর্বে বিভিন্ন জায়গাতেই রক্তদান শিবির করছে স্থানীয় ক্লাব, কোনও সংগঠন কিংবা রাজনৈতিক দলগুলি। অভিযোগ, অধিকাংশ জায়গাতেই ম্যারাপ বেঁধে মঞ্চ তৈরি হচ্ছে। সেই প্যান্ডেলে কিংবা সংলগ্ন ক্লাব বা স্কুলবাড়িতে চলছে রক্তদান। উপস্থিত থাকছেন এলাকার বিশিষ্ট জন থেকে রাজনৈতিক ‘দাদা’ ও ‘দিদি’রা। মঞ্চে উঠে প্রায় গা ঘেঁষে বসে ব্যাজ এবং উত্তরীয় পরার পরে রক্তদাতাদের উৎসাহ দিতে সদলবল তাঁরা চলে যাচ্ছেন তাঁদের সামনে। সেখানে দাতাদের সঙ্গে হাত মেলানো বা ফুল উপহার দেওয়া— চলছে সবই। আর সেই দৃশ্যের ছবি তুলতেও ভিড় করছেন অনেকে। বেশ কিছু দিন আগে কামারহাটিতে লকডাউনের মধ্যে তৃণমূল আয়োজিত একটি রক্তদান শিবিরে দূরত্ব-বিধি না মানার অভিযোগ উঠেছিল।

Advertisement

রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে দীর্ঘ দিন যুক্ত ডি আশিস জানাচ্ছেন, আগে যেখানে একটি শিবিরে অন্তত ৫০-৬০ জন রক্ত দিতেন, এখন সেখানে দাতার সংখ্যা ১৫-২০ জন। ফলে প্রতিদিন যে পরিমাণ রক্তের প্রয়োজন হয়, তাতে ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। কিন্তু দাতার সংখ্যা কমলেও শিবিরে আসা উৎসাহীদের ভিড়টা বিশেষ কমেনি। তিনি বলেন, ‘‘ভিড়ের মধ্যে কোনও উপসর্গহীন রোগী থাকলে তিনি আরও পাঁচ জনকে সংক্রমিত করতে পারেন। তাই যাঁরা নিয়মিত রক্তদান করেন, তাঁরা অনেকেই আতঙ্কে আসছেন না। তবে নিয়ম মেনে শিবির হলে সমস্যার কিছু নেই।’’

সুরক্ষা-বিধি মেনে তবেই রক্তদান শিবির করা উচিত বলে মত হেমাটোলজিস্ট প্রান্তর চক্রবর্তীরও। তিনি জানাচ্ছেন, দু’টি শয্যার মাঝে অন্তত এক মিটারের ব্যবধান থাকতে হবে। দাতাদের অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। রক্ত সংগ্রহে আসা স্বাস্থ্যকর্মীদের মাস্কের পাশাপাশি অন্যান্য সুরক্ষা-সরঞ্জামও সঙ্গে রাখতে হবে ও ব্যবহার করতে হবে। তা ছাড়া, বার বার করে শয্যা এবং অন্যান্য সরঞ্জাম জীবাণুমুক্ত করতে হবে। দাতা ও স্বাস্থ্যকর্মীরা ছাড়া আর কেউ ভিতরে থাকবেন না। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক দেশেই ব্লাড ব্যাঙ্কে নির্দিষ্ট সময়ে গিয়ে লোকে রক্তদান করে আসেন। এখন এটাই হওয়া উচিত। তা হলে শিবিরগুলিতে ভিড় হবে না। করোনা সংক্রমণ ছড়ানোরও আশঙ্কা থাকবে না।’’ আর দাতাদের শুভেচ্ছা জানাতে হলে অনলাইনে বা ডিভিয়োর মাধ্যমেই তা করা উচিত বলে তাঁর মত।

তবে অনেকেরই প্রশ্ন, উপসর্গহীন করোনা রোগী যদি না জেনে রক্ত দেন, তা হলে সেই রক্ত থেকে কি সংক্রমণ ছড়াতে পারে? মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার বা প্রান্তরবাবু দু’জনেই বলছেন, এ সম্পর্কে এখনও প্রামাণ্য কোনও তথ্য মেলেনি। রক্ত সংগ্রহের পরে এইচআইভি, হেপাটাইটিস-বি ও সি, সিফিলিস এবং ম্যালেরিয়ার পরীক্ষা করা হয়। যে হেতু রক্ত থেকে কোভিডের সংক্রমণ ছড়ানোর কোনও প্রমাণ মেলেনি, সেই পরীক্ষাও তাই করানো হচ্ছে না। অরুণাংশুবাবু বলেন, ‘‘সঙ্কট মেটাতে রক্তদান শিবির হোক। কিন্তু মানসিকতা বদলে সচেতন নাগরিক হিসেবে সেই শিবিরে অহেতুক ভিড় না বাড়ানোই উচিত।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement