ফাইল চিত্র
ওঁদের কেউ জন্ম থেকেই ঠিকমতো চোখে দেখতে পান না। কেউ আবার দুর্ঘটনায় হারিয়েছেন দৃষ্টিশক্তি। দৈনিক ১০ টাকা খরচে ওঁরা পড়াশোনা থেকে শুরু করে হাতের কাজের প্রশিক্ষণ এবং চিকিৎসার সুবিধা পেতেন বনহুগলির ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর দি এমপাওয়ারমেন্ট অব পার্সনস উইথ ভিসুয়াল ডিজ়েবিলিটি’ (এনআইইপিভিডি) বা রাষ্ট্রীয় দৃষ্টিহীন বিকলাঙ্গ সংস্থানে (দিব্যজ্ঞান)। এ রাজ্যে দীর্ঘ ২২ বছর ধরে চলা ওই সংস্থাটিকে আচমকাই বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শুক্রবার রাষ্ট্রীয় দৃষ্টিহীন বিকলাঙ্গ সংস্থানের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক মহম্মদ ইশপ নবিকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান দৃষ্টিহীন শিশুদের অভিভাবক এবং প্রশিক্ষণরত যুবক ও কর্মীরা। ইশপ নবি জানান, গত ১৫ ডিসেম্বর এনআইইপিভিডি-র দেহরাদূনের প্রধান কার্যালয় থেকে কলকাতা ও সেকেন্দরাবাদের শাখায় চিঠি পাঠিয়ে জানানো হয়েছে, ওই শাখাগুলি বন্ধ করে দেওয়া হবে। কী ভাবে ধীরে ধীরে গোটা কেন্দ্রটি বন্ধ করা যায়, তার প্রস্তাব পাঠাতে বলা হয়েছে। তবে মুম্বই ও দেহরাদূনে দৃষ্টিহীনদের জন্য আরও যে দু’টি শাখা কেন্দ্র রয়েছে, সেগুলি চালু থাকছে।
কর্মীরা জানান, বনহুগলির কেন্দ্রটিই পূর্ব ভারতের একমাত্র কেন্দ্র। জন্ম থেকে যে সব শিশুর দৃষ্টিশক্তির সমস্যা রয়েছে, তারা সেখানে চিকিৎসার পাশাপাশি ব্রেল পদ্ধতিতে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করত। তার পরে তাদের নরেন্দ্রপুরে পাঠানো হত। আর দুর্ঘটনায় যাঁরা দৃষ্টি হারিয়েছেন, তাঁরা ওই কেন্দ্রে দৈনন্দিন জীবনযাত্রার পদ্ধতি শেখা এবং হাতের কাজের প্রশিক্ষণ পেতেন। ৪৫ দিনের ওই প্রশিক্ষণের জন্য যে ভাতা পাওয়া যায়, তা-ও কয়েক বছর ধরে মিলছে না বলে অভিযোগ। চিকিৎসক প্রিয়ম্বদ লস্কর বলেন, ‘‘এতগুলি দৃষ্টিহীন মানুষের ভবিষ্যৎ কী হবে? চিকিৎসক, নার্স ও কর্মী মিলিয়ে প্রায় ২০ জন কয়েক বছর ধরে চুক্তিভিত্তিক চাকরি করছি। আমাদেরই বা কী হবে, কেউ কিছু জানেন না।’’ এ দিন ইছাপুর থেকে ছ’বছরের মেয়েকে নিয়ে এসেছিলেন শিবানী গুপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘তিন বছর ধরে আসছি। আচমকা বন্ধ হয়ে গেলে মেয়েটা কোথায় পড়াশোনা করবে?’’
আগামী ২২ ডিসেম্বর বনহুগলিতে ওই কেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে বলেও জানান দীর্ঘ দিন ধরে প্রতিবন্ধী অধিকার কমিটির সভাপতি থাকা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। অন্য দিকে, স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী তাপস রায় বলেন, ‘‘অত্যন্ত অমানবিক সিদ্ধান্ত। দৃষ্টিহীনদের চিকিৎসায় এই নিষ্ঠুর আচরণ মানা যায় না। সাংসদ সৌগত রায়কে নিয়ে ওখানে যাব। শীঘ্রই প্রতিবাদ কর্মসূচি করা হবে।’’