ভুয়ো সিবিআই অফিসার, অভিযুক্ত শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিল্লি থেকে জগাছা থানায় আনা হল। মঙ্গলবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
ঠিক এক দিন দেরি করলেই একাধিক ভুয়ো পরিচয় দেওয়া প্রতারক, হাওড়ার শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে আর ধরা যেত না। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত যুবক রক্সৌল হয়ে নেপালে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু ঠিক তার আগের দিন দিল্লির সর্দার প্যালেস মার্গের একটি অভিজাত হোটেলে পুলিশ পৌঁছে যাওয়ায় সে আর পালাতে পারেনি। ধৃতকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পরে এমনটাই দাবি করেছেন তদন্তকারীরা। রবিবার গভীর রাতে গ্রেফতার করার পরে শুভদীপকে মঙ্গলবার সকালে রাজধানী এক্সপ্রেসে হাওড়া স্টেশনে নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় জগাছা থানায়। থানা থেকে হাওড়া সিটি পুলিশের গোয়েন্দা দফতর। এর পরে দুপুরের দিকে হাওড়া জেলা আদালতে তোলা হলে বিচারক শুভদীপকে আট দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন।
পুলিশ জানায়, ওই যুবক হাওড়া থেকে গত বৃহস্পতিবার দিল্লিতে পৌঁছয়। সেখানে একটি হোটেলে চার দিন ছিল। অনলাইনে হোটেলের ৩২ হাজার টাকার বিলও মিটিয়েছিল শুভদীপ। ঠিক করেছিল, সোমবার সকালেই নেপালে পালিয়ে যাবে। কিন্তু তার আগেই ধরা পড়ে যাওয়ায় সেই পরিকল্পনা বানচাল হয়ে যায়। পুলিশ জানায়, ধৃতের কাছ থেকে একটা দামি মোবাইল ও ব্যাগ উদ্ধার হয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানায়, ওই যুবক আগে একটি কনসালট্যান্সি ফার্মে চাকরি করত। ২০১৯ সালে সিবিআই অফিসার সেজে প্রতারণার কারবার শুরু করে সে। জেরার মুখে শুভদীপ দাবি করেছে, লালন কুমার নামে বিহারের বাসিন্দা এক যুবকের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল তার। লালনের সাহায্যেই চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা নিয়ে প্রতারণার কাজ শুরু করে সে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, লালনকে ধরতে মঙ্গলবার রাতেই পুলিশের একটি দল দিল্লি গিয়েছে। সেই সঙ্গে, সিবিআই অফিসার সেজে যে নীল বাতির গাড়িতে চেপে শুভদীপ ঘুরত, সেটিও চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই গাড়িটি বাজেয়াপ্ত করা হবে। ধরা হবে চালককেও।
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, বিয়ের পরেই শুভদীপের স্ত্রী প্রথম জানতে পারেন যে, তাঁর স্বামী ভুয়ো পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে টাকা আয় করছে। সেই কারণে শুভদীপকে এক মনোরোগ চিকিৎসকের কাছেও নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ওই চিকিৎসকের কাছে নাকি নিজের অপরাধ কবুলও করেছিল শুভদীপ। কিন্তু তার পরেও সে শোধরায়নি। পুলিশ এখন ওই চিকিৎসকের সঙ্গেও
যোগাযোগ করছে।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে শুভদীপ জানিয়েছে, স্ত্রীর সঙ্গে ফেসবুকে আলাপ হয়েছিল তার। ওই যুবকের দাবি, তার স্ত্রী নাকি বিয়ের আগেই তাকে জানিয়েছিলেন, পুলিশে চাকরি না করলে তাকে বিয়ে করবেন না। শুভদীপের দাবি, বান্ধবীকে খুশি করতেই সিবিআই আধিকারিক সাজার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সে। শুভদীপের এই বক্তব্যের আদৌ কোনও সত্যতা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এর পাশাপাশি, ওই যুবকের সঙ্গে আর কারা জড়িত, তারও খোঁজ শুরু হয়েছে।
এ দিকে, বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এ দিন এই ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘ভুয়ো আইপিএস, ভ্যাকসিন, ভুয়ো মুখ্যমন্ত্রী— সব বাংলায় চলে। বাংলা ধোঁকাবাজি আর চালাকিতে ছেয়ে গিয়েছে। মানুষ কেউ-কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না। সরকার মিথ্যা বলতে বলতে পুরো সিস্টেমটাই ভেঙে পড়েছে।’’