ফাইল চিত্র।
কন্টেনমেন্ট জ়োন হিসেবে ঘোষণা করেনি প্রশাসন। কর্তৃপক্ষও কর্মীদের হাজিরা নিয়ে নিয়ম শিথিল করেননি। ফলে আতঙ্ক বাড়ছে ইছাপুর রাইফেল এবং মেটাল অ্যান্ড স্টিল কারখানায়। ইতিমধ্যে এই দু’টি কারখানার ৩২ জন কর্মী করোনা-আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর। তার পরেও ১০০ শতাংশ কর্মী নিয়ে কাজ চলছে এখানে।
একটি শিফ্টে কাজ চলছে। তাই একসঙ্গে শুধুমাত্র রাইফেল কারখানাতেই কাজ করছেন প্রায় ৩৪০০ জন কর্মী। মেটাল অ্যান্ড স্টিল কারখানাতেও কর্মী হাজারেরও বেশি। কর্মী ইউনিয়নগুলি জেলা প্রশাসন এবং ব্যারাকপুর কমিশনারেটে চিঠি দিলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। ফলে ঝুঁকি নিয়েও কাজে যেতে বাধ্য হচ্ছেন কর্মীরা।
অভিযোগ, এলাকাটি কন্টেনমেন্ট জ়োন হিসেবে ঘোষণা করার কথা নিয়েই দায় ঠেলাঠেলি চলছে। জেলাশাসক জানান কারখানা কর্তৃপক্ষের কথা। আর অন্য দিকে পুলিশ বলছে খোঁজ নিয়ে জানানো হবে। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় দু’টি সংস্থার কর্মীরা কার দ্বারস্থ হবেন, তা ভেবে পাচ্ছেন না।
জুন মাসের গোড়া থেকে কাজ শুরু হয় এই দু’টি কারখানায়। প্রথমে ২০ শতাংশ কর্মী দিয়েই কাজ চলছিল। কিন্তু সেই মাসের মাঝামাঝি কর্তৃপক্ষ ১০০ শতাংশ হাজিরার নির্দেশ জারি করেন। কারখানার নিরাপত্তার ভার যাঁদের হাতে, সেই ডিফেন্স সিকিউরিটি বিভাগের কর্মীরা প্রথম আক্রান্ত হলেও পরে সব বিভাগেই সংক্রমণ ছড়ায় বলে অভিযোগ। জেলাশাসক জানান, কারখানা কর্তৃপক্ষ সংক্রমণ নিয়ে কোনও তথ্য দেননি।
কর্মচারী ইউনিয়নগুলির অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের একগুঁয়ে মনোভাবের জন্যই ভুগতে হচ্ছে তাঁদের। তাঁদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী ক্যান্টিনে কোনও খাবার রান্না করা হচ্ছে না। কিন্তু ক্যান্টিনের ২০-২২ জন কর্মীকে রোজ আসতে হচ্ছে। এর জেরে ওই কর্মীরা তো বটেই, ঝুঁকি বাড়ছে অন্যদেরও। কর্তৃপক্ষ তাঁদের হাজিরাও বন্ধ করেননি।
এই মুহূর্তে কারখানায় কী কাজ হচ্ছে? কারখানা সূত্রের খবর, বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি হয় এই কারখানায়। সেগুলির কাঁচামাল আসে ভিন্ রাজ্য থেকে। লকডাউনের জন্য দীর্ঘ দিন ধরে সে সব কাঁচামাল আসছে না। অস্ত্র ‘ফিনিশ’ করে ‘ডেলিভারি’ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে কারখানায় রুটিন কিছু কাজকর্ম চলছে। ইউনিয়নগুলির মতে, কর্মী সংখ্যা কমিয়ে সেই কাজ করা যায়। কর্তৃপক্ষকে বার বার বলা হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। তাঁদের যুক্তি, যে হেতু রাজ্য সরকার এই এলাকাকে কন্টেনমেন্ট ঘোষণা করেনি, সেই জন্য কর্তৃপক্ষ কোনও নিয়ম মানছেন না। ইছাপুর রাইফেল কারখানার জেনারেল ম্যানেজার দিলীপকুমার মহাপাত্রকে বার বার ফোন করা হলেও তিনি তা ধরেননি। উত্তর দেননি মেসেজেরও।
উত্তর ব্যারাকপুর পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান মলয় ঘোষ জানান, তাঁর এলাকায় ওই কারখানার অন্তত ১৭ জন কর্মী আক্রান্ত। কিন্তু কেন্দ্রীয় সংস্থাটি তাঁদের কিছুই জানায়নি। এ নিয়ে ইউনিয়নগুলি জেলাশাসক এবং ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনারকে চিঠি লিখেছেন। জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তী বলেন, “আমি কোনও চিঠি পাইনি। আর তা ছাড়া কর্তৃপক্ষ তো আমাকে কিছু জানাননি।” পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা বলেন, “ওখানে কী অবস্থা আছে আমরা খোঁজ নেব। তার পরে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।”