TET 2022

সুষ্ঠু পরীক্ষার দাবি পর্ষদের, বিভ্রান্তি এড়ানো গেল না কিছু কেন্দ্রে

শহরের পরীক্ষার্থীরা সব চেয়ে বেশি বিভ্রান্ত হয়েছেন সঙ্গে আনা ব্যাগ কোথায় রাখবেন, তা নিয়ে। অভিযোগ, কয়েকটি পরীক্ষা কেন্দ্রে ২০ টাকা জমা দিয়ে ব্যাগ রাখতে হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২২ ০৮:৫৮
Share:

বিপত্তি: ধাতব কিছু নিয়ে কেন্দ্রে ঢোকার অনুমতি না থাকায় নোয়া খুলে দিচ্ছেন এক পরীক্ষার্থী। রবিবার, সিটি কলেজে। নিজস্ব চিত্র

পাঁচ বছর পরে এ বার বিজ্ঞপ্তি বেরিয়েছিল প্রাথমিক টেটের। সেই মতো রবিবার রাজ্য জুড়ে এই পরীক্ষা দিলেন আবেদনকারীরা। পরীক্ষার্থীদের পাশাপাশি এ দিন কার্যত পরীক্ষা ছিল পুলিশ এবং প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদেরও। দিনের শেষে পরীক্ষা সুষ্ঠু ভাবে হয়েছে বলে পর্ষদ দাবি করলেও শহরের বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্র ঘুরে বেশ কিছু অব্যবস্থা এবং বিভ্রান্তি নজরে এল।

Advertisement

কলকাতার ১৫টি কেন্দ্রের পাশাপাশি হাওড়া জেলার ৩৮টি কেন্দ্রে এ দিন টেট নেওয়া হয়। হাওড়া জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, ১৯,৫৬২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পরীক্ষায় বসেছিলেন ১৭,৮৭২ জন। ওই জেলারও বেশ কিছু কেন্দ্রে অব্যবস্থা নজরে এসেছে বলে জানা যাচ্ছে। পরীক্ষা শেষে শাসকদলের মিছিলের কারণে যানবাহন ঘুরিয়ে দেওয়ায় বাড়ি ফিরতে নাকাল হয়েছেন পরীক্ষার্থীরা।

শহরের পরীক্ষার্থীরা সব চেয়ে বেশি বিভ্রান্ত হয়েছেন সঙ্গে আনা ব্যাগ কোথায় রাখবেন, তা নিয়ে। অভিযোগ, কয়েকটি পরীক্ষা কেন্দ্রে ২০ টাকা জমা দিয়ে ব্যাগ রাখতে হয়েছে। ব্যাগ রাখার দীর্ঘ লাইনও দেখা গিয়েছে। যদিও প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ আগেই জানিয়ে দিয়েছিল, পরীক্ষা কেন্দ্রে ব্যাগ নিয়ে ঢোকা যাবে না। তবুও অনেকে ব্যাগ এনেছিলেন। কেন? এক পরীক্ষার্থী বলেন, ‘‘অনেক সকালে বেরিয়েছি। সঙ্গে টিফিন আনতে হয়েছে।’’

Advertisement

হিন্দু স্কুলের প্রধান ফটকের সামনে ব্যাগ জমা পড়তে দেখে ক্ষোভ ছড়ায়। শেষ পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অনুমতি নিয়ে সেই ব্যাগ ভিতরে রাখেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। সিটি কলেজের পাশে ব্যাগ জমা রাখার লাইনে দাঁড়িয়ে এক পরীক্ষার্থীকে বলতে শোনা গেল, ‘‘১১টার পরে আর ঢুকতে দেবে না। সময়ে ঢুকতে পারব কি!’’ এই বিভ্রান্তি প্রসঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পাল বলেন, ‘‘স্কুল কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছিল, ক্লোক রুম করে সেখানে ব্যাগ রাখা যাবে।’’

পরীক্ষার হলে ঢোকার সময় নিয়েও সমস্যা দেখা দেয় একাধিক কেন্দ্রে। টেট শুরু হওয়ার সময় ছিল বেলা ১২টা। পর্ষদ জানিয়েছিল, পরীক্ষার্থীদের বেলা ১১টার মধ্যে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে যেতে হবে। এ দিকে টাকি বয়েজ়, হেয়ার স্কুল-সহ কিছু স্কুলে বেলা সওয়া এগারোটাতেও কয়েক জন পরীক্ষার্থীকে পৌঁছতে দেখা গেল। প্রথমে তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরীক্ষার্থীরা দাবি করেন, ১১টার পরে যে ঢুকতে দেওয়া হবে না, সে কথা অ্যাডমিট কার্ডে কোথাও বলা নেই। অবশেষে হেয়ার স্কুল কর্তৃপক্ষ পর্ষদের সঙ্গে কথা বলে পরীক্ষার্থীদের ঢোকার সময় ১১টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত বাড়ান।

ঘড়ির কাঁটা তখন ১২টা পেরিয়ে দু’মিনিট ছুঁয়েছে। দুই পরীক্ষার্থী হন্তদন্ত হয়ে পৌঁছলেন হিন্দু স্কুলে। বন্ধ কোল্যাপসিবল গেট ঝাঁকিয়ে তাঁরা বার বার অনুরোধ করতে থাকেন ঢুকতে দেওয়ার জন্য। পর্ষদের অনুমতি নিয়ে তাঁদেরও ঢুকতে দেওয়া হয়। এ দিন সল্টলেকের কয়েকটি পরীক্ষা কেন্দ্র ঘোরেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পাল ও উপ-সচিব পার্থ কর্মকার।

পরীক্ষায় নজরদারিতে ২৫ জন পরীক্ষার্থী পিছু এক জন থাকার কথা ছিল। কিছু স্কুলে ওই অনুপাত বজায় রাখা যায়নি বলে অভিযোগ। আবার রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের তীর্থপতি ইনস্টিটিউশনে পরীক্ষার্থীদের বায়োমেট্রিক হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে। পরীক্ষার্থীরা দাবি করেন, বায়োমেট্রিক না করে পরীক্ষায় বসবেন না। বিক্ষোভও শুরু হয় স্কুলের সামনে। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের উপ সচিব পার্থ কর্মকারের দাবি, ‘‘যান্ত্রিক গোলযোগ বা নেটের গতি কম থাকায় ওই কেন্দ্রে প্রথমে বায়োমেট্রিক হয়নি। পরে পর্ষদ দল পাঠায়। পরীক্ষার পরে সব পরীক্ষার্থীর বায়োমেট্রিক হয়েছে।’’

বায়োমেট্রিক নিয়ে সমস্যার খবর এসেছে শিবপুরের দীনবন্ধু ইনস্টিটিউশন ব্রাঞ্চ স্কুল থেকেও। ওই কেন্দ্রের দরজা সময়ে না খোলায় পরীক্ষার্থীদের ঢুকতে দেরি হয়। হাওড়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান কৃষ্ণ ঘোষ জানান, বায়োমেট্রিকে কিছু সমস্যা থাকায় পরীক্ষার্থীদের ঢুকতে একটু দেরি হয়েছে। তবে তাঁরা ঠিক সময় থেকেই পরীক্ষা দেন বলে তাঁর দাবি।

এ দিন সকাল থেকে রাস্তায় ছিল পর্যাপ্ত পুলিশ। ছিলেন ডেপুটি কমিশনার পদমর্যাদার একাধিক অফিসার। শহরের ১৫টি পরীক্ষা কেন্দ্রের প্রতিটিতে এক জন ইনস্পেক্টর পদমর্যাদার আধিকারিক এবং তাঁর অধীনে ১০-১৫ জনের দল মোতায়েন ছিল। কেন্দ্রগুলিতে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে পরীক্ষা করে পরীক্ষার্থীদের ঢোকানো হয়।

কয়েকটি কেন্দ্রে দেরিতে গেট খোলার অভিযোগ করেন পরীক্ষার্থীদের একটি অংশ। যদিও তা মানতে চায়নি পুলিশ। লালবাজারের এক পুলিশকর্তা দাবি করেন, ‘‘কোথাও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পরীক্ষা সুষ্ঠু ভাবে শেষ করতে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement