School Teachers

Summer vacation: শেখা বিষয় ভুলে যাবে না তো পড়ুয়ারা, দীর্ঘ ছুটিতে উঠছে প্রশ্ন

সরকারি স্কুলগুলির শিক্ষকদের একাংশ সব চেয়ে বেশি ভয় পাচ্ছেন প্রাথমিকের পড়ুয়াদের নিয়ে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২২ ০৫:১৫
Share:

ফাইল চিত্র।

ইংরেজিতে নির্ভুল ভাবে নিজের নামের বানানটাই লিখতে ভুলে গিয়েছিল প্রথম শ্রেণির বেশ কিছু পড়ুয়া। চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়াদের কেউ কেউ আবার দ্বিতীয় শ্রেণির অঙ্ক কষতেও রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছিল। করোনাকালে দু’বছর পঠনপাঠন বন্ধ থাকার পরে স্কুল খুললে ছাত্রছাত্রীদের পড়াতে গিয়ে এমনই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলেন অনেক শিক্ষক। ৩ ফেব্রুয়ারি স্কুল খোলার পরে গত আড়াই মাসে পড়ুয়ারা সবে একটু একটু করে ছন্দে ফিরতে শুরু করেছিল। কিন্তু দেড় মাসের গরমের ছুটিতে স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিক্ষকদের বড় অংশেরই প্রশ্ন, তারা ফের আগের অবস্থায় ফিরে যাবে না তো?

Advertisement

সরকারি স্কুলগুলির শিক্ষকদের একাংশ সব চেয়ে বেশি ভয় পাচ্ছেন প্রাথমিকের পড়ুয়াদের নিয়ে। কারণ, করোনার সময়ে স্কুল বন্ধ থাকা অবস্থায় সব চেয়ে কম অনলাইন ক্লাস হয়েছে প্রাথমিকেই। অনেক খুদে পড়ুয়ার অনলাইন ক্লাস করার মতো দক্ষতাই তৈরি হয়নি। অনেকের আবার বাড়িতে অনলাইন ক্লাসের পরিকাঠামো ছিল না। এমনও হয়েছে, কোনও বাড়িতে প্রাথমিকের পাশাপাশি নবম বা দশম শ্রেণির পড়ুয়া রয়েছে। অথচ, স্মার্টফোন রয়েছে একটিই। সে ক্ষেত্রে নবম বা দশমের পড়ুয়ারাই অনলাইনে ক্লাস করতে অগ্রাধিকার পেয়েছে। ‘বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হন্ডা জানান, প্রাথমিকের বহু পড়ুয়া অনলাইন ক্লাস করতে না পারায় দু’বছর কার্যত বসে ছিল। অফলাইনে পড়াশোনা শুরু হওয়ায় তারা খুবই উপকৃত হচ্ছিল। আনন্দবাবু বলেন, ‘‘আমরা বার বার বলেছি, তীব্র গরমে ছোটদের স্কুলে আসার দরকার নেই। কিন্তু টানা ছুটির বদলে পর্যায়ক্রমে ছুটি দিলে কিংবা গরমের তীব্রতা কিছুটা কমার পরে আবার স্কুল খুললে সকলেই উপকৃত হত। সকালে স্কুল করা হল না কেন?’’

সরস্বতী বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা জয়তী মজুমদার মিত্র জানান, এই দীর্ঘ ছুটির ফলে কিছু পড়ুয়া সদ্য শেখা বিষয়গুলি ভুলে যেতে পারে বলে তাঁরা আশঙ্কা করছেন। তাদের ক্ষেত্রে পুরনো পড়া ঝালিয়ে নিয়ে তবেই নতুন পড়ার দিকে এগোতে হবে। জয়তী বলেন, ‘‘গরমের ছুটিতে অনলাইন ক্লাস হবে কি না, তা নিয়ে কিন্তু শিক্ষা দফতর কিছু বলেনি। দেড় মাসের টানা ছুটিতে কোনও শিক্ষক অনলাইনে ক্লাস নেবেন কি না, সেটা তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। তবে শিক্ষা দফতর থেকে অনলাইন ক্লাস করানোর নির্দেশ এলে হয়তো আরও বেশি সংখ্যায় অনলাইন ক্লাস হতে পারত।’’ শিক্ষকদের আরও প্রশ্ন, প্রথম সামগ্রিক মূল্যায়ন পিছিয়ে গিয়েছে। তার তারিখ জানানো হয়নি। দ্বিতীয় সামগ্রিক মূল্যায়নই বা কবে হবে, তা নিয়েও তাঁরা অন্ধকারে। এই পরিস্থিতিতে আবহাওয়ার খানিকটা উন্নতি হলে অন্তত কিছু দিনের জন্যও স্কুল খোলার আর্জি জানাচ্ছেন শিক্ষকেরা।

Advertisement

শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনেকে জানাচ্ছেন, সরকারি নির্দেশ না থাকলেও তাঁরা এই গ্রীষ্মাবকাশে অনলাইন ক্লাস নেবেন। যেমন, সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা পাপিয়া নাগ জানান, ছুটিতে অনলাইনে কয়েকটি ক্লাস নেওয়ার জন্য তিনি তাঁর স্কুলের শিক্ষিকাদের অনুরোধ করবেন।

শুধু পড়াশোনাই নয়, গরমের ছুটি এগিয়ে আসায় সংশয় দেখা দিয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ঘিরেও। গত দু’বছর করোনার কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় মে মাসে রবীন্দ্রজয়ন্তী হয়নি। হয়নি সামার ক্যাম্প-সহ অবকাশকালীন কিছু অনুষ্ঠানও। কিছু স্কুল জানাচ্ছে, তারা এ বার রবীন্দ্রজয়ন্তী ভাল করে পালন করার প্রস্তুতি শুরু করেছিল। কিন্তু আবার ফিরে যেতে হচ্ছে অনলাইন অনুষ্ঠানের দিকে। শিয়ালদহ টাকি বয়েজ়ের প্রধান শিক্ষিকা স্বাগতা বসাক জানান, তাঁদের স্কুলে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতা হওয়ার কথা ছিল। বেশ কিছু স্কুল যোগ দেবে বলে প্রস্তুতিও নিচ্ছিল। কিন্তু এখন সব পিছিয়ে দিতে হচ্ছে। তবে হিন্দু স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তাঁরা স্কুলেই রবীন্দ্রজয়ন্তীর ছোট অনুষ্ঠান করবেন। যারা ইচ্ছুক, তারা স্কুলে এসে অংশগ্রহণ করতে পারে। পাশাপাশি, প্রতি বছর যে সামার ক্যাম্প হয়, সেটাও এ বার করবেন তাঁরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement