প্রতীকী চিত্র।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কলকাতায় আছড়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় শহরের স্কুলগুলিকে আশ্রয় শিবির হিসেবে তৈরি থাকতে বলেছে শিক্ষা দফতর। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, শহরের সমস্ত স্কুল কি আশ্রয় শিবির তৈরির উপযুক্ত?
এ শহরের এমনই বেশ কিছু স্কুলের শিক্ষকদের প্রশ্ন, তাঁদের স্কুল মানুষকে আশ্রয় দেবে কী ভাবে? বরং ঝড়ের তাণ্ডব থেকে স্কুলভবনকে কী ভাবে রক্ষা করা যায়, তা নিয়েই তাঁরা চিন্তিত। কারণ, আমপানের স্মৃতি এখনও তাঁদের কাছে টাটকা।
বেহালার প্রাথমিক স্কুল আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র বিদ্যাপীঠের এক শিক্ষিকা জানান, তাঁদের স্কুলভবনের নির্মাণকাজ এখনও শেষ হয়নি। একটি মাত্র ঘরে ক্লাস হয়। সেই ঘরটিও আবার নির্মাণ সামগ্রীতে ঠাসা। ওইটুকু পরিসরে কী ভাবে আশ্রয় দেওয়া যাবে ঘূর্ণিঝড়ে বিপদগ্রস্ত মানুষজনকে? স্কুলের শৌচালয়ের অবস্থাও খুব খারাপ। মেরামতির জন্য বার বার দরবার করেও লাভ হয়নি। ওই স্কুলে লোকজনকে আশ্রয় দেওয়া হলে তাঁরা শৌচাগার পাবেন কোথায়? স্কুল কর্তৃপক্ষ বরং চিন্তিত তাঁদের নির্মীয়মাণ ভবনটিকে নিয়ে। ইয়াসে সেটির কোনও ক্ষতি হবে না তো? শৌচালয়টি ভেঙে পড়বে না তো? ওই স্কুলের এক শিক্ষিকা বলেন, “সিঁড়ির কোনও শেড বা রেলিং এখনও তৈরি হয়নি। ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে বৃষ্টি হলে নির্মীয়মাণ ভবনটির সিঁড়ি দিয়ে সেই জল পড়ে পুরো স্কুলভবন না ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখন এই আশঙ্কাতেই রয়েছি।”
ঠাকুরপুকুর এলাকার একটি প্রাথমিক স্কুল সারদা বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষিকা উপাসনা রায় জানালেন, তাঁদের স্কুল চলে ভাড়াবাড়িতে। স্কুলভবনের মাথায় টিনের ছাউনি। পরিকাঠামোগত নানা রকম সমস্যা রয়েছে। স্কুলে পানীয় জলের কোনও ব্যবস্থা নেই। পানীয় জল আনতে হয় বাইরে থেকে। তাই তাঁদের স্কুলকে ঘূর্ণিঝড়ের জন্য আশ্রয় শিবির বানানো খুবই কঠিন। ঝড়ে স্কুলভবনের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে চিন্তিত তাঁরাও। টিনের শেডটা অক্ষত থাকবে তো, প্রশ্ন ওই শিক্ষিকার।
আদর্শনগর শিক্ষা সদন নামে একটি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সুদীপ্তা চক্রবর্তী জানালেন, তাঁদের স্কুলের জানলা ভাঙা। জলের কোনও ব্যবস্থা নেই। এই অবস্থায় স্কুলকে ঘূর্ণিঝড়ে বিপদগ্রস্ত মানুষের আশ্রয় শিবিরে কী ভাবে পরিণত করা হবে? স্কুলভবনটিকে রক্ষা করাই এখন তাঁদের প্রধান চিন্তা।
ভোলানাথ হালদার স্মৃতি গভর্নমেন্ট স্পনসর্ড ফ্রি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা বর্ণালী সেনগুপ্ত জানালেন, গত বার আমপানে তাঁদের স্কুলের তিনতলার টিনের শেড উড়ে গিয়েছিল। এমনিতে তাঁদের স্কুলভবন পোক্ত। এখন তিনতলা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। তাই নির্মীয়মাণ ওই তলের বেশ কিছু জায়গা এখনও ফাঁকা রয়েছে। বর্ণালীদেবীর আশঙ্কা, ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে অতি ভারী বৃষ্টি হলে ওই ফাঁকা জায়গা দিয়ে জল পড়ে স্কুলভবনের ক্ষতি হবে না তো? আশ্রয় শিবিরের চিন্তার চেয়ে স্কুলবাড়ি বাঁচানোটাই এখন লক্ষ্য সকলের।