Mamata Banerjee

মুখ্যমন্ত্রীর নম্বরের নিদানে পড়ুয়াদেরই ক্ষতির আশঙ্কায় শিক্ষকেরা

শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনেকেরই প্রশ্ন, এ ভাবে নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার কথা কি মুখ্যমন্ত্রী আদৌ বলতে পারেন? পরীক্ষায় একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে নম্বর দেওয়া হয়। শিক্ষা বিজ্ঞান বলেও একটি বিষয় আছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২২ ০৬:৩৭
Share:

পরীক্ষার্থীদের ট্যাব প্রদান উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

প্রকাশ্য মঞ্চে দাঁড়িয়ে স্কুলপড়ুয়াদের ঢালাও বেশি নম্বর দেওয়ার যে নিদান সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিয়েছেন, তা শুনে শিক্ষকদের একটি বড় অংশ শুধুমাত্র অবাকই হননি, তাঁরা রীতিমতো স্তম্ভিত। নম্বর বাড়ানোর এমন অভূতপূর্ব নির্দেশ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কী ভাবে দিতে পারেন, সেটাই ভেবে পাচ্ছেন না তাঁরা। শিক্ষকদের মতে, পরীক্ষায় যথাযথ মূল্যায়ন না হলে পড়ুয়ারা বুঝতে পারবে না, তারা কতটা শিখল। শিক্ষকেরাও বুঝতে পারবেন না, তাঁরা কতটা শেখাতে পারলেন। যা পড়ুয়াদের ভবিষ্যতের পক্ষে বিপজ্জনক প্রমাণিত হতে পারে।

Advertisement

এ দিন নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ট্যাব প্রদান উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা ছোটবেলায় কিছু পাইনি। একটা পাউরুটিও কেউ দেয়নি। আমি মনে করি, আমরা কিছু পাইনি বলে এখনকার ছেলেমেয়েরাও কিছু পাবে না? ছাত্রছাত্রীরা সব কিছু পেলেও আমার আকাঙ্ক্ষা শেষ হবে না। আগে কত কম নম্বর দেওয়া হত। শিক্ষকদের হাত দিয়ে নম্বর গলতই না। আমি ক্ষমতায় এসে বললাম, সিবিএসই আছে, আইসিএসই আছে। ওদের সঙ্গে কম্পিটিশনে যেতে হবে। কী করে কম্পিটিশন করবে আমাদের ছেলেরা? বাড়িয়ে দাও নম্বর।’’

শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনেকেরই প্রশ্ন, এ ভাবে নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার কথা কি মুখ্যমন্ত্রী আদৌ বলতে পারেন? পরীক্ষায় একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে নম্বর দেওয়া হয়। শিক্ষা বিজ্ঞান বলেও একটি বিষয় আছে। সেটাও মেনে চলতে হয়। ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু বললেন, ‘‘এটা তো এমন নয় যে, আমি আমার ঘর থেকে কাউকে টাকাপয়সা দিচ্ছি। এটা লক্ষ্মীর ভান্ডারে টাকা দেওয়ার মতো ব্যাপারও নয়। আমার মনে হল, টাকা দিলাম, নয়তো দিলাম না। কিন্তু বেশি নম্বর দিতে বলার অর্থ, আমাদের মূল্যায়নের যে প্রচলিত পদ্ধতি আছে, সেই পদ্ধতিকেই অস্বীকার করে নতুন একটা ভাবনাকে চাপিয়ে দেওয়া। এমন মন্তব্য কোনও মতেই করা যায় না।’’

Advertisement

শিক্ষকদের অনেকেরই বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন, তা অবাস্তবও বটে। কারণ, তিনি জানিয়েছিলেন, সিবিএসই এবং আইসিএসই বোর্ডের পড়ুয়াদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পাল্লা দেওয়ার জন্যই বেশি নম্বর দিতে হবে। শিক্ষকদের মতে, সিবিএসই এবং আইসিএসই বোর্ডের সিলেবাস আলাদা। তাদের মূল্যায়নের পদ্ধতিও অন্য রকম। রাজ্যের সরকারি স্কুলে তা করতে গেলে সবার আগে সিলেবাস পরিবর্তন করে পরীক্ষা পদ্ধতি আমূল পাল্টাতে হবে। সে সব কিছু না করে বেশি নম্বর দেওয়ার এই ধরনের আলটপকা নির্দেশে আখেরে পড়ুয়াদের ক্ষতির আশঙ্কাই বেশি।

‘পশ্চিমবঙ্গ প্রধান শিক্ষক সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণাংশু মিশ্রের মতে, ‘‘পরীক্ষার খাতায় নম্বর দেওয়ার মতো জায়গা থাকলে তখনই শিক্ষকেরা নম্বর দিতে পারেন। তা না থাকলেও বেশি নম্বর দেওয়া যায় নাকি? পড়ুয়ারা যদি অকারণ বেশি নম্বর পায়, তা হলে তাদের ভবিষ্যতের পক্ষে মোটেই ভাল হবে না।’’

লকডাউনের সময়ে পরিস্থিতি ভিন্ন ছিল। তখন হয়তো পড়ুয়াদের সচেতন ভাবেই একটু বেশি নম্বর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন তো পরিস্থিতি স্বাভাবিক। তা হলে কেন যথাযথ পদ্ধতি মেনে মূল্যায়ন হবে না? এই প্রশ্ন তুলেছেন প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক তথা শিক্ষক নেতা নবকুমার কর্মকার। তাঁর মতে, ‘‘এখন প্রশ্নের যা ধরন হয়েছে, তাতে এমনিতেই নম্বর বেশি ওঠে। উচ্চ মাধ্যমিকে আজকাল অনেক বেশি অবজেক্টিভ প্রশ্ন থাকে। ২০ নম্বর প্রজেক্ট পেপারের। তার পরেও যদি আরও বেশি করে নম্বর দিতে বলা হয়, তা হলে তো প্রকৃত মূল্যায়ন হবেই না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement