জলপান: দেড় মাস গরমের ছুটির পরে খুলেছে স্কুল। প্রবল গরমের সঙ্গে যুঝতে গ্লুকোজ মেশানো জল খাওয়ানো হচ্ছে পড়ুয়াদের। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
দহনজ্বালা কমেনি এতটুকুও। তবে, প্রায় দেড় মাস গরমের ছুটির শেষে বৃহস্পতিবার খুলে গেল রাজ্যের সরকারি, সরকার-পোষিত এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলি। যদিও গরমের কারণে প্রথম দিন বেশ কিছু স্কুলে পড়ুয়াদের উপস্থিতির হার ছিল কম। তা সত্ত্বেও শিক্ষকেরা চাইছেন না, ফের গরমের জন্য বন্ধ হোক স্কুল। বরং তাঁদের প্রস্তাব, যত দিন না বর্ষা আসছে, তত দিন সকালে চলুক পঠনপাঠন। শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, গত দেড় মাস স্কুল বন্ধ থাকায় অনেক পড়ুয়ার মধ্যেই লেখাপড়ায় একটা ফাঁক তৈরি হয়েছে। তাই এখন স্কুল নিরবচ্ছিন্ন খুলে রেখে সেই ঘাটতি মেটাতে হবে।
দক্ষিণ কলকাতার সন্তোষপুরের ঋষি অরবিন্দ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সর্বাণী সেন বলেন, ‘‘আমাদের পড়ুয়াদের জন্য এ দিন গ্লুকোজের জলের বন্দোবস্ত রাখা হয়েছিল। এই স্কুলে সকালে পঠনপাঠন হতে কোনও সমস্যা নেই। এ দিন উপস্থিতির হার ছিল প্রায় ৭৫ শতাংশ।”
কেষ্টপুর এলাকার দেশপ্রিয় বালিকা বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষিকা নাজরিন নাহার বলেন, “গরমের জন্য প্রথম দিন উপস্থিতির হার ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। কবে বর্ষা আসবে, তার অপেক্ষায় আছি।” দ্য খিদিরপুর অ্যাকাডেমির ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক শেখ মহম্মদ সালেহিন জানান, তাঁদের স্কুলে প্রাতঃ বিভাগ আছে। তাই দিবা বিভাগের জন্য সকালে ক্লাস করানো সম্ভব নয়। তাঁর কথায়, ‘‘স্কুল বন্ধ রাখাও এখন ঠিক হবে না। তবে, স্কুলে পর্যাপ্ত সংখ্যক পাখা আছে।’’ বেলগাছিয়ার মনোহর অ্যাকাডেমির শিক্ষিকা সুমনা সেনগুপ্ত বললেন, “প্রথম দিন পড়ুয়ারা গরমে খুব কষ্ট পেয়েছে। ওরা বার বার রুমাল ভিজিয়ে ঘাড়ে, মাথায় দিচ্ছিল। ঠান্ডা লেগে যাবে বলা হলেও শোনেনি। এই গরমে স্কুলের তেতলায় ক্লাস নেওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু স্কুল আবার বন্ধ হলে তো পড়ুয়ারা পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়বে। তাই তাকিয়ে আছি, কবে বর্ষা আসবে।”
‘শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চ’-এর রাজ্য সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী বলেন, ‘‘আমরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায়কে স্মারকলিপি দিয়ে জানিয়েছি, এই গরমে যে সব স্কুলে সকালে ক্লাস করানো সম্ভব, সেখানে সেটাই করা হোক। ফের স্কুল বন্ধ হলে পড়ুয়ারা আরও পিছিয়ে পড়বে।’’ ‘অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস’-এর রাজ্য সাধারণ সম্পাদক চন্দন মাইতির মতে, “দীর্ঘ এই গরমের ছুটিতে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হল দ্বাদশের পড়ুয়ারা, যারা আগামী বার উচ্চ মাধ্যমিক দেবে। আগামী বার উচ্চ মাধ্যমিক এক মাস এগিয়ে এসে শুরু হবে ফেব্রুয়ারিতে। অথচ, একাদশ থেকে দ্বাদশে ওঠা পড়ুয়াদের এখনও ক্লাসই শুরু হল না। পুজোর আগে চার মাস আর পুজোর পরে কয়েক মাসের মধ্যে কি দ্বাদশের এত বড় পাঠ্যক্রম শেষ করা সম্ভব?” খাজনাবহাল হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মনিরুল ইসলাম বলেন, “গরমে কষ্ট হচ্ছে পড়ুয়াদের। কিন্তু তার মধ্যেই সকালে হলেও দ্বাদশের পড়ুয়াদের জন্য অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা হোক।”