তোড়জোড়: সাঁতারের পুল খুলে দেওয়ার আগে চলছে পরিষ্কারের কাজ। কলেজ স্কোয়ারে। ছবি: রণজিৎ নন্দী
সুইমিং পুলের নিস্তরঙ্গ জলে আবার কি একটু আলোড়ন দেখা যাবে? ফের কি শুরু হবে ফ্রিস্টাইল, ব্যাক স্ট্রোক, বাটারফ্লাই বা ব্রেস্ট স্ট্রোকের প্রতিযোগিতা? শিক্ষানবিশেরা আবার কি শিখতে শুরু করবেন সাঁতারের অ-আ-ক-খ?
সম্প্রতি ৫০ শতাংশ সাঁতারুকে নিয়ে সুইমিং পুল খোলার অনুমতি দিয়েছে রাজ্য সরকার। সেই খবর শোনার পরেই উচ্ছ্বসিত সাঁতারের ক্লাবগুলি। তারা অবশ্য জানিয়েছে, সাঁতার শেখার মরসুমের অনেকটাই কেটে গিয়েছে। তবু দেরিতে হলেও অনুমতি মেলায় তারা খুশি। এ বার রাজ্যের নির্দেশ অনুযায়ী, আজ, ১৬ অগস্ট থেকে দিনের নির্দিষ্ট সময়ে ৫০ শতাংশ সাঁতারু নিয়ে সুইমিং পুল খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা।
সাঁতার শেখার মরসুম চলে সাধারণত এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত। কলেজ স্কোয়ার ও হেদুয়ার ক্লাবগুলি জানিয়েছে, প্রতি বছর দুই থেকে তিন হাজার খুদে সেখানে সাঁতার শিখতে আসে। এ বছর সাঁতারের মরসুম শেষ হতে আর মাস দেড়েক বাকি। তাই নতুন শিক্ষার্থীদের খুব বেশি পাওয়া যাবে না। তবে ক্লাবের সদস্যেরা সাঁতার কাটতে পারবেন। কলেজ স্কোয়ারের একটি শতাব্দী-প্রাচীন সাঁতার ক্লাবের কর্তা সন্তোষ দাস বললেন, “ক্লাবের সদস্য-সংখ্যা তো কম নয়। তাঁরাও এত দিন সাঁতার কাটতে পারছিলেন না। এ বার পারবেন। তবে নতুন খুদেরা এ বার খুব কমই আসবে। কারণ, একে তো মরসুম শেষের পথে। এর পাশাপাশি, করোনা-ভীতি এখনও পুরোপুরি যায়নি। তাই অভিভাবকেরা অনেকেই বাচ্চাদের পাঠাতে চাইবেন না।” হেদুয়ার একটি ক্লাবের কর্মকর্তা সনৎ ঘোষ জানালেন, এত দিন জাতীয় স্তরের সাঁতারুরা সকালে চার ঘণ্টা মাত্র সময় পেতেন অনুশীলনের জন্য। এ বার বিকেলেও অনুশীলন করতে পারবেন তাঁরা। সনৎবাবুর কথায়, “খুদেদের প্রশিক্ষণ যেখানে হয়, সেই জায়গাটি যথেষ্ট বড়। দূরত্ব-বিধি বজায় রেখেই প্রশিক্ষণ দেওয়া যাবে। সাঁতারের মরসুম তো শেষ হয়ে এসেছে। ৩০ সেপ্টেম্বর সাধারণত ক্লাব বন্ধ হয়। তার মানে, হাতে আর দেড় মাস সময়।”
রবীন্দ্র সরোবরের একটি সাঁতার প্রশিক্ষণ ক্লাবের কর্মকর্তা অমিত বসু জানালেন, তাঁদের ক্লাবে সদস্য-সংখ্যা প্রচুর। তাই সবাইকে একটি নির্দিষ্ট সময়ে সাঁতারের অনুমতি দেওয়া যাবে না। সময় ভাগ করে দেওয়া হবে।
পার্ক স্ট্রিট এলাকার একটি ক্লাবের ক্রীড়া বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার সৌমেন্দু গঙ্গোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, এ বার ক্লাবে এসে সাঁতার কাটতে পারবেন সেখানকার সদস্যেরা। তবে পুরোটাই বিধি মেনে। যেমন, পাশাপাশি লেনে সাঁতার না কেটে একটি করে লেন বাদ দিতে হবে। সাঁতারের পুলে নামার আগে শরীরের তাপমাত্রা মাপাটাও বাধ্যতামূলক। এবং জলে নামার আগে অবশ্যই শাওয়ারে গা ভিজিয়ে নিতে হবে। সৌমেন্দুবাবু বললেন, “ক্লাবের অনেক বয়স্ক সদস্যও শরীর ফিট রাখতে সাঁতার কাটেন। পুলে যাতে ভিড় না হয়, তার জন্য আলাদা রুটিন বানাতে হবে।” ভিআইপি রোডের একটি ক্লাবের এক কর্তা জানালেন, সকাল সাড়ে ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত করোনা-বিধি মেনে পুল খোলা রাখা হবে। বিধি মেনেই চলবে সাঁতার।
সাঁতারু বুলা চৌধুরীর মতে, “পুল বন্ধ থাকায় সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলেন জাতীয় স্তরের সাঁতারুরা। এ বার তাঁরা অনেকটা বেশি সময় ধরে সাঁতার কাটতে পারবেন। সুইমিং ক্লাবগুলিতে জলে নামার আগে কিছু বিধিনিষেধ মানার কথা লেখা থাকে। কিন্তু অনেক সময়ে সে সব ঠিক মতো মানা হয় না। এ বার সেই সমস্ত বিধি যাতে সকলেই মানেন, তা নিশ্চিত করতে কড়া নজর রাখতে হবে।”