ফাইল চিত্র।
কলকাতা পুরভোটের দিন রবিবার জাল ভোট, ভোট লুঠ এবং সন্ত্রাস করে ভোটারদের আটকানোর মতো অভিযোগ পেলে বেলা ১০টার পর রাজ্য নির্বাচন কমিশন অবরোধ করা এবং রাজ্য অচল করার হুমকি দিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। যাকে ভোটের দিন শহরে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর চক্রান্ত বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। কলকাতা পুরভোটের দিন এই পুরসভার ভোটার নন, এমন ব্যক্তিদের পুর এলাকায় থাকার নিয়ম নেই। সুতরাং, শুভেন্দু-সহ বিজেপির যে সব নেতা কলকাতার ভোটার নন, তাঁরা রবিবার শহরে কী ভাবে কোনও কর্মসূচি করবেন, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
শুভেন্দু বৃহস্পতিবার দলের রাজ্য দফতরে সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, “কলকাতার জনতা কাকে জেতাবেন তাঁরাই ঠিক করুন। তাঁদের রায় আমরা মেনে নেব। কিন্তু ভোটের দিন বিজেপির এক জন প্রার্থীকেও যদি হেনস্থা করা হয়, এক জন পোলিং এজেন্টকেও যদি মেরে বুথ থেকে বের করে দেওয়া হয়, ভোটারদের আটকে দেওয়া হয়, হাইরাইজ়ের সামনে বোমা ফেলে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়, তা হলে বিজেপি বসে বসে দেখবে না। সকলের হাতে অ্যান্ড্রয়েড ফোন আছে। ছবি আসবে। বেলা ১০টার পরে রাজ্য অচল হবে।” বিরোধী দলনেতার সংযোজন, “রাজ্য সভাপতি সব কর্মীকে ওই দিন পার্টি অফিসে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। আমিও বিজেপি বিধায়কদের সকলকে হাওড়া বা বিধাননগরের কোনও জায়গায় চলে আসতে বলেছি। ওই রকম কোনও ঘটনা ঘটলেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দফতরের দিকে মিছিল করব। যেতে পারলে ওই অফিস অবরোধ হবে। না পারলে যেখানে পুলিশ আটকাবে, সেখানে অবরোধ করব।”
শুভেন্দুর এই হুমকির প্রতিক্রিয়ায় তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “যাঁদের বোধবুদ্ধি কম থাকে, তাঁরাই সংবাদমাধ্যমে ভেসে থাকার জন্য এই ধরনের হুমকি দেন। যাঁরা এ সব বলছেন, তাঁরা কি কলকাতার ভোটার? ওঁদের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও কি কলকাতার ভোটার? আগে তাঁরা কলকাতার ভোটার হোন, তার পরে এই সব ভাববেন।” তাঁর আরও কটাক্ষ, “ভোটের দিন শহরের আইনশৃঙ্খলা নষ্ট করার ইচ্ছে থাকলেও সেটা করার মতো লোকবল বিজেপির নেই।” আর লোকসভায় তৃণমূলের সচেতক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ভোটের দিন কলকাতায় শুভেন্দুই গণ্ডগোল করতে চাইছেন। তাই সে দিন কলকাতার বাইরের লোকেদের শহরে ঢোকাবার পরিকল্পনা করেছেন তিনি। কলকাতার ভোটাররা ভোট দেবেন। বাইরে থেকে লোক আনার পিছনে অন্য উদ্দেশ্য আছে কি না, সে বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।”
এ দিকে, রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে এ দিন তৃণমূলের শাখা সংগঠন বলেও কটাক্ষ করেছেন শুভেন্দু। তাঁর অভিযোগ, রাজ্য নির্বাচন কমিশন এমন ভাবে ভোটের নির্ঘণ্ট করেছে, যাতে বিরোধীরা পর্যাপ্ত প্রচার করতে না পারে। পুরভোটে স্বচ্ছতার স্বার্থে কলকাতা হাইকোর্ট সব বুথে এবং স্ট্রং রুমে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর নির্দেশ দিয়েছে। বিজেপি নেতা শিশির বাজোরিয়া বুধবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সৌরভ দাসকে চিঠিতে লিখেছিলেন, ওই সিসিটিভি ক্যামেরাগুলির লিঙ্ক সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে দেওয়া হোক, যাতে সকলে ভোট চলাকালীন বুথের অবস্থা দেখতে পায়। এ দিন বিকেল পর্যন্ত কমিশন সেই চিঠির জবাব দেয়নি বলে শুভেন্দু জানান।
শুভেন্দু রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে তৃণমূলের শাখা সংগঠন বলায় পার্থবাবুর প্রতিক্রিয়া, “পরাজয় নিশ্চিত বুঝে ভোটের ৭২ ঘণ্টা আগে এ সব বলছেন ওঁরা। এর জবাব মানুষ ইভিএমে দেবেন।”
কলকাতার হাউজ় ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন বাড়ির কর সংক্রান্ত কিছু সমস্যা না মেটায় এ বার পুরভোটে নোটায় ভোট দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। শুভেন্দু এ দিন প্রতিশ্রুতি দেন, বিজেপি কলকাতা পুরভোটে জিতলে ওই সংগঠনের সমস্যা এবং বস্তিবাসীদের পুরনো কিছু দাবি মেটানো হবে। কলকাতার মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত মানুষের উপরে বাড়ির বর্গফুট অনুযায়ী কলকাতা পুরসভার কর চাপানো হবে না এবং বস্তিবাসীদের করের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হবে।