ঘন কালো মেঘের চাদরে ঢেকে গিয়েছিল কলকাতার আকাশ।
বেলা তখন ঠিক সাড়ে ১২টা। কিন্তু, দেখে বোঝার উপায় নেই। মনে হচ্ছে, ঘনঘোর আষাঢ়ের সন্ধ্যা!
বেহালা থেকে গাড়ি চালিয়ে চাঁদনি চকের অফিসে আসছিলেন আশিস সেনগুপ্ত। মুহূর্তের মধ্যে আকাশ কালো হয়ে যাওয়ায় রীতিমতো ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি। আশিসের কথায়, ‘‘আচমকাই চার পাশ অন্ধকার হয়ে এল। কুয়াশা-মেঘ সবই ছিল সকাল থেকে। কিন্তু যে ভাবে ঝুপ করে একেবারে অন্ধকার হয়ে গেল, একটা শব্দই প্রথমে মাথায় এসেছিল, প্রলয়!’’ ওই অন্ধকারে যে গাড়ির হেডলাইটটা জ্বালাতে হবে, প্রথমে সেটাও মাথায় আসেনি— এমনই জানালেন পেশায় ব্যবসায়ী আশিস।
আবহাওয়ার এমন খামখেয়ালিপনায় আশিসের মতো অনেকেরই পিলে চমকে যাওয়ার জোগাড় হয়েছিল বৃহস্পতিবার দুপুরে। মেঘ-কুয়াশা-অন্ধকারের সঙ্গে এ দিন ছিল বৃষ্টি এবং দমকা হাওয়াও। রেড রোড দিয়ে বাইক চালিয়ে সেই সময় নিউ মার্কেটের এক রেস্তরাঁয় আসছিলেন সুদীপ ভট্টাচার্য। অ্যাপ নির্ভর খাবার সরবরাহের কাজ করেন তিনি। পরিস্থিতি দেখে ভয় পেয়ে যাওয়া ওই যুবক বাইক নিয়ে ঢুকে পড়েন ময়দানের এক ক্যান্টিনে। সুদীপ বললেন, ‘‘রাস্তার ধারের গাছপালাগুলো যে ভাবে দুলছিল, ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম। এমন হঠাৎ করে অন্ধকার হয়ে যেতে আগে কখনও দেখেছি বলে মনে পড়ছে না।’’
আরও পড়ুন: ‘ইয়ে লো আজাদি’, জামিয়ার বাইরে সিএএ বিরোধী মিছিলে গুলি যুবকের
একই অভিজ্ঞতা কাঁকুড়গাছির শুচিস্মিতা ঘোষের। সরস্বতী পুজোর পরের দিন ওই কলেজ শিক্ষক এ দিন বাড়িতেই ছিলেন। বলছিলেন, ‘‘আমাদের ফ্ল্যাটে বাইরের আলো-হাওয়া বেশ ভাল মতোই ঢোকে। সকাল থেকে মেঘলা থাকলেও খুব একটা অসুবিধা হচ্ছিল না। কিন্তু, আচমকাই যেন লোডশেডিং হয়ে গেল। সেই সঙ্গে ঝেঁপে বৃষ্টি। সবটাই এত দ্রুত হয়েছে, বেশ ভয় ভয়ই লাগছিল। ভরা মাঘে যেন কোনও ভাবে আষাঢ় চলে এসেছিল আজ। তবে, বর্ষাকালেও এমন ভাবে আচমকা আঁধার নেমে আসতে দেখিনি। ভরদুপুরে ঘরের আলো জ্বালাতে হয়।’’
শহরের রাস্তায় বার হওয়া গাড়িগুলির হেডলাইটও জ্বলে উঠেছিল। পথচলতিদের অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। দমকা হাওয়ায় ফুটপাতের দোকানগুলির প্লাস্টিকের ছাউনিতে খেলতে থাকে ঢেউ।
কিন্তু আচমকা কেন এমনটা হল? আলিপুর আবাহাওয়া দফতর জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয়বাষ্প ভরা কালো মেঘ কলকাতার আকাশে ঢুকতেই ও ভাবে অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল। প্রায় মিনিট দশেক কলকাতার আকাশ ছিল ওই কালো মেঘের দখলে। তার জেরেই এমন ঘটনা।
আরও পড়ুন: আলোচনা ব্যর্থ, ধর্মঘটের জেরে তিন দিন ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকবে, ভোগান্তির আশঙ্কা