কলেজ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ক্ষোভ প্রকাশ করে অবস্থান-বিক্ষোভে বসেছেন আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজের ২০ জন ছাত্রী। ফাইল ছবি।
ইন্টার্নশিপ শেষ। তাই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হস্টেল ফাঁকা করতে হবে। কলেজ কর্তৃপক্ষের এ হেন নির্দেশে ক্ষোভ প্রকাশ করে অবস্থান-বিক্ষোভে বসেছেন আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজের ২০ জন ছাত্রী। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন কিছু ছাত্রও। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে এই বিক্ষোভ। শুক্রবার রাত পর্যন্ত কোনও সমাধানসূত্র বেরোয়নি। বিক্ষোভের জেরে অসুস্থ হয়ে এক ছাত্রী এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। তাঁকে অক্সিজেন দিতে হচ্ছে।
প্রায় দু’দিন হয়ে গেলেও সমাধানসূত্র না বেরোনোয় এ দিন সন্ধ্যায় পদত্যাগ করেছেন হস্টেল কমিটির চেয়ারম্যান তথা কলেজের ডিন অমল চক্রবর্তী, কমিটির সদস্য চিকিৎসক সুদর্শনা মুখোপাধ্যায়, মহিলা হস্টেলের সুপার মেহেন্দি তিরকে। রাতে অমল বলেন, ‘‘বার বার অধ্যক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। উনি বলেছেন, স্বাস্থ্য ভবনে আলোচনা করে যা জানানোর জানাবেন। যদিও রাত পর্যন্ত কিছু জানতে পারিনি।’’ ছাত্রীদের অবস্থান-বিক্ষোভের বিষয়ে অধ্যক্ষ তপন গিরিকে বারংবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। মেসেজেরও উত্তর দেননি।
জানা যাচ্ছে, গত ৩ জানুয়ারি ইন্টার্নশিপ শেষ হয়েছে ৭০ জন পড়ুয়ার। এ দিন থেকে তাঁদের হাউসস্টাফশিপ শুরু হওয়ার কথা ছিল। ওই ৭০ জনের মধ্যে ছাত্রী রয়েছেন ২০ জন। তাঁদের অভিযোগ, বুধবার রাতে আচমকাই হস্টেল সুপার এসে জানান, অধ্যক্ষের নির্দেশ মতো ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঘর খালি করতে হবে। ত্রিপুরার বাসিন্দা, পৌষালী দে নামে এক ছাত্রী বলেন, ‘‘আমরা অনেকেই ভিন্ রাজ্যে থাকি। সর্বভারতীয় পরীক্ষা দিয়ে এখানে পড়তে এসেছি। তৃতীয় বর্ষ থেকে আমরাও রোগী পরিষেবায় যুক্ত। সেখানে এখন বলা হচ্ছে, আমরা কলেজের কেউ নই।’’
ছাত্রীদের অভিযোগ, বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে গেলেও সুরাহা তো হয়ইনি, উল্টে অবিলম্বে হস্টেল ফাঁকা করতে বলা হয়। এর পরেই অবস্থান-বিক্ষোভে বসেন ওই ছাত্রীরা। সে দিন শিউলি মজুমদার নামে এক ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন। ছাত্রীদের দাবি, কলেজ চত্বরে হাউসস্টাফদের জন্য নির্দিষ্ট ঘরে এখন জুনিয়র ডাক্তারেরা রয়েছেন। এক ছাত্রীর কথায়, ‘‘দু’মাস সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু কর্তৃপক্ষ শুনছেন না। বিকল্প ব্যবস্থাও করা হচ্ছে না।’’ অন্য দিকে, কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, বিডিএসে আসন সংখ্যা ১০০ থেকে বেড়ে ১২৫ হয়েছে। নতুন ছাত্রীদের থাকার জায়গা দিতেই হস্টেল খালি করতে বলা হয়েছে।
যদিও ছাত্রীদের পাল্টা দাবি, কলেজ চত্বরেই একটি অতিথি নিবাস রয়েছে। সেটি তালাবন্ধ থাকে। এ ছাড়াও কেয়াতলা এলাকায় একটি হস্টেল সংস্কার করে ফেলে রাখা হয়েছে। সেখানে কেন বিকল্প ব্যবস্থা করা হচ্ছে না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। ছাত্রীদের কথায়, ‘‘যত ক্ষণ না হাউসস্টাফদের ঘর খালি হচ্ছে, তত দিন ওই দু’টির যে কোনও একটি জায়গায় বিকল্প ব্যবস্থা তো করা যেত। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বলছেন, স্বাস্থ্য ভবনের অনুমতি নেই।’’ ছাত্রীদের আরও অভিযোগ, কলেজে স্থায়ী অধ্যক্ষ ও সুপার নেই। দীর্ঘদিন ধরে দু’জনেই ভারপ্রাপ্ত হিসাবে রয়েছেন। অভিযোগ, এ দিন সুপার কলেজেই আসেননি। আর কলেজের পুরনো ভবন, যেখানে অবস্থান-বিক্ষোভ চলছে, সেখানে আসেননি অধ্যক্ষও। তিনি নতুন ভবনে কিছু ক্ষণের জন্য এলেও, স্বাস্থ্য ভবনে কাজ রয়েছে বলে বেরিয়ে যান।