আক্রান্ত: সুরেন্দ্রনাথ কলেজের সামনে হামলার পরে রক্তাক্ত দুই যুবক। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
স্নাতক স্তরে ভর্তিকে কেন্দ্র করে আর্থিক চক্রের অভিযোগ ওঠায় খবরের শিরোনামে এসেছিল সুরেন্দ্রনাথ কলেজ। সোমবার, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের আগের দিন প্রেসিডেন্সি ও যাদবপুর-সহ বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল ওই কলেজেরই টিএমসিপি কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন জনা দশেক পড়ুয়া।
পুলিশ জানিয়েছে, রাজ্যের একাধিক ছাত্র-যুব সংগঠনের ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগে গড়ে উঠেছে ‘শিক্ষার অধিকার রক্ষা আন্দোলন মঞ্চ’। এই মঞ্চে প্রেসিডেন্সি, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়-সহ রাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা শামিল হয়েছেন। ওই মঞ্চের উদ্যোগে আগামী ৩১ অগস্ট কলকাতায় একটি কনভেনশনের আয়োজন করা হয়েছে। সেই কনভেনশন উপলক্ষে এ দিন সকাল ১১টা থেকে সুরেন্দ্রনাথ কলেজের সামনে লিফলেট বিলি করছিলেন প্রায় ৩০ জন পড়ুয়া।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র দেবর্ষি চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘সুরেন্দ্রনাথ কলেজের সামনে মিনিট পাঁচেক লিফলেট বিলি করার পরে হঠাৎই কলেজ থেকে প্রায় চল্লিশ জন টিএমসিপি সমর্থক আমাদের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েন। হামলাকারীদের মধ্যে কলেজের এক শিক্ষাকর্মীও ছিলেন। কিল, ঘুসি মেরে আমাদের মাথা ও নাক ফাটিয়ে দেওয়া হয়। জামা ছিঁড়ে দেওয়া হয়।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘লিফলেটে রাজ্যের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে তৃণমূলের মাফিয়াতন্ত্র ও তোলাবাজির কথা লেখায় আক্রমণকারীরা চিৎকার করে বলতে থাকে, এ সব লিফলেটে কেন লেখা হয়েছে?’’
এ দিনের হামলায় মাথা ফেটে যায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ঋতম দাসের। তাঁকে রাস্তায় ফেলে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। রক্তাক্ত অবস্থায় আক্রান্ত দশ জনকেই কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ঋতমের অভিযোগ, ‘‘কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে দুর্নীতির বিষয়ে সরব হওয়ায় সুরেন্দ্রনাথ কলেজের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্যেরা আমাদের আক্রমণ করল। ওরা গণতন্ত্রের পথ রোধ করতে চাইছে। কিন্তু এ ভাবে জোর করে কিছু করা যায় না।’’ আক্রান্ত আর এক ছাত্র সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাকে মারতে মারতে একটি অটোর মধ্যে নিয়ে গিয়েছিল। অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করছিল। ছাত্রীদেরও গায়ে হাত দেয়।’’ ঘটনায় মুচিপাড়া থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘তদন্ত চলছে।’’ এই ঘটনার পরে সমালোচনা শুরু হয়েছে শিক্ষা মহলে।
শিক্ষা মহলে অধিকাংশেরই মত, কলেজে ভর্তি থেকে শুরু করে নানা বিতর্কিত ঘটনায় বারবার উঠে আসে সুরেন্দ্রনাথ কলেজের নাম। যে কোনও কলেজের সামনে লিফলেট বিলি হতে পারে। এ জন্য মারধর করা বা চড়াও হওয়ার অর্থ গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা।
এসএফআই-এর প্রেসিডেন্সি ইউনিটের সম্পাদক সৌমি নন্দী বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের অধিকার নিয়ে আন্দোলন করা আমাদের নৈতিক অধিকার। সেটা করতে গিয়ে যখন পড়ুয়ারা আক্রান্ত হন, তখন বুঝতে হবে, এ বিষয়ে ওই গুন্ডাদের শিক্ষা ও সচেতনতা, দুটোই কম রয়েছে।’’
কলেজের অধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল কর বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যমের থেকেই শুনেছি যে, কলেজের বাইরে রাস্তায় কোথাও একটা গণ্ডগোল হয়েছে। বিশদে জানি না।’’ আর কলেজের পরিচালন সমিতির সদস্য, তৃণমূলের দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন সন্ধ্যায় বলেন, ‘‘আমি আদালতে ছিলাম। বিষয়টা সম্পর্কে কিছু জানি না।’’ কলেজের টিএমসিপি-র এক নেতাকে ফোন করা হলে তিনি ফোন তোলেননি। জবাব দেননি মেসেজেরও। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক তমোঘ্ন ঘোষ বলেন, ‘‘মঙ্গলবারের অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। এ রকম কিছু ঘটেছে বলে শুনিনি।’’