Barun Biswas

Barun Biswas: বরুণের মতো প্রতিবাদী হতে ডাক পড়ুয়াদের

বরুণ বিশ্বাসের মতো এক জন প্রতিবাদী মানুষ হতে হবে। মঙ্গলবার শিয়ালদহের মিত্র ইনস্টিটিউশনের (মেন) শিক্ষকেরা তাঁদের পড়ুয়াদের এই বার্তাই দিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২২ ০৭:৪৩
Share:

স্মরণ: বরুণ বিশ্বাসের ছবিতে মাল্যদান এক ছাত্রের। মঙ্গলবার, মিত্র ইনস্টিটিউশনে। নিজস্ব চিত্র

‘শুধু পড়াশোনায় ভাল হলেই হবে না, বরুণ বিশ্বাসের মতো শিরদাঁড়া সোজা রাখা এক জন প্রতিবাদী মানুষ হতে হবে।’ মঙ্গলবার শিয়ালদহের মিত্র ইনস্টিটিউশনের (মেন) শিক্ষকেরা তাঁদের পড়ুয়াদের এই বার্তাই দিলেন। সেই প্রতিবাদী চরিত্রের কথাও শোনালেন। এ দিন ছিল বরুণ বিশ্বাসের দশম মৃত্যুদিন। উত্তর ২৪ পরগনার সুটিয়ার বাসিন্দা, প্রতিবাদী যুবক বরুণ শিয়ালদহের মিত্র ইনস্টিটিউশনে বাংলার শিক্ষক ছিলেন। ১৯৯৯ সালের ২ জানুয়ারি থেকে মৃত্যুর দিন পর্যন্ত সেখানেই শিক্ষকতা করেছেন।

Advertisement

২০১২ সালের ৫ জুলাই বরুণকে গোবরডাঙা স্টেশন চত্বরে গুলি করে মারে দুষ্কৃতীরা। সেই সময়ে গাইঘাটায় একের পর এক গণধর্ষণের ঘটনার বিরুদ্ধে এলাকার প্রতিবাদী মুখ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। ওই সব ঘটনায় কয়েক জন দুষ্কৃতী ধরা পড়ে। সাজাও হয়। কয়েকটি মামলায় মূল সাক্ষী ছিলেন বরুণ। বছর চল্লিশের শিক্ষক বরুণ হয়ে ওঠেন প্রতিবাদের মুখ। সে কারণেই দুষ্কৃতীরা তাঁকে সরিয়ে দিল, এই অভিযোগে উত্তাল হয় সুটিয়া।

মৃত্যুর ১০ বছর পরেও তাঁকে ভুলতে পারেননি বরুণের স্কুলের শিক্ষকেরা। তাঁর কথা বলতে গিয়ে তাঁদের অনেকের চোখ আজও ভিজে ওঠে। এ দিন সকালে স্কুলের সামনে বরুণের স্মৃতিচারণ করেন কর্তৃপক্ষ। সেই স্মৃতিচারণায় অংশ নিয়েছিল ‘বরুণ বিশ্বাস স্মৃতি কমিটি’ও।

Advertisement

স্কুল থেকে সদ্য অবসর নিয়েছেন মিত্র ইনস্টিটিউশনের (মেন) ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক বিপ্লব নাহা বিশ্বাস। বিপ্লববাবু দীর্ঘদিন বরুণের সঙ্গে কাজ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘ছাত্রদের সঙ্গে বরুণ স্নেহশীল বন্ধুর মতো মিশে যেত। কোনও দিন মারধর করতে দেখিনি। অসম্ভব জনপ্রিয় ছিল স্কুলে। আজকের খুদেরা অনেকেই বরুণ সম্পর্কে খুব বেশি জানে না। ওদের তাই বরুণের মতো দৃঢ়চেতা এক শিক্ষকের গল্প বললাম।’’ বিপ্লববাবু স্মৃতিচারণে বলে চলেন, ‘‘ওর মনটা ছিল খুব নরম। এক বার দুর্ঘটনায় স্কুলের এক ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়ার মৃত্যুর খবর পেয়ে সবাই ছাত্রটির বাড়ি গেলাম। বরুণও গেল। সে দিনই একটা বিয়ের নিমন্ত্রণ ছিল। বরুণ জানিয়ে দিয়েছিল, তার বিয়েবাড়ি যাওয়ার মন নেই। সারা দিন ওই পড়ুয়ার বাড়িতে থেকে গেল। মনে হচ্ছিল, নিজের কাউকে হারিয়েছে।’’

বরুণ যে প্রান্তিক মানুষদের জন্য এত কাজ করতেন এবং গাইঘাটায় পরের পর গণধর্ষণের ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে উঠেছিলেন, তা স্কুলে বুঝতে দিতেন না বলে জানাচ্ছেন শিক্ষকেরা। স্কুলে তিনি শুধুই এক মনোযোগী শিক্ষক ছিলেন।

এ দিন ‘বরুণ বিশ্বাস স্মৃতিরক্ষা কমিটি’র কোষাধ্যক্ষ জ্ঞানতোষ প্রামাণিক বলেন, ‘‘নিঃস্বার্থ ভাবে ভালবাসা, দায়িত্ববোধ, প্রান্তিক মানুষের জন্য আত্মত্যাগ— বরুণের সব কিছু আজও দৃষ্টান্ত। তাই রাজ্য জুড়েই তাঁর স্মৃতিচারণ হয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement