Kolkata fire

সাহসিকতাই কি কাড়ল দুই বন্ধুকে, বিহ্বল সঞ্জয়

উত্তর ২৪ পরগনার পলতার বাসিন্দা সঞ্জয় দাস দমকল দফতরের চালক। ২০১৭ সাল থেকে রয়েছেন দমকলের সদর দফতরে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২১ ০৬:৪৮
Share:

সঞ্জয় দাস

বন্ধুবিয়োগের যন্ত্রণা কুরে কুরে খাচ্ছে দমকলকর্মী সঞ্জয় দাসকে। তিনি ভাবতেই পারছেন না অনিরুদ্ধ জানা ও গৌরব বেজ— দুই বন্ধুকে এ ভাবে একসঙ্গে হারাতে হয়েছে। সোমবার রাত ১২টা নাগাদ প্রথম খবরটা পেয়েছিলেন। তার পর থেকেই দু’চোখের পাতা এক করতে পারেননি। মঙ্গলবার সকালে ডিউটি শুরু হওয়ার অনেক আগেই পৌঁছে গিয়েছিলেন স্ট্র্যান্ড রোডের ঘটনাস্থলে। কিন্তু বন্ধুদের মৃতদেহের ছবি দেখার পরে কার্যত বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছেন তিনি।

Advertisement

উত্তর ২৪ পরগনার পলতার বাসিন্দা সঞ্জয় দাস দমকল দফতরের চালক। ২০১৭ সাল থেকে রয়েছেন দমকলের সদর দফতরে। সেখানেই দমকলকর্মী অনিরুদ্ধ ও গৌরবের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। অফিসে ওই দু’জনের সঙ্গেই তিনি বেশি সময় কাটাতেন। কাজের ফাঁকে চলত একসঙ্গে চা খাওয়া, গল্প করা। এমনকি, তিন জনে একসঙ্গে মাঝেমধ্যেই বেরিয়ে পড়তেন আশপাশে।

মঙ্গলবার ঘটনাস্থলের সামনেই অন্য কর্মীদের সঙ্গে ডিউটি করছিলেন সঞ্জয়। তিনি বলেন, ‘‘সোমবার আমার ডিউটি ছিল না। সারা দিন বাড়িতেই ছিলাম। সন্ধ্যার সময়ে প্রথমে নিউ কয়লাঘাট বিল্ডিংয়ে আগুন লাগার খবর জানতে পারি। প্রথমে ভেবেছিলাম, ছোট কোনও আগুন হবে। তখন বিষয়টিতে তেমন গুরুত্ব দিইনি। তবে রাত বাড়তেই আগুনের ভয়াবহতার খবর আসতে থাকে। তখনই জানতে পারি, বেশ কয়েক জন দমকলকর্মীর খোঁজ মিলছে না। তাঁদের মধ্যেই যে অনিরুদ্ধ ও গৌরব রয়েছে, সেটা জানতে পারি আরও রাতে।’’

Advertisement

সঞ্জয় জানান, সাহসী বলে অনিরুদ্ধ ও গৌরব পরিচিত ছিলেন। আগুন লাগার পরে কোথাও যেতে হলে তাঁরাই সবার আগে থাকতেন। ‘‘ঝাঁপিয়ে পড়ে কাজ করার জন্যই হয়তো সোমবার ওদের এ ভাবে প্রাণ দিত হল’’— আক্ষেপ করেন সঞ্জয়। কথা বলতে বলতে চোখ ভিজে আসছিল সঞ্জয়ের। তিনি বলেন, ‘‘অনেক জায়গায় একসঙ্গে আগুন নেভানোর কাজে গিয়েছি। বাগড়ি মার্কেটের আগুনের সময়েও একসঙ্গে ছিলাম। সেখানেও অনিরুদ্ধ ও গৌরব আগুন নেভাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এ ছাড়া, ছোট ছোট অনেক আগুনের সময়েও আমরা কাজ করেছি। সাহসিকতার জন্য দফতরে বেশ পরিচিতি ছিল অনিরুদ্ধ ও গৌরবের। আগুনকে ভয় পেত না ওরা।’’

সঞ্জয় জানান, অনিরুদ্ধ একাধিক বার তাঁর পলতার বাড়িতেও গিয়েছিলেন। সঞ্জয়কে ফোন করলে তাঁর বাড়ির সকলের সঙ্গেও কথা বলতেন অনিরুদ্ধ। সঞ্জয় বলেন, ‘‘এই তো কয়েক দিন আগেই আমাদের বাড়ির পুজোয় এসেছিল ও। অনেক ক্ষণ ছিল। বাড়ির সকলের সঙ্গে কত আড্ডা মারল। ফেরার সময়ে জানাল, আবার আসবে। কিন্তু আমার বাড়িতে ওর আবার যাওয়া আর হল না।’’

গভর্নমেন্ট স্পনসর্ড মাল্টিপারপাজ় স্কুল ফর বয়েজ, টাকি হাউসের ছাত্র ছিলেন অনিরুদ্ধ। বরাবরই তিনি মেধাবী ছিলেন বলে জানাচ্ছেন বন্ধুরা। অনিরুদ্ধর বাবা মোহনলাল জানা এ দিন জানান, ২০০৯ সালে ওই স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন অনিরুদ্ধ। এ দিন তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে স্কুলের পড়ুয়ারা নীরবতা পালনের মাধ্যমে শোকপ্রকাশ করে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement