Cyclone Amphan

শিশুর চোখে আমপান জয়ের স্মারক

এক বছর আগে আমপানের বিকেলে শিশুর জন্মের পদধ্বনি টের পেয়েই রিশানের মা নড়েচড়ে বসেন। শিশুর জন্মের সময় আচমকাই এগিয়ে এসেছিল।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মে ২০২১ ০৫:৫৯
Share:

আদরের: মা রিয়া ও বাবা দেবব্রতের সঙ্গে রিশান। নিজস্ব চিত্র।

ঝড় তার জন্মের পথে বাধা হতে পারেনি ঠিকই, কিন্তু ঝড়ই নিত্যসঙ্গী এখনও।

Advertisement

ঠিক এক বছর আগে আমপানের রাত শেষে জন্মেছিল একরত্তি রিশান। সেই শিশুর অস্তিত্ব জুড়েই মহা ঘূর্ণিঝড়কে হারানোর জয় নিশান। “এই এক বছরে ছেলেটার খিলখিল হাসি, উঠে বসা, আধো বোলে কথা বলার সবটুকু চেষ্টাই ঝড়ের সঙ্গে লড়াইয়ের স্মৃতি মনে পড়িয়েছে। কী ভাবে যে হাসপাতালে পৌঁছেছিলাম, ভাবলে গায়ে কাঁটা দেয় আজও”— বলে ওঠেন রিশানের মা, ২৮ বছরের রিয়া সিংহ। মহেশতলার শানপুকুরে রিশানের মা, বাবা রিয়া-দেবব্রতদের মন খারাপ, এক বছর আগে বাচ্চাটার জন্মের সময়ের মতোই জীবন ফের থমকে গিয়েছে। ফের একটা ঝড়ের চোখরাঙানিও ভয় দেখাচ্ছে।

এক বছর আগে আমপানের বিকেলে শিশুর জন্মের পদধ্বনি টের পেয়েই রিশানের মা নড়েচড়ে বসেন। শিশুর জন্মের সময় আচমকাই এগিয়ে এসেছিল। অথচ হবু বাবা তখন কাছে নেই। ঠাকুরপুকুরে বাপের বাড়িতে ছিলেন আসন্নপ্রসবা রিয়া। রিয়ার বাবা ষাটোর্ধ্ব অসীম মজুমদার, এক কাকা ও পিসি মিলে পাড়ার অ্যাপ-ক্যাব চালক যুবক সানি সাহার সাহায্যেই এক কঠিন অভিযানে শামিল হয়েছিলেন।

Advertisement

নদী হয়ে ওঠা শহরের পথে সোঁ সোঁ হাওয়ায় পলকা খেলনার মতো দুলতে থাকা ট্যাক্সিতে সিটে কী ভাবে ব্যথা সয়ে বসেছিলেন হবু মা, কী ভাবে অভিভাবকেরা টর্চের আলো ফেলে পথ আটকে পড়ে থাকা গাছ, বিদ্যুতের তার ঠাহর করতে করতে ট্যাক্সিকে পথ দেখাচ্ছিলেন, তা এক বছর আগে আনন্দবাজারকে জানিয়েছিলেন রিয়া ও তাঁর বাবা অসীমবাবু। নার্সিংহোমে যাওয়ার রাস্তা গাছ পড়ে বন্ধ। পিজি হাসপাতালে যেতে ঘণ্টা চারেকের চেষ্টায় রাসবিহারী মোড়ের কাছে পৌঁছন তাঁরা। তখন সহায় হয়েছিলেন টালিগঞ্জ ট্র্যাফিক গার্ডের ওসি সোমনাথ মিত্র। ট্যাক্সি বিকল তখন। পুলিশের ওসি জিপে বসিয়েই হবু মাকে সেবা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করান। ২১ মে ঝড় শেষের সকালেই পৃথিবীর আলো দেখে একরত্তি রিশান।

বুধবার বিকেলে আমপানের বর্ষপূর্তির প্রাক্কালে রিয়া বলছিলেন, “ছেলেটার জন্মদিনে সোমনাথবাবুকে অবশ্যই ফোন করব। ওঁর সঙ্গে এখনও আমাদের পরিবারের যোগাযোগ রয়েছে। পুজোয় ছেলেকে উপহারও দিয়েছেন।” এ ছাড়া, ছেলের জন্মদিনে ইউটিউব দেখে শেখা কেকও তৈরি করবেন মা। রিয়ার শ্বশুরবাড়ি, বাপের বাড়িতে এখনও ঘা মারেনি করোনার থাবা। কিন্তু বাপের বাড়ির তল্লাটে কোভিড রোগীর ছড়াছড়ি। রিশান দাদু-অন্ত-প্রাণ। কিন্তু দাদু সটান মেয়েকে বলে দিয়েছেন, “এখন আমার সোনা দাদুকে তুই আমাদের বাড়িতে আনবি না!” মেয়ে, জামাইয়ের ভ্যাকসিন না-পাওয়াটাও প্রৌঢ়কে চিন্তায় রেখেছে। করোনার ধাক্কায় তরুণ বাবা দেবব্রতবাবু বা অসীমবাবুদের পাইকারি পোশাকের কারবারও ধাক্কা খেয়েছে। জীবন যেন আবার নতুন করে ঝড়েরই মুখোমুখি।

আমপানের বর্ষপূর্তির মুখে রিয়া বলে চলেন, “এই ঝড়টা অনেক কিছু শিখিয়ে গেছে। বিপদের সময়ে মাথা ঠান্ডা রাখতে হয়। ধৈর্য ধরে সাবধানে লড়তে পারলে ঝড়ের ধাক্কা ঠিক ঝিমিয়ে যাবে।” একটি শিশুর কলকলানিতেই ঝড়কে হারানোর স্মারক দেখছেন তরুণ দম্পতি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement