প্রতীকী ছবি।
গণ-টিকাকরণ অভিযানের প্রথম দফায় যাতে এক জন চিকিৎসকও বাদ না পড়েন, সে বিষয়ে সতর্ক রাজ্য সরকার। কারণ সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক ছাড়াও আরও অনেকে রয়েছেন যাঁরা শুধু ব্যক্তিগত চেম্বার করেন। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা সেই সব চিকিৎসককেও খুঁজে আনার জন্য উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।
তালিকায় ওই চিকিৎসকদের নাম নথিভুক্ত করার জন্য ইতিমধ্যেই সব জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগী হওয়ার নির্দেশও দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। সূত্রের খবর, সারা রাজ্যে মোট চিকিৎসক রয়েছেন প্রায় ৬০ হাজার। তাঁদের কেউ সরকারি, কেউ বেসরকারি হাসপাতাল অথবা কোনও পলিক্লিনিকের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু এর বাইরেও প্রায় ১০-১৫ শতাংশ চিকিৎসক আছেন, যাঁরা শুধু বাড়িতে কিংবা স্থানীয় ওষুধের দোকানে চেম্বার করেন। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসকদের সম্পর্কে পরিসংখ্যান তুলনায় সহজে মিললেও, ব্যক্তিগত চেম্বার করা চিকিৎসকদের বিষয়ে কোনও তথ্য নেই। তাই তাঁদের খুঁজে বার করা জরুরি। সে কারণেই ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ), অ্যাসোসিয়েশন অব ফিজ়িশিয়ান্স অব ইন্ডিয়া (আইপিএ)-র মতো কিছু চিকিৎসক সংগঠনকেও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতরের টিকাকরণ অভিযানে নাম নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত আছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই। তিনি জানান, অতিমারি পরিস্থিতিতে যাঁরা ব্যক্তিগত চেম্বার করছেন, তাঁদের করোনা রোগীর সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনা বেশি। কারণ, উপসর্গহীন রোগী চেম্বারে গেলেও সব সময়ে তা বোঝা সম্ভব হচ্ছে না। অনির্বাণবাবুর কথায়, ‘‘এর ফলে অজান্তে সংক্রমিত হওয়ার খুবই আশঙ্কা থাকছে। তাই বিভিন্ন হাসপাতালে যুক্ত চিকিৎসকেরা ছাড়াও ব্যক্তিগত চেম্বার করা চিকিৎসকদেরও সকলের টিকাকরণ অভিযানের তালিকায় নাম নথিভুক্ত করা জরুরি।’’ জানা গিয়েছে, সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল এবং পলিক্লিনিকের সঙ্গে যুক্ত ৩০ হাজারেরও বেশি চিকিৎসকের নাম ইতিমধ্যেই নথিভুক্ত হয়েছে। সে বিষয়ে ধন্যবাদ-জ্ঞাপন বার্তাও তাঁদের মোবাইলে পাঠানো হয়েছে।
কী ভাবে নাম নথিভুক্ত হচ্ছে? এক স্বাস্থ্য আধিকারিক জানাচ্ছেন, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল এবং পলিক্লিনিক থেকেই তাদের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসকদের নাম পাঠানো হচ্ছে স্বাস্থ্য ভবনে। একই নাম দু’জায়গা থেকে এসেছে কি না, তা দেখে ঝাড়াই বাছাই করে চূড়ান্ত তালিকা তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি ব্যক্তিগত চেম্বার করেন, এমন প্রায় আড়াই হাজার চিকিৎসকের নাম আইএমএ-র মাধ্যমে জমা পড়েছে স্বাস্থ্য দফতরে। ওই সংগঠনের রাজ্য শাখার সম্পাদক শান্তনু সেন বলেন, ‘‘সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক কোন সংগঠনের সদস্য, তা দেখার প্রয়োজন নেই। তাঁকে টিকাকরণ অভিযানের তালিকায় নথিভুক্ত করাই উদ্দেশ্য।’’
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিনের শিক্ষক-চিকিৎসক তথা আইএমএ-র যুগ্ম সম্পাদক জ্যোর্তিময় পাল জানান, রাজ্যে তাঁদের সংগঠনের ১৮০টি শাখা সমিতি রয়েছে। তার মাধ্যমেই সংশ্লিষ্ট জেলায় ব্যক্তিগত চেম্বার করা চিকিৎসকদের খোঁজ চলছে। চিকিৎসক সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স, পশ্চিমবঙ্গ’-এর সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটারও মত, ব্যক্তিগত চেম্বার করা চিকিৎসকদের টিকাকরণের বিষয়টি রাজ্য সরকারের তরফে ১০০ শতাংশ সুনিশ্চিত করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘‘অতিমারি পরিস্থিতিতে বহু চিকিৎসক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চেম্বার খুলে চিকিৎসা করেছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকের করোনায় মৃত্যুও হয়েছে। তাই যাঁকেই নাম নথিভুক্তির দায়িত্ব দেওয়া হোক, বিষয়টি যাতে সুনিশ্চিত হয় সে দিকে সরকারকে খেয়াল রাখতে হবে।’’