Dengue

বাজেটে ডেঙ্গি, পোর্টালে এখনও তথ্য নেই রাজ্যের

‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর ভেক্টর বোর্ন ডিজ়িজ় কন্ট্রোল’-এর পোর্টালে ২০২৩ সালে দেশের সমস্ত রাজ্যের ডেঙ্গির পরিসংখ্যান রয়েছে। সেই তালিকায় শুধু পশ্চিমবঙ্গের ঘর ফাঁকা। যা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থের পরিপন্থী বলেই মত চিকিৎসকদের একাংশের।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:৪৯
Share:

—প্রতীকী ছবি।

দেশের অন্যান্য রাজ্যের মতো বাংলার স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেও ডেঙ্গি উদ্বেগের কারণ হিসাবে দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার ২০২৪-’২৫ অর্থবর্ষের বাজেট বিবৃতিতে এমনই দাবি করেছে খোদ রাজ্য সরকার। যদিও গত বছর এ রাজ্যে কত জন মশাবাহিত ওই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গিয়েছেন, তার কোনও পরিসংখ্যান এ দিন পর্যন্ত কেন্দ্রের পোর্টালে নথিভুক্ত হয়নি!

Advertisement

‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর ভেক্টর বোর্ন ডিজ়িজ় কন্ট্রোল’-এর পোর্টালে ২০২৩ সালে দেশের সমস্ত রাজ্যের ডেঙ্গির পরিসংখ্যান রয়েছে। সেই তালিকায় শুধু পশ্চিমবঙ্গের ঘর ফাঁকা। যা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থের পরিপন্থী বলেই মত চিকিৎসকদের একাংশের। পাশাপাশি, ডেঙ্গি নিয়ে তথ্য গোপনের যে অভিযোগ বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠন তুলেছিল, তা এই ঘটনায় আরও মান্যতা পাচ্ছে বলেই মত চিকিৎসক মহলের। গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজ্যে দৈনিক কত জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন বা মারা গিয়েছেন, তার কোনও পরিসংখ্যানই সরকারি ভাবে প্রকাশ করেনি রাজ্য। সব সময়েই বলা হয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। চিন্তার কোনও কারণ নেই। কিন্তু এ দিন বাজেট বিবৃতিতে ডেঙ্গি নিয়ে খোদ রাজ্যের উদ্বেগ প্রকাশের বিষয়টি সামনে আসায় চিকিৎসক মহলের একাংশ বলছেন, ‘‘আগে অস্বীকার করলেও এখন সরকার নিজেই স্বীকার করল, গত বছর ডেঙ্গি কতটা উদ্বেগ তৈরি করেছিল।’’

গত বছরের মাঝামাঝি থেকে রাজ্যে ব্যাপক হারে ডেঙ্গি মাথাচাড়া দিতে শুরু করে। রোজই কোনও না কোনও হাসপাতালে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। শিশু থেকে বয়স্ক, ডেঙ্গি কাউকেই ছাড়েনি। যদিও আগাগোড়াই মুখে কুলুপ এঁটে ছিল স্বাস্থ্য দফতর। এমনকি, জেলা স্তরের কোনও স্বাস্থ্য আধিকারিক যাতে ডেঙ্গির বিষয়ে মুখ না খোলেন, সেই বিষয়েও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন স্বাস্থ্যকর্তারা। বেসরকারি হিসাবে, গত বছর রাজ্যে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হন প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার মানুষ। মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৭০ জনের। বছর শেষে এমন পরিসংখ্যান প্রকাশ্যে উঠে আসার পরে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অনেকেই জানিয়েছেন, ১২ বছরের (২০১২-২০২৩) মধ্যে ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা সব চেয়ে বেশি ছিল ২০২৩ সালে।

Advertisement

বাজেট বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ডেঙ্গি প্রতিরোধে রাজ্য বিবিধ পদক্ষেপ করেছে। ডেঙ্গি পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা ২০২২-এ ছিল ১৪৯। ২০২৩-এ তা বাড়িয়ে ১৯৭ করা হয়। বিরোধীরা বলছেন, গত বছর ডেঙ্গি সংক্রান্ত প্রকৃত সংখ্যা গোপন করে রাজ্যের অবস্থা ঠিক আছে প্রমাণ করতে চেয়েছিল সরকার। আর বাজেটে নিজেদের কাজের ‘ঢাক পেটাতে’ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক ও পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেল্‌থ সার্ভিস ডক্টর্স’-এর সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক স্তরে ডেঙ্গি নোটিফায়েবল ডিজ়িজ়। এক দিকে অন্যান্য রাজ্যের মতো এখানেও ডেঙ্গি উদ্বেগের কারণ বলে জানানো হচ্ছে। অন্য দিকে, তথ্য কেন্দ্রের পোর্টালে দেওয়া হচ্ছে না। এর অর্থ, তথ্য গোপন করে রাজ্য ভাল আছে প্রমাণের চেষ্টা। এই প্রবণতায় আখেরে জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে।’’

আবার চলতি বছরে ফের ডেঙ্গি পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হলে তা মোকাবিলায় সরকার কী করবে, বাজেটে কেন তার উল্লেখ নেই, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ‘সার্ভিস ডক্টর্স ফোরাম’-এর সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাস। তাঁর কথায়, ‘‘গত বছর সরকার ডেঙ্গির বিষয়ে যে চরম মিথ্যা বলেছিল, তা আজ নিজেদের কথাতেই স্পষ্ট। জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে বাজেটে কোনও দিশা নেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement