এ-ও এক উলটপুরাণ!
এত দিন পর্যন্ত রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে এসেছেন মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ। এখন মেট্রো রেলের বিরুদ্ধেই কাজে ঢিলেমির অভিযোগ তুলছে রাজ্য সরকার। যদিও রাজ্যের ওই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে মেট্রোকর্তাদের বক্তব্য, নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনেই তাঁদের কাজ করতে হয়। তার বাইরে তাঁরা কোনও মতেই যেতে পারেন না। সে জন্য সময় তো লাগবেই।
সমস্যার শুরু গত ৭ ফেব্রুয়ারি। নবান্নে রাজ্যের মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রাজ্যের পদস্থ কর্তা-মন্ত্রী ও মেট্রো রেলের কর্তাদের যৌথ বৈঠকের পরে। বৈঠকের আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতার মেয়র এবং রাজ্যের দমকলমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়কে ডেকে নির্দেশ দেন, এ বার বাজেটে কলকাতার সব মেট্রো প্রকল্পেই বরাদ্দ কমবেশি বেড়েছে। তাই, মেট্রো প্রকল্পগুলির কাজ যাতে আটকে না থাকে, সে জন্য সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে।
এর পরেই মুখ্যসচিবের ওই বৈঠকে মেট্রো রেলের কর্তারাও জানিয়ে দেন, জোকা-বি বা দী বাগ এবং নিউ গড়িয়া-বিমানবন্দর প্রকল্প দু’টিতে কী কী ধরনের জট রয়েছে। রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘বিস্তারিত রিপোর্ট দিয়ে মেট্রোকর্তারা জানিয়ে দেন, মেট্রো প্রকল্পের ক্ষতিপূরণের অর্থও তাঁদের কাছে প্রস্তুত রয়েছে। সে দিনই আমরা সমস্যার সমাধানে নেমে পড়ি।’’ নবান্ন সূত্রের জানা গিয়েছে, এর পরেই মেয়র নিজে গিয়ে ভিআইপি বাজারে কয়েকটি দোকান স্থানান্তরের ব্যবস্থা করেন। ওই কর্তা বলেন, ‘‘কথা ছিল, নতুন যে জায়গায় দোকানদারেরা উঠে যাচ্ছেন, সেখানে মেট্রো রেলকে শুধু একটি শৌচালয় বানিয়ে দিতে হবে। কিন্তু আজও সেই কাজ শুরু হয়নি।’’
একই ভাবে সপ্তাহখানেকের মধ্যে নিউ গড়িয়া ডিপোর জমি-জট কাটাতে অনিচ্ছুক কৃষকদের হাজির করানো হয় মেয়রের অফিসে। সেখানে মেয়র ছাড়াও ছিলেন রাজ্যের পরিবহণ দফতর ও মেট্রো রেলের পদস্থ কর্তারা। ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক ফিরদৌসি বেগমও। বৈঠকে জমি দিতে রাজি হন কৃষকেরা। কিন্তু মেট্রো জানিয়ে দেয়, টাকা এখন দেওয়া কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। আরও কিছু প্রক্রিয়া বাকি রয়েছে। সে সব শেষ না হলে টাকা দেওয়া যাবে না।
মেট্রোর বক্তব্যের পরে কৃষকেরাও জানিয়ে দেন, আট বছর আগে একই ভাবে মেট্রো আরও কিছু জমি অধিগ্রহণ করেছিল। তার ক্ষতিপূরণ এখনও তাঁরা হাতে পাননি। রাজ্যের ওই কর্তা বলেন, ‘‘এর পরে পুরোটাই পণ্ডশ্রম হয়ে যায়।’’ একই ভাবে থমকে গিয়েছে জোকা-বি বা দী বাগ মেট্রোয় একটি সংস্থার জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়াও।
রাজ্যের অভিযোগ অবশ্য পুরোপুরি উড়িয়ে দিচ্ছেন না মেট্রো কর্তৃপক্ষ। মেট্রোর এক পদস্থ কর্তার বক্তব্য, ‘‘রাজ্যকে ছাড়া আমরা প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব না। কিন্তু চাইলেই আমরা নিজেরা সব সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনেই আমাদের এগোতে হয়।’’
মেট্রোর টালবাহানা নিয়ে অবশ্য প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করছেন না মেয়র। তিনি শুধু বলেন, ‘‘মেট্রো প্রকল্পের কাজ শেষ হলে আখেরে এই শহরেরই উন্নয়ন হবে। কাজেই, প্রকল্পগুলির কাজ শেষ করতে যা যা প্রয়োজন, তার ব্যবস্থা আমরা করবই।’’