মর্মান্তিক: দুর্ঘটনার পরে গাড়ি ও পাঁচিলের অবস্থা। রোহিত সিংহ (ইনসেটে)। সোমবার, বেহালায়। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
বেপরোয়া গতির বলি হলেন গাড়িচালক নিজেই।
শহরের রাস্তায় বসানো আছে স্পিড লিমিটর। রাতে কলকাতার বহু গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে বেপরোয়া গাড়িচালকদের নিয়ন্ত্রণ করতে পাহারাতেও থাকে কলকাতা পুলিশ। কিন্তু বহু চালকই এখনও সচেতন নন। সেই সচেতনতার অভাবের জেরেই এক মর্মান্তিক পরিণতির ঘটনা ঘটল রবিবার গভীর রাতে। পুলিশ সূত্রের খবর, বেহালার এয়ারপোর্ট রোড ও উপেন ব্যানার্জি রোডের সংযোগস্থলে বেপরোয়া গতিতে চলতে গিয়ে একটি দেওয়ালে গাড়ি নিয়ে ধাক্কা মারেন এক যুবক। সঙ্কটজনক অবস্থায় তাঁকে রাস্তা থেকে উদ্ধার করে রাতেই হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি তাঁকে।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম রোহিত সিংহ (২৭)। তিনি মহেশতলার বাসিন্দা। ঘটনার রাতে তিনি প্রচণ্ড গতিতে গাড়ি চালিয়ে পর্ণশ্রী থানা এলাকার এয়ারপোর্ট রোড ধরে ফিরছিলেন। সেই সময়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি পাঁচিলে গাড়ি নিয়ে সরাসরি ধাক্কা মারেন। সংঘর্ষের অভিঘাতে গাড়ির সামনের অংশ দুমড়ে যায়। একই সঙ্গে দেওয়ালটির খানিকটা অংশও ধসে পড়ে। পর্ণশ্রী থানার পুলিশ রোহিতকে সঙ্কটজনক অবস্থায় উদ্ধার করে বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই তাঁর মৃত্যু হয়। ওই যুবক মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিলেন বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করছে পুলিশ। সোমবার তাঁর দেহের ময়না-তদন্ত করা হয়।
রোহিতের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁদের পারিবারিক ব্যবসা রয়েছে। রোহিত ভবানীপুরের একটি কলেজ থেকে স্নাতক হওয়ার পরে উচ্চশিক্ষার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন। এ দিন পর্ণশ্রী থানায় এসেছিলেন তাঁর পরিবারের সদস্যেরা। তাঁরা জানান, রোহিত পরিবারের ছোট ছেলে। যে গাড়িটি নিয়ে তিনি দুর্ঘটনার কবলে পড়েন, সেটি এক বছর আগে কেনা হয়েছে। রোহিতের দাদা অঙ্কিত আচমকা এমন ঘটনায় স্তম্ভিত। তিনি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চাননি। অন্য এক আত্মীয় জানান, রোহিত অত রাতে কোথা থেকে ফিরছিলেন, সেটা জানেন না তিনি। শোকের ওই মুহূর্তে বিষয়টি নিয়ে রোহিতের অভিভাবকদের থেকে বিশেষ কিছু জানতে চাওয়া হয়নি বলে থানায় আসা আত্মীয়েরা জানান।
মাসখানেক আগেই বেপরোয়া একটি গাড়ি বেলেঘাটা কানেক্টরের কাছে অন্য একটি দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িকে ধাক্কা মেরেছিল। তাতে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িটির এক যাত্রীর মৃত্যু হয়। আবার চলতি বছর জানুয়ারি মাসে যাদবপুরের সুলেখা মোড়ের কাছে একটি বেপরোয়া গাড়ি হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়েছিল চায়ের দোকানে। সাত জনকে চাপা দেয় গাড়িটি। এক জনের মৃত্যুও হয়। সেই চালকের বিরুদ্ধেও মত্ত থাকার অভিযোগ উঠেছিল।
কলকাতা পুলিশ জানাচ্ছে, রবিবার রাতে যে জায়গায় দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেটি বড় কোনও মোড় নয়। আধিকারিকেরা জানান, বেহালার অনেক গুরুত্বপূর্ণ মোড়েই ব্রেথ অ্যানালাইজ়ার নিয়ে তৈরি থাকে পুলিশ। বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালালে জরিমানাও করা হয় চালককে। কিন্তু সর্বত্র অত কড়া ব্যবস্থা রাখা যে সম্ভব নয়, তা-ও মেনে নিচ্ছেন পুলিশকর্মীরা।