সতর্কতা: দরজা খোলার অনুমতি মেলায় চলছে জীবাণুনাশের কাজ। মঙ্গলবার, ক্যামাক স্ট্রিটের এক জিমে। ছবি: রণজিৎ নন্দী
নিয়ন্ত্রণ-বিধি খানিকটা শিথিল করে ৫০ শতাংশ লোক নিয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত জিম খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছে রাজ্য। মঙ্গলবার থেকে খুলে গিয়েছে জিম। তার পরপরই যে
প্রশ্নটা জোরালো হয়েছে তা হল, বিধি মেনে কবে থেকে খুলবে শহরের সুইমিং পুলগুলি? কারণ, বহু মানুষ সাঁতারের মাধ্যমে শারীরচর্চা করেন। কিন্তু সুইমিং পুলগুলি বন্ধ থাকায় অনেক দক্ষ সাঁতারু অনুশীলন করতে পারছেন না। এর ফলে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় তাঁদের পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। সেই কারণে সাঁতারু এবং সাঁতারের প্রশিক্ষকেরা সকলেই চাইছেন, বিধি মেনে ধীরে ধীরে সাঁতারের ক্লাবগুলিও খুলে দেওয়া হোক।
সাঁতারু বুলা চৌধুরী যেমন মনে করছেন, গত দু’বছর সাঁতারের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলি অধিকাংশ সময়েই কোভিডের কারণে বন্ধ থাকায় ভীষণ ক্ষতি হয়েছে সাঁতারুদের। বুলা
বলেন, “করোনার জন্য সব ধরনের খেলার ক্ষতি হয়েছে ঠিকই। কিন্তু, সব চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সাঁতারের। তৃতীয় ঢেউয়ের দাপট এখন খানিকটা কমতির দিকে। তাই আর দেরি না করে সামনের মরসুম, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি, মার্চ থেকেই সাঁতারের প্রশিক্ষণ শুরু করা যেতে পারে।’’
রবীন্দ্র সরোবরের একটি সাঁতারের ক্লাবের কর্তা অমিত বসু জানালেন, সাধারণের জন্য বন্ধ থাকলেও খেলোয়াড় এবং প্রতিযোগীদের অনুশীলনের কথা ভেবে তাঁদের সাঁতার কাটার অনুমতি দিয়েছিল সরকার। কিন্তু অতিমারির তৃতীয় ঢেউয়ে সে সবও বন্ধ। অমিতবাবু বলেন, “খেলোয়াড় এবং প্রতিযোগীদের জন্য ফের সাঁতার শুরু করার অনুমতি দিলে ভাল হয়। আগামী মরসুমে পরিস্থিতি অনুকূল থাকলে যে কোনও সময়ে জাতীয় বা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার সূচি তৈরি হয়ে যেতে পারে। কিন্তু উপযুক্ত অনুশীলন না থাকলে সাঁতারুরা সেখানে ভাল ফল করতে পারবেন না।’’
দক্ষিণ কলকাতার একটি নামী ক্লাবের স্পোর্টস ম্যানেজার সৌম্যেন্দু গঙ্গোপাধ্যায় জানালেন, কবে থেকে ক্লাবের সুইমিং পুল খুলবে, ইতিমধ্যেই তা জানতে চেয়েছেন অনেক সদস্য। তিনি বলেন, “দ্বিতীয় ঢেউয়ের পরে যখন পরিস্থিতি ভাল হয়েছিল, তখন আমরা সুইমিং পুল এবং জিম খুলেছিলাম। সেই সময়ে বিধি মেনেই সাঁতার হয়েছে। ফের করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের বাড়াবাড়িতে সব বন্ধ হয়ে গেল। মঙ্গলবার থেকে আমরা জিম খুলেছি। কিন্তু সুইমিং পুল বন্ধই।’’ কলেজ স্কোয়ারের একটি সাঁতার-ক্লাবের কর্তা সন্তোষ দাস জানালেন, গত দু’বছর করোনার কারণে খুদেদের প্রশিক্ষণ হয়নি। আগামী মরসুমে তাদের জন্য প্রশিক্ষণ শুরু না হলে ক্লাবগুলি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে। সন্তোষবাবুর প্রশ্ন, পরিস্থিতি ভাল হলে কেন বিধি মেনে সুইমিং পুল খোলার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না?
এ দিকে, সরকারি বিধি মেনে মঙ্গলবার থেকে খুলে গিয়েছে শহরের বিভিন্ন জিম। দক্ষিণ কলকাতার একটি জিমের মালিক দেব সেনগুপ্ত
বলেন, “ভিড় এড়াতে আমরা সদস্যদের জন্য একাধিক শিফট চালু করেছি। প্রতিটি শিফটের পরে পুরো জিম স্যানিটাইজ় করা হচ্ছে। নির্দেশ মেনে রাত ৯টার মধ্যে জিম বন্ধ করা হবে।’’ লেক টাউন এলাকার একটি জিমের এক আধিকারিক জানান, যাঁরা জিম করতে আসছেন, তাঁদের করোনার প্রতিষেধকের দু’টি ডোজ়ই নেওয়া আছে কি না সেই শংসাপত্র দেখা হচ্ছে। প্রশিক্ষকদের
সকলেরই প্রতিষেধকের দু’টি ডোজ় নেওয়া আছে।’’
লেক টাউনের ওই জিম থেকে ব্যায়াম করে বেরিয়ে এ দিন বাঙুরের বাসিন্দা জয় বসু বলেন, “এখন তো বাড়ি থেকে অফিসের কাজ হচ্ছে। একেই অফিস যাওয়ার শারীরিক পরিশ্রম নেই। তার উপরে জিম বন্ধ থাকায় তা শূন্য হয়ে গিয়েছিল। ফের জিম খোলায় শারীরচর্চায় ফিরতে পারলাম বলে ভাল লাগছে।’’