Durga Puja 2021

Durga Puja 2021: শুরুর আগেই নাকাল, ষষ্ঠী থেকে ভিড় আটকাবে কে

আদৌ পরীক্ষায় উতরে যাওয়া যাবে তো? করোনা সংক্রমণ বাড়ার আতঙ্কের মধ্যে সব সুরক্ষা মেনে পুজো-যাপনের বিধি বলবৎ হবে তো?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২১ ০৭:৫০
Share:

সুরুচি সঙ্ঘের মণ্ডপে। রবিবার। নিজস্ব চিত্র।

ষষ্ঠী থেকে দশমী যদি হয় বড় পরীক্ষা, দ্বিতীয়া থেকে পঞ্চমী অবশ্যই সেই পরীক্ষার প্রস্তুতিপর্ব। এ বার সেই প্রস্তুতিপর্বেই ভিড় সামলাতে এমন নাজেহাল হল পুলিশ-প্রশাসন যে প্রশ্ন উঠে গেল, আদৌ পরীক্ষায় উতরে যাওয়া যাবে তো? করোনা সংক্রমণ বাড়ার আতঙ্কের মধ্যে সব সুরক্ষা মেনে পুজো-যাপনের বিধি বলবৎ হবে তো? যদিও প্রথম কয়েক দিনের মতো পঞ্চমীর সন্ধ্যাতেও মণ্ডপের বাইরে যে উপচে পড়া ভিড় দেখা গেল, তাতে এই সব প্রশ্নের উত্তর ছিল না পুজোকর্তা থেকে পুলিশ— কারও কাছেই!

Advertisement

পঞ্চমীর সন্ধ্যা যত গড়িয়েছে, ভিড়ের নিরিখে ততই উত্তরের শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবকে প্রতিযোগিতার মুখে ফেলে দিয়েছে চেতলা অগ্রণী, সুরুচি সঙ্ঘ এবং একডালিয়া এভারগ্রিনের পুজো। দূরত্ব-বিধি পালন তো দূর, অধিকাংশেরই মাস্ক পরে থাকার দায়িত্ববোধটুকু ছিল না বলে অভিযোগ। চেতলা অগ্রণীর মণ্ডপের সামনের রাস্তায় ভিড়ের চাপ এতটাই বেশি ছিল যে, এক সময়ে থমকে যায় গাড়ির চাকা। ভিড় সামলাতে নাজেহাল সেখানকার এক পুজো উদ্যোক্তা বললেন, ‘‘কী ভাবে এই জনতাকে আটকাব জানি না। মাস্ক নেই কেন প্রশ্ন করলেই বলছে, প্রতিষেধকের দু’টি ডোজ় নেওয়া হয়ে গিয়েছে।’’ একডালিয়া এভারগ্রিনের সামনের ভিড়ে আবার তিলধারণের জায়গা নেই। সেখানে হাজির এক মাস্কহীন দর্শনার্থী বললেন, ‘‘গড়িয়াহাটে কেনাকাটা সেরে ঠাকুর দেখতে ঢুকেছি। মাস্ক পরেই বেরিয়েছিলাম, কোথায় পড়ে গেছে!’’ কাছেই দাঁড়ানো পুলিশের তরফে কোনও রকম ঘোষণার ব্যাপার নেই। মাস্কহীন লোকের হাতে পুজো কমিটির তরফেও মাস্ক তুলে দেওয়ার উদ্যোগ নেই। সুরুচি সঙ্ঘের পুজোকর্তা কিংশুক মৈত্র অবশ্য বললেন, ‘‘পঞ্চমীতেই এই জনস্রোত দেখে ভয় লাগছে। কিন্তু আমরা স্পষ্ট বলছি, এক মিনিটের জন্য মাস্ক খুললে বার করে দেওয়া হবে।’’

বালিগঞ্জ কালচারালের পুজোকর্তা অঞ্জন উকিল যদিও বললেন, ‘‘মাস্ক পরতে বলা বা ভিড় আটকানো তো ছেড়েই দিন, লোকে উল্টে কেন মণ্ডপে ঢুকতে দিচ্ছি না সেই নিয়ে গালিগালাজ করছে।’’ হিন্দুস্থান পার্কের পুজোকর্তা সুতপা দাসের অবশ্য দাবি, ‘‘ভিড় হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু আমরা কড়া হাতেই সামলাচ্ছি।’’ দেশপ্রিয় পার্কের পুজোকর্তা সুদীপ্ত কুমারের দাবি, ‘‘পঞ্চমীতেই যা ট্রেন্ড তাতে পুজোর পরে কী হবে জানি না।’’

Advertisement

গত বারই পুজোর পরে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন আহিরীটোলা সর্বজনীনের পুজোকর্তা দুলাল শীল। তিনি আবার বললেন, ‘‘এত ভিড় হচ্ছে যে ভয় লাগছে। গত বার যা ভুগেছি, সেটা মনে করে এ বার প্রথম থেকেই ভিড় থেকে দূরে থাকছি। কিন্তু মানুষ পরিস্থিতি বুঝছেন না।’’ বাগবাজার সর্বজনীন দুর্গোৎসব ও প্রদর্শনীর পুজোকর্তা গৌতম নিয়োগী বলে দিলেন, ‘‘তৃতীয় ঢেউ চাই না। কিন্তু কী করে এই জনতার ঢল সামাল দেব, আমাদের জানা নেই।’’

কলকাতা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার পদমর্যাদার এক শীর্ষ কর্তা বললেন, ‘‘বাড়তি পুলিশ নামিয়ে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু সবার আগে মানুষকে সতর্ক হতে হবে।’’ চিকিৎসক অনির্বাণ দলুইয়ের আশঙ্কা, এমন চলতে থাকলে দিন পনেরোর মধ্যেই ফলাফল দেখা যাবে। তাঁর কথায়, ‘‘পুজোর বাজারের ভিড়ের জন্যই গত কয়েক দিনে সংক্রমিতের সংখ্যা বেড়েছে। পুজোর পরেও এর অন্যথা হবে না। শনিবারই আমরা কয়েকটি পুজোর ব্যবস্থাপনা দেখতে বেরিয়েছিলাম। কিন্তু যা-ই ব্যবস্থা হোক, মানুষ সচেতন না হলে পুলিশ বা পুজো উদ্যোক্তার কারওরই কিছু করার থাকছে না। এই উৎসবের মরসুমে তো আবার প্রতিষেধক নেওয়ার প্রক্রিয়াও কিছুটা স্তিমিত হবে। ফলে উভয়সঙ্কট।’’ চিকিৎসক কুণাল সরকারের হুঁশিয়ারি, ‘‘বহু মানুষ প্রতিষেধকের দু’টি ডোজ় নেওয়া হয়ে গিয়েছে বলে মহানন্দে বেরিয়ে পড়ছেন। কিন্তু আপনার পাশেই ভিড়ের মধ্যে যে কমবয়সিরা দাঁড়িয়ে রয়েছেন, তাঁদেরও কি আপনার মতো প্রতিষেধক নেওয়া রয়েছে? খোঁজ করে দেখুন, তিনি হয়তো প্রতিষেধক নেনইনি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement