বাজির দূষণে কমেছে দৃশ্যমানতা। বুধবার রাতে, সল্টলেকের সিএফ ব্লকে। ছবি: শৌভিক দে
কালীপুজোর রাত মোটের ওপরে কাটলেও শব্দদৈত্যের তাণ্ডব বরাবরের মতোই অব্যাহত রইল দীপাবলির রাতে। বিধাননগর কমিশনারেট এলাকায় দীপাবলির রাতে শব্দবাজি তো ফাটলই। একের পর এক উড়ল ফানুসও। সেগুলি বিমানের নিরাপত্তার জন্য কমিশনারেটের তরফে বিমানবন্দর ডিভিশনের থানা এলাকায় নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
কমিশনারেটের পুলিশ কর্তাদের দাবি, দীপাবলির রাতে মোট ৯৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মাত্র ২০ কেজি নিষিদ্ধ শব্দবাজি বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। এই পরিসংখ্যান দিয়ে পুলিশ দীপাবলির রাতে শব্দবাজির দৌরাত্ম্যে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ রাখার দাবি করেছে ঠিকই। কিন্তু বাস্তব বলছে অন্য কথা। মড়ার ওপরে খাঁড়ার আঘাতের মতো পেল্লাই সাউন্ড বক্সের শব্দের দৌরাত্ম্যও কিছু কম ছিল না বিধাননগর কমিশনারেট এলাকায়।
কালীপুজোর রাতে শব্দের দাপট খানিকটা কম থাকলেও ২৪ ঘন্টার মধ্যেই দেওয়ালির রাতে কী করে ছবিটা বদলে গেল তার উত্তর মেলেনি বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের তরফ থেকে। পুলিশের অবশ্য দাবি, তাঁরা কালীপুজোর মতোই দীপাবলির রাতেও সক্রিয় ছিলেন।
গত কয়েক বছর ধরেই কালীপুজোর বদলে দীপাবলির রাতে সল্টলেক, লেক টাউন, বাগুইআটি থেকে শুরু করে নিউ টাউনের কিছু অংশে শব্দবাজি ফাটানোর প্রবণতা বেশি। অভিযোগ, এ বারেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। বাসিন্দাদের একাংশের কথায়, রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত বাজির শব্দে কান পাতা দায় হয়েছিল। ভাবা গিয়েছিল যে, রাত ১০টার পরে পরিস্থিতির বদল ঘটবে। কিন্তু তা হয়নি বলেই বাসিন্দাদের অভিযোগ।
লেক টাউন, বাগুইআটি, বিধাননগর উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণ থানা এলাকার বাসিন্দারা জানান, কালীপুজোর রাতে শব্দবাজির দাপট কম থাকায় তাঁরা আশার আলো দেখেছিলেন। কিন্তু দীপাবলির রাতে পরিস্থিতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়েছিল। বাঙুর, দমদম পার্ক, বাগুইআটি, কেষ্টপুর, সল্টলেকের একাধিক ব্লকের বাসিন্দাদের অভিযোগ
যদিও পুলিশ জানিয়েছে, থানায় লিখিত অভিযোগ তেমন ভাবে আসেনি। যে ক’টি অভিযোগ এসেছে প্রতি ক্ষেত্রে পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে। ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছে।
বাসিন্দাদের এমনও অভিযোগ, দীপাবলির রাতে অনেক জায়গাতেই বড় পুজো মণ্ডপ চত্বর থেকে শব্দবাজি ফেটেছে। কিন্তু শাসক দলের নেতা কিংবা তাঁদের ঘনিষ্ঠরা সেই সব পুজোর সঙ্গে জড়িত থাকায় পুলিশ সেখানে সক্রিয়তা দেখাতে পারেনি। পুলিশের উপস্থিতিতেই ওই সব জায়গায় রাত দশটার পরে বাজি ফেটেছে বলে অভিযোগ। অবশ্য পুলিশ সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
পুলিশ কর্তাদের একাংশের দাবি, গতবারের তুলনায় বাজির দাপট এ বারে অনেকটা কমানো গিয়েছে। পুজোর আগে থেকেই নিষিদ্ধ শব্দবাজি বাজেয়াপ্ত করার অভিযান, সচেতনতার প্রচার এবং কড়া পদক্ষেপের কারণেই তা সম্ভব হয়েছে।
এক কর্তার কথায়, ‘‘যে ভাবে এই বছরে তৎপরতা শুরু হয়েছে তাতে আগামী কয়েক বছরে সমস্যা আরও কমে যাবে।’’