ফাইল চিত্র।
প্রশাসনের নির্দেশে সরকারি স্কুলে গরমের ছুটি পড়ে গিয়েছে ২ মে থেকে। বেসরকারি স্কুলগুলির একাংশও ২ মে থেকে গরমের ছুটি ঘোষণা করেছিল। কিছু স্কুল আবার গত সপ্তাহের প্রবল গরমে সাময়িক ছুটি দিয়ে অনলাইন ক্লাসে ফিরে গিয়েছিল। তবে বৃষ্টির জেরে চলতি সপ্তাহে আবহাওয়া ভাল হয়ে যাওয়ায় তারা ফের ফিরে গিয়েছে অফলাইন ক্লাসে। আবহাওয়ার উন্নতি হওয়া সত্ত্বেও সরকারি সিদ্ধান্তের অবশ্য কোনও পরিবর্তন হয়নি। ফলে সরকারি স্কুল বন্ধই রয়েছে। প্রধান শিক্ষকদের সংগঠন ‘অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস’-এর রাজ্য সম্পাদক চন্দন মাইতি থেকে শুরু করে বেশ কিছু স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের মতে, ‘‘আবহাওয়ার উন্নতি হওয়ায় যদি চলতি সপ্তাহটাও স্কুল খোলা রাখা যেত, তা হলে পড়ুয়ারা অনেকটাই উপকৃত হত। সে ক্ষেত্রে প্রথম সামগ্রিক মূল্যায়নের পরীক্ষা দিয়ে গরমের ছুটি পেত তারা। আবহাওয়ার উন্নতির পরেও গরমের ছুটি নিয়ে সরকারের অনড় মনোভাব সরকারি স্কুলের পড়ুয়াদের পিছিয়ে দিল অনেকটাই।’’
মডার্ন হাইস্কুল ফর গার্লসের ডিরেক্টর দেবী কর জানালেন, গত সপ্তাহে প্রচণ্ড গরমে তাঁদের স্কুল দু’দিন ছুটি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সোমবার থেকে আবহাওয়ার পরিবর্তন হতেই স্কুলে ফের অফলাইন ক্লাস চালু হয়েছে। দেবী কর বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলে যেমন ১৪ তারিখ থেকে গরমের ছুটি পড়ার কথা ছিল, তেমনই পড়বে। তবে স্কুলের সময়টা কিছু কমেছে।’’ তাঁর মতে, গত দু’বছরে করোনা অতিমারিতে পড়ুয়াদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। তাই এখন যতটা সম্ভব অফলাইনেই ক্লাস করানো হচ্ছে।
আবহাওয়ার উন্নতি দেখে দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে স্কুল খুলে দিয়েছে সাউথ পয়েন্টও। তীব্র গরমের জেরে গত সপ্তাহে তারাও কয়েক দিন স্কুল বন্ধ রেখেছিল। সাউথ পয়েন্টের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য কৃষ্ণ দামানি বলেন, ‘‘গরম কম বলে এখন স্কুল খোলা রয়েছে। আবার বেশি গরম পড়লে স্কুল বন্ধ করা হতে পারে। তবে স্কুলের নির্ধারিত গরমের ছুটি না পড়া পর্যন্ত অনলাইন ক্লাস চলবে। গরমের ছুটি নিয়ে সরকারি যে বিজ্ঞপ্তি রয়েছে, তা-ও বিবেচনা করা হচ্ছে।’’ আবহাওয়া ভাল হওয়ায় অফলাইন ক্লাসে ফিরে এসেছে ক্যালকাটা গার্লসও। স্কুলের অধ্যক্ষা বাসন্তী বিশ্বাস বলেন, ‘‘আবহাওয়ার উন্নতি হওয়ায় স্কুল খুলিয়ে অফলাইন ক্লাস করালাম গত দু’দিন ধরে। আগামী কয়েক দিন গরমের গতিপ্রকৃতি দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
ডিপিএস রুবি পার্ক কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, গরম বেশি পড়লেও তাঁদের স্কুলে পড়াশোনায় কোনও ছেদ পড়েনি। কিছু শ্রেণি অফলাইনেই ক্লাস করছে। সিবিএসই-র পরীক্ষা চলায় পরীক্ষার দিনগুলিতে আবার অনলাইন ক্লাসও হচ্ছে। সেই সঙ্গে ‘হাইব্রিড মোড’-এও ক্লাস করার সুযোগ আছে পড়ুয়াদের। তাঁদের গরমের ছুটি নির্ধারিত দিনেই পড়বে।
সরকারি স্কুলের পড়ুয়াদের অভিভাবকদের একাংশের প্রশ্ন, একই শহরে থেকে কিছু বেসরকারি স্কুলের পড়ুয়া অফলাইনে ক্লাস করছে, অথচ সরকারি স্কুলের পড়ুয়ারা বাড়িতে বসে রয়েছে— এই বৈষম্যের কারণ কী? এই ধরনের দীর্ঘ ছুটির জেরে পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ছে সরকারি স্কুলের পড়ুয়ারা। মিত্র ইনস্টিটিউশনের (ভবানীপুর শাখা) এক পড়ুয়ার অভিভাবকের কথায়, ‘‘সরকারি স্কুলে এই দীর্ঘ ৪৫ দিনের গরমের ছুটিতে অনলাইন ক্লাসও তো হবে না। তা হলে পড়ুয়াদের টিউশন-নির্ভর পড়াশোনা ছাড়া গতি কী? কিন্তু সকলের কি সেই সামর্থ্যও আছে?’’