প্রতীকী ছবি।
ডিজিটাল রেশন কার্ড, আমপানের ত্রাণ, করোনা পরীক্ষা থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ের একগুচ্ছ দাবিদাওয়া নিয়ে মঙ্গলবার বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস একযোগে বিধাননগর পুরসভা অভিযানের ডাক দিয়েছিল। সেই মতো এ দিন তারা পুরসভার সামনে বিক্ষোভ দেখায়। পরে তাদের প্রতিনিধিরা মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তীর কাছে ১৫ দফা দাবি সংবলিত একটি স্মারকলিপি জমা দেন। এ দিনের এই অভিযানকে ঘিরে অবশ্য দূরত্ব-বিধি ভেঙে ভিড় জমানোর অভিযোগ উঠেছে ওই নেতাদের বিরুদ্ধে।
বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের দাবি, আবেদন করেও যাঁরা এখনও ডিজিটাল রেশন কার্ড পাননি কিংবা যাঁদের রেশন কার্ড নেই, তাঁরাও যাতে রেশন পান, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি, যাঁরা রেশনের টোকেন পেয়েছেন, তাঁদের নাম প্রকাশ করতে হবে। তাঁদের আরও দাবি, আমপানে বিপর্যস্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে পুরসভাকে। এ ছাড়া, ওই সমস্ত এলাকায় করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। আক্রান্তদের চিকিৎসার ব্যবস্থাও করতে হবে বলে দাবি তাঁদের।
ওই সমস্ত দাবির পাশাপাশি পুর বাজারগুলি নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করা, পুর হাসপাতালে অবিলম্বে ফিভার ক্লিনিক চালু করা, প্রতিটি ওয়ার্ডে পরিস্রুত পানীয় জল ও নিকাশির ব্যবস্থা করার মতো দাবিও তোলা হয়েছে।
সিপিএম নেতা পলাশ দাসের কথায়, ‘‘এ দিন রাজ্য জুড়ে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানানো হয়েছে। করোনা মোকাবিলায় পর্যাপ্ত সময় পেয়েও স্বাস্থ্য পরিকাঠামো তৈরি করতে পারেনি সরকার। আমপানের ক্ষতিপূরণ থেকে মানুষের হাতে রেশন পৌঁছে দেওয়া— বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতি দেখা গিয়েছে। এ সব ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনকেই ব্যবস্থা নিতে হবে।’’ কংগ্রেস নেতা কাবু বাগুই জানান, রেশন কার্ডের আবেদন করে অনেকে এসএমএস পাচ্ছেন। কিন্তু কার্ড হাতে পেতে তাঁদের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে হচ্ছে। আর এক কংগ্রেস নেতা শেখ নাজিমুদ্দিন জানান, কার্ড না থাকায় বহু মানুষ রেশন পাচ্ছেন না।
যদিও বাম-কংগ্রেসের অভিযোগ খারিজ করে তৃণমূল নেতাদের একাংশের দাবি, সল্টলেক থেকে রাজারহাট-গোপালপুরে রাস্তা, পানীয় জল ও নিকাশির প্রচুর কাজ হয়েছে। করোনা কিংবা আমপানের পরে কাউন্সিলর থেকে দলীয় নেতারা প্রতিদিন পথে নেমে মানুষের কাজ করেছেন। ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা হচ্ছে।
মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী জানান, বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের তরফে কিছু দাবি জানানো হয়েছে। দাবিগুলির সব ক’টি পুরসভার এক্তিয়ারভুক্ত নয়। ঝড়ে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। তাঁর দাবি, সর্বতোভাবে মানুষের জন্য কাজ করা হচ্ছে। পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা হতেই পারে। তা সমাধানের চেষ্টা চলছে। কিন্তু দুর্নীতি বা কাজ না-করার অভিযোগ ভিত্তিহীন।
এ দিকে, বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের পুর অভিযানকে ঘিরে বহু মানুষ এ দিন রাস্তায় জড়ো হন। করোনা পরিস্থিতিতে ওই জমায়েত দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এলাকার বাসিন্দারা। মেয়রের কথায়, ‘‘করোনা বাড়ছে। এই অবস্থায় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা দায়িত্বশীল ভূমিকা নেবেন, এটাই প্রত্যাশা।’’
এ দিন বিক্ষোভ চলাকালীন আটকে পড়েন ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাণীব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, বাড়ি ফেরার পথ আটকেই সভা চলছিল। স্টিকার থাকা সত্ত্বেও আটকানো হয় তাঁর গাড়ি। অভব্য আচরণও করা হয়। পরে অবশ্য স্থানীয় এক বামকর্মী তাঁকে চিনতে পেরে ভিড় সরিয়ে দেন।
বাম-কংগ্রেস নেতাদের দাবি, দূরত্ব-বিধি মেনেই সভা চলছিল। সেখান দিয়ে কাউন্সিলর গাড়ি নিয়ে যেতে চাইলে অনেকে আপত্তি করেন। অভব্য আচরণের অভিযোগ ঠিক নয়।