দফতরের দায়িত্ব সংক্রান্ত এই বিজ্ঞপ্তি ঘিরেই শুরু হয়েছে বিতর্ক।
রাজ্যে নির্বাচিত পুর বোর্ডগুলি সবেমাত্র তৈরি হয়েছে। জানানো হয়েছে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের নাম। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চেয়ারম্যান পরিষদ গঠন হয়নি, বণ্টন হয়নি দফতরও।
এই অবস্থায় নজিরবিহীন ব্যতিক্রম ঘটিয়ে দক্ষিণ দমদম পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই দত্তকে ছ’টি গুরুত্বপূর্ণ দফতরের দায়িত্ব দিয়ে বিজ্ঞপ্তি বেরিয়ে গেল। যাতে সই রয়েছে পুর চেয়ারপার্সন কস্তুরী চৌধুরীর। এই বিজ্ঞপ্তি ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে পুর অন্দরে, উঠছে প্রশ্নও।
কী ভাবে এমন হল? সোমবার কস্তুরী বলেন, ‘‘যা হয়েছে, তা দলের নির্দেশ।’’ অন্য দিকে, রাজ্যের পুরমন্ত্রী তথা তৃণমূলের শীর্ষ নেতা ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্য, ‘‘এটা নিয়মবিরুদ্ধ। এ ভাবে দফতর বণ্টন করা যায় না। চেয়ারম্যান পরিষদ গড়ার পরে বৈঠক ডেকে দফতর বণ্টন করতে হয়। তবে আমি এ সবের কিছু জানি না।’’যাঁকে ঘিরে বিতর্ক, সেই নিতাই দত্ত বিধাননগরের বিধায়ক তথা মন্ত্রী সুজিত বসুর ‘ছায়াসঙ্গী’ বলে পরিচিত। সূত্রের খবর, নিতাইয়ের ভোটে লড়া থেকে ভাইস চেয়ারম্যান হওয়া পর্যন্ত প্রতি স্তরেই সুজিতের সক্রিয় ‘ভূমিকা’ ছিল। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী নিতাইকে দেওয়া হয়েছে পূর্ত, মূল্যায়ন ও সংগ্রহ, বিজ্ঞাপন, ট্রেড লাইসেন্স, লিগাল ম্যাটার্স এবং ভিজিল্যান্স দফতর। বিজ্ঞপ্তির কপিতে দেখা যাচ্ছে, দফতর বণ্টনের ওই নির্দেশনামায় ২৫ মার্চ সই করেছেন চেয়ারপার্সন।
উল্লেখ্য, এ বারই প্রথম কাউন্সিলর হয়েছেন নিতাই। ফলে এই ধরনের কাজে তাঁর পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে, তা বলা যাবে না। সে ক্ষেত্রে কেন একক ভাবে তাঁকে আগাম বেছে এতগুলি দফতর দেওয়া হল, প্রশ্ন উঠেছে সেখানেই। সাধারণত বিভিন্ন পুরসভায় যে সব দফতরের কাজ নিয়ে সব চেয়ে বেশি প্রশ্ন, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ শোনা যায়, সেগুলির প্রায় সবই দেওয়া হয়েছে নিতাইকে। সেই সঙ্গেই তাঁর হাতে রয়েছে ভিজিল্যান্স। যার একটি বড় কাজ দুর্নীতি দমন।
এ বারের পুর নির্বাচনে দক্ষিণ দমদমেও বিপুল আধিপত্যে জিতেছে তৃণমূল। এই অবস্থায় এক জন কাউন্সিলর ভাইস চেয়ারম্যান হওয়ার পরেই তাঁকে ‘বিশেষ
ক্ষমতাশালী’ করে তুলতে এত তৎপরতার পিছনে কে এবং কেন, তা নিয়ে স্থানীয় তৃণমূলের মধ্যেই প্রশ্ন রয়েছে।
রবিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্নীতি দমনে যে নতুন পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেছেন, তাতে দক্ষিণ দমদমের এই ঘটনাটি তাৎপর্যপূর্ণ মাত্রা পেতে পারে কি না, চর্চা শুরু হয়েছে তা নিয়েও। বিশেষত মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এমন কাজকে ‘অনুচিত’ বলার পরে, তা আরও অর্থবহ হয়েছে।
কস্তুরী অবশ্য দাবি করেছেন, তিনি নিজে সব দফতরের উপরে নজর রাখবেন। যদিও শুধু এক জনকে ‘ক্ষমতা’ দিতে কেন তড়িঘড়ি এই সিদ্ধান্ত, তার যুক্তিগ্রাহ্য ব্যখ্যা চেয়ারপার্সনের থেকে মেলেনি।