গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।
মাত্র ১০ মিনিট ফোনে কথা। তাতে খুব একটা চিঁড়ে ভেজেনি। ফলে বেজায় মন খারাপ কর্নেল পদ মর্যাদার এক সেনা অফিসারের।
অল্প বয়স, দেখতে শুনতে ভাল এমন কোনও রূপসীর সঙ্গে বন্ধুত্ব করিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, ‘পরিষেবা’ প্রদানকারী এক কলসেন্টার থেকে। তার জন্য রেজিষ্ট্রেশনের নামে মোটা টাকাও নিয়েছিল তাঁরা। কিন্তু কোথায় কী? দেখা হওয়া তো দূর, ফোনে মাত্র দশ মিনিট কথা! তার জন্য ৫০ হাজার টাকা গচ্চা!
এই ‘অপমানের’ পর অগ্নিশর্মা হয়ে সেনা অফিসার কলসেন্টারে ফোন করে ধমকাতে যাচ্ছিলেন, এমন সময় উল্টে কলসেন্টার থেকে তাঁকে বলা হল, আপনার বয়স বেশি। দেখতেও ভাল না। যিনি আপনাকে ফোন করেছিলেন, তিনি ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপে আপনার ছবি দেখেছেন। সে কারণেই এই দশ মিনিটের পরিষেবা! এ কথা শুনে তাজ্জব হয়ে গিয়েছিলেন কর্নেল। অগত্যা, তাই বিষয়টি চেপে গিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: লাদেনকে খুঁজে বার করেছিল যে বেলজিয়ান মালিনয়েজ, এ বার আনা হচ্ছে নবান্নের নিরাপত্তায়
এ ভাবেই কর্নেল থেকে ব্যবসায়ী। রিকশাচালক থেকে কলেজের পড়ুয়া— বন্ধুত্ব পাতানোর ফাঁদে পড়ে বহু মানুষ খোয়াচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। দক্ষিণ কলকাতার সাউথ সিটি মলের কাছে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে চলছিল এমনই একটি কলসেন্টার। আট থেকে আশি, পুরুষ থেকে মহিলা, কালো থেকে ফর্সা, যেমন চাইবেন, তেমন বয়সি পুরুষ অথবা মহিলার সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছিল ওই কলসেন্টারের তরফে। অবশেষে ওই প্রতারণা চক্রের ছয় পান্ডাকে যাদবপুর থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করলেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা।
আরও পড়ুন: আদালতের ভিতরেই বিচারককে লক্ষ্য করে জুতো, ফের হামলার চেষ্টা আইএস জঙ্গি মুসার
ধৃতদের মধ্যে দু’জন তরুণীও রয়েছে। নাম মিলি প্রধান এবং মৌসুমী বিশ্বাস। বাকি অভিযুক্তরা সঞ্জয় দাস, তাপস পাত্র, স্বপনকুমার ওঝা। এই চক্রে আর কারা জড়িত রয়েছে তার সন্ধার চলছে। এক গোয়েন্দা আধিকারিকের কথায়, “গ্রেফতারের পর যখন জানলাম, কারা এই প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন, তা শুনে অবাক হতে হয়। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষই ফাঁদে পড়ছেন। এমনকি এক জন কর্নেলও এ ভাবে ৫০ হাজারা টাকা দিয়েছেন। ভাবা যায়!”
আর এক অফিসারের বলেন, “ফোনে এসএমএস, হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ, আবার কখনও ফোন করেও বন্ধুত্ব পাতানোর কথা বলা হয়। আগে গ্রাহকের নাম-ধাম, কী করেন, জানতে চাওয়া হয়। সেই বুঝে ফাঁদ পাতে প্রতারকেরা।”