Sex Workers

Supreme Court of India: ‘আদালতের কথা কি সবাই বিশ্বাস করেন? সংসারে টাকা দিলেও সেখানে আমার সম্মান নেই’

বুধবার সর্বোচ্চ আদালতে বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাওয়ের বেঞ্চ মন্তব্য করেছে, যৌনকর্মী ও তাঁদের সন্তানদেরও মানুষের মর্যাদা পাওয়ার অধিকার রয়েছে।

Advertisement

চৈতালি বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০২২ ০৭:২৬
Share:

ফাইল চিত্র।

যৌনকর্মীদের সাংবিধানিক অধিকার প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছে সুপ্রিম কোর্ট। আর তার পরেই নিজেদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সরব হয়েছেন কলকাতার যৌনকর্মীরা।

Advertisement

বুধবার সর্বোচ্চ আদালতে বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাওয়ের বেঞ্চ মন্তব্য করেছে, যৌনকর্মী ও তাঁদের সন্তানদেরও মানুষের মর্যাদা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। আদালতের ওই মন্তব্যের পরেই প্রশ্ন উঠেছে, এই নির্দেশের বাস্তবায়ন কি সম্ভব? শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ মেনে নিয়ে যৌনকর্মীদের উপরে পুলিশের শারীরিক-মানসিক নির্যাতন কি আদৌ বন্ধ হবে?

কালীঘাটের যৌনপল্লিতে থাকা অধিকাংশ মহিলা যৌনকর্মীরই গড় বয়স পঞ্চাশের কোঠায়। এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করা, এক পুরুষ যৌনকর্মী রবি দাস (নাম পরিবর্তিত) বললেন, ‘‘দ্বিতীয় প্রজন্মের কেউ এখানে থাকতে চায় না, পড়াশোনা করে অন্যত্র যেতে চায়। যৌনকর্মীদের মেয়েরাও এই পেশায় আসেন না। এখানে মূলত যে মায়েরা থাকেন, তাঁরাই কাজ করেন। পুলিশ হানা দিয়ে খদ্দেরদের তুলে নিয়ে গেলে সেই মায়েদের ব্যবসা মার খায়।’’

Advertisement

বছর ১৫ বয়সে যৌনপল্লিতে আসা আসিনা বেগম (নাম পরিবর্তিত) এখন প্রৌঢ়া। বললেন, ‘‘বিয়ে হয়েছিল ডায়মন্ড হারবারে। স্বামী মারধর করত। তাই পালিয়ে কলকাতায় চলে আসি কাজের খোঁজে। পরে যৌনকর্মী হই। আমার দুই ছেলেমেয়ে। মেয়েটার তিন কন্যা। ওর স্বামীও ওকে ছেড়ে দিয়েছে। নাতনিদের হস্টেলে রেখে স্কুলে পড়ানোর খরচ টানতে মা-মেয়ে এখন এই পেশাতেই।’’

তিনি বলেন, ‘‘লকডাউনে নাতনিরা বাড়ি চলে আসায় কাজ বন্ধ রেখেছিলাম। তখন কোভিডের ভয়ে ব্যবসায় মন্দা চলছিল। পরে অবস্থার উন্নতি হলেও শুরু হল পুলিশি অত্যাচার। কাস্টমারদের ধরে নিয়ে যায়, মিথ্যে মামলায় জেলে ভরে দেয়। এ রকম করলে ব্যবসা হবে কী ভাবে!’’

পাশে বসা ষাটোর্ধ্ব যৌনকর্মী লতিকা মণ্ডল (নাম পরিবর্তিত) বলতে থাকেন নিজের কথা— বাঁকুড়ার মেয়ে, ১৩ বছরে বিয়ে। স্বামীর বাড়ি গিয়ে প্রথম পক্ষের স্ত্রী-পুত্রের কথা জেনে পালিয়ে কলকাতায় কাজ খুঁজতে আসা। অবশেষে যৌনকর্মীর পেশায় থিতু হওয়া। লতিকা বলেন, ‘‘আদালতের কথা কি সবাই বিশ্বাস করেন? আমার নিজের বাড়িতেই তা হলে ১২ বছর পরে ফিরতে হত না। ভাইয়েরা এখন আমার রোজগারের টাকা নেয়, কিন্তু গ্রামের লোককে জানায় না। সংসারে টাকা দিলেও সেখানে আমার কোনও সম্মান নেই।’’

আসিনা-লতিকাদের কথাতেই উঠে এল, কী ভাবে রাতের শহরে রাস্তায় দাঁড়ানো যৌনকর্মীদের সঙ্গে পুলিশি ঝামেলা চলে। কখনও সখনও থানায় তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, ফাঁসানো হয় মিথ্যে মামলায়। লতিকার কথায়, ‘‘উকিল যা শিখিয়ে দেন, আদালতে তা-ই বলি। রাতে রাস্তায় না দাঁড়ালে খাব কী! সরকার বিকল্প ব্যবস্থা করলে আমরাও এই পেশা ছেড়ে দেব। কিন্তু তত দিন তো এটাই রোজগারের পথ।’’

তবে দু’জনেই মানলেন, অনেক সময়ে খদ্দেরের হাতেও শারীরিক-মানসিক নিগ্রহের শিকার হন ওঁরা। লতিকা বলেন, ‘‘টাকার পরিমাণ নিয়ে আগে কথা হয়ে গেলেও পরে তা দিতে চান না অনেকে। তখন মারধর, রক্তারক্তি কাণ্ড হয়। পুলিশের কাছে গেলেও তত ক্ষণে হয়তো পালিয়েছেন সেই ব্যক্তি। অনেকে আবার কিছু পছন্দ না হলেই মারধর করেন।’’

সোনাগাছিতে যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতি’র প্রাক্তন সেক্রেটারি তথা মেন্টর ভারতী দে বলছেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টে যৌনকর্মীদের অধিকার নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তাঁদের কাজকে পেশা হিসেবে মেনে নিয়ে সম্মান দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে— এটাই বড় পাওনা। এ নিয়ে আইন হলে আরও খুশি হব।’’ তাঁর দাবি, স্বেচ্ছায় এই পেশায় আসা মেয়েদের হোমে নিয়ে যাওয়া বন্ধ করা হোক। বন্ধ হোক পুলিশ-প্রশাসনের অত্যাচার। তাঁর কথায়, ‘‘পাচার আর পেশা গুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। নাবালিকাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা তো আমরাই করি।’’

স্বাস্থ্য-সুরক্ষায় ব্যবহৃত সামগ্রীকে (যেমন কন্ডোম) যৌনকর্মীর অপরাধের প্রমাণ হিসেবে পেশ করায় আপত্তি জানিয়ে শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণের সঙ্গেও একমত ভারতী। বলছেন, ‘‘যৌনকর্মীদেরও স্বাস্থ্য-সুরক্ষার অধিকার রয়েছে। সরকার এ নিয়ে প্রচার করুক।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement