সল্টলেকে এ ভাবে কাটা হয়েছে একাধিক গাছ। —নিজস্ব চিত্র।
শারদোৎসবের বাহারি আলোকসজ্জা যাতে গাছগাছালির আড়ালে ম্লান না হয়ে যায়, তার জন্য পুজোর মুখে কলকাতা ও লাগোয়া এলাকায় ডালপালা ছাঁটার ঘটনা নতুন নয়। তবে এ বার সেই অভিঘাত অনেক ক্ষেত্রেই নেমে আসছে গাছের গোড়ায়। সমূলে বৃক্ষ নিধন নিয়ে অন্তত ৩৭টি পুজো কমিটির বিরুদ্ধে কলকাতা, ব্যারাকপুর পুরসভা এবং চন্দননগর ও বিধাননগর পুর নিগমে ইতিমধ্যেই নালিশ জানিয়েছে কয়েকটি পরিবেশপ্রেমী সংগঠন। তাদের আরও অভিযোগ, শুধু পুজোর জৌলুসে বাদ সাধার জন্য নয়, বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং আড়াল করার ‘খেসারত’ দিতে হয়েছে বহু গাছকে। এই ঘটনাকে ‘পরিবেশ অপরাধ’ বলছেন রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন মুখ্য আইন অফিসার বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়।
সোনারপুর পুর এলাকার ফরতাবাদে হোর্ডিং আড়াল হচ্ছিল বলে গাছ কাটা হয়েছে, জানালেন স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি গোপাল দাস। ইএম বাইপাসের সম্প্রসারিত ওই অংশে শিরিষ, বকুল, কৃষ্ণচূড়া, মোহনচূড়ার মতো অজস্র গাছ ছিল। গোপাল বলছেন, ‘‘ঝলমলে হোর্ডিংয়ে বাদ সাধছিল বলেই গাছগুলি কাটা হয়েছে। এ ছাড়া অন্য কোনও কারণ নেই।’’ তাঁর অভিযোগ, পুলিশ এবং বন দফতরে অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও ফল মেলেনি। নরেন্দ্রপুর থানা অবশ্য তদন্ত শুরু করেছে। যদিও দক্ষিণ ২৪ পরগনা বন বিভাগের সাড়া মেলেনি।
প্রায় একই ঘটনার সাক্ষী নিউ টাউন। দিনকয়েক আগে সেখানে অন্তত ৭০টি চন্দন, কাঞ্চন এবং বয়ড়া গাছের উপরে কোপ পড়েছে। স্থানীয় ‘ফোরাম ফর নেচার’-এর অভিযোগ, বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং ঢেকে যাচ্ছিল বলেই গাছ কাটা হয়েছে। এ-ও অভিযোগ, নিউ টাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এনকেডিএ) কিংবা বন দফতর গাছ কাটার কারণ খতিয়ে দেখার চেষ্টাই করেনি। যদিও এনকেডিএ-র এক কর্তা বলেন, ‘‘কিছু গাছ কাটা হয়েছে শুনেছি। তবে কেউ অভিযোগ করেননি।’’ ফোরামের এক কর্তা বলেন, ‘‘স্মার্ট সিটির তকমা পেলেই হয় না। তাকে লালন করা প্রশাসনের দায়িত্ব। সে দায়িত্ব যথাযথ পালন না করলে স্মার্ট সিটির তকমাও প্রত্যাহার করাই দস্তুর, সে খেয়াল এনকেডিএ-র আছে তো?’’
বিশ্বজিৎ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘গাছ কাটার ঘটনায় কলকাতা হাই কোর্টে ইতিমধ্যেই বারকয়েক ভর্ৎসিত হয়েছে রাজ্য প্রশাসন। ছাঁটাইয়ের নামে গাছ কাটা কিংবা বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং বাঁচাতে বৃক্ষ নিধনের দায় রাজ্যকেই নিতে হবে।’’