নষ্ট হয়ে গিয়েছে গাছ। মোহরকুঞ্জে। নিজস্ব চিত্র
বছর পনেরো আগে ভিক্টোরিয়ার কাছে রবীন্দ্র সদন সংলগ্ন একটি পার্ক তৈরি করেছিল কলকাতা পুরসভা। সবুজ গাছগাছালি দিয়ে পরিকল্পিত ভাবে মুড়ে ফেলা হয়েছিল উদ্যানটি। এক বেসরকারি সংস্থাকে উদ্যান দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ওই সংস্থার তরফে দেশ-বিদেশ থেকে আনা বিভিন্ন গাছের চারা বসানো হয়েছিল। কলকাতার বুকে অক্সিজেনের ভাণ্ডার হয়ে উঠল এই উদ্যান। ভিতরে তৈরি হয়েছিল আলোর ঝরনাও। এখন বন্ধ হয়ে রয়েছে সেই ঝরনা। অনেক গাছই আর বেঁচে নেই। এমনই পরিস্থিতি মোহরকুঞ্জের।
২০০৫ সালের মে মাসে সিটিজেন্স পার্ক নামে এই উদ্যানের দ্বারোদ্ঘাটন করেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। কলকাতার মেয়র তখন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মরণে ২০০৭ সালের অক্টোবরে পার্কের নতুন নাম হয় মোহরকুঞ্জ। সেই ফলক বসান আর এক সঙ্গীতশিল্পী সুচিত্রা মিত্র।
কী কী গাছ ছিল সেখানে?
প্রথম যে সংস্থা ওই পার্ক দেখভালের দায়িত্ব পেয়েছিল, তার কর্ণধার সমর নাগ জানান, মায়ানমার, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা থেকে সিজালফেনিয়া, ফাইকাস লারাটা, টাবুবিয়া আরজেন্টিনা, কমবিটাম, কলভিলিয়া, সিলভার ওক, সাদা ও লাল চন্দন জাতীয় গাছ লাগানো হয়েছিল। তা ছাড়া ঊষা অরুণিমা, রেড ম্যাঙ্গো, সুরাইয়া ও আলফানসো জাতের আম গাছ এবং ১৮টি বিদেশি পাম গাছও সেখানে বসানো হয়েছিল।
পুরকর্মীদের কথায়, সে সবের অনেকগুলোই এখন নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তা যে অযত্নের কারণে, সেটা জানাতেও ভোলেননি তাঁরা। তাঁদের কথায়, ওই সব বিদেশি গাছ রক্ষা করতে যে ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার ছিল, তা করাই হয়নি। পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রথম সংস্থা গাছের যত্ন নিলেও, পরবর্তী সংস্থা তা বজায় রাখতে পারেনি।
মোহরকুঞ্জের এই অবস্থা প্রসঙ্গে মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমার বলছেন, ‘‘যে উদ্যোগ নিয়ে মোহরকুঞ্জ তৈরি হয়েছিল, পরিচালনার ঘাটতিতে তা কিছুটা ব্যাহত হয়েছে।’’ তিনি জানান, পার্কটি তৈরির পরে পরপর দু’বার দেখভালের জন্য হাতবদল হয়েছে। খামতি যে ছিল, সেখানেই প্রমাণ। বেশ কিছু মূল্যবান গাছ যে নষ্ট হয়েছে তা-ও জানান তিনি।
পুরসভা সূত্রের খবর, ২০১৪ সালের পরে প্রথম সংস্থার থেকে দায়িত্ব পায় অন্য সংস্থা। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের কাজ ঠিক মতো না হওয়ায় বছর
দুয়েক আগে নিজেদের হাতে দায়িত্ব নেয় পুর প্রশাসন। তবে এখনও
গাছের যত্ন নেওয়ায় খামতি অব্যাহত বলেই অভিযোগ করছেন পার্কে
আসা মানুষ।