খাওয়া-পড়া: মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে চলছে চোখ বোলানো। এক পরীক্ষার্থীকে খাইয়ে দিচ্ছেন মা। শুক্রবার, বেথুন স্কুলের সামনে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।
কাকভোরে শুরু হল পরীক্ষার প্রস্তুতি।
এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরুর সময় বেলা ১২টা থেকে এগিয়ে আনা হয়েছে সকাল পৌনে ১০টায়। তার ফলে প্রায় শেষ রাতে উঠে প্রস্তুতি শুরু করতে হয়েছে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। সাড়ে আটটা থেকে ন’টার মধ্যে পৌঁছতেই হবে, এমন লক্ষ্য রেখেই বেরিয়েছিলেন প্রায় সকলে। মায়েদের অনেকেরই আফসোস, তাড়াহুড়োয় না খেয়েই ছেলেমেয়েদের পরীক্ষার হলে ঢুকতে হয়েছে। আর ছেলেমেয়েরা বলল, ‘‘ভোরে উঠে পড়লেও শেষ মুহূর্তের পড়াটা মনের মতো হল না।’’
এ দিন ছিল প্রথম ভাষার পরীক্ষা। সকাল ন’টা নাগাদ বেথুন স্কুলের সামনে দেখা গেল, এক ছাত্রীকে টিফিন বক্স থেকে মুখে খাবার গুঁজে দিচ্ছেন মা। অনামিকা মল্লিক নামে ওই মহিলা বললেন, ‘‘ভোরে উঠে রান্না করেছি। মেয়ে তো কিছু খেয়ে যাবে। মেয়ে ভোর থেকে পড়েছে। পরীক্ষার আগেই তো ক্লান্ত হয়ে গেল!’’
ওই স্কুলের সামনে দাঁড়ানো অন্য অনেক অভিভাবকই জানালেন, তাঁরা কেউ উঠেছেন ভোর পাঁচটায়, কেউ সাড়ে চারটেয়। বালি থেকে আসা এক পরীক্ষার্থীর মা বললেন, ‘‘পরীক্ষার দিন ঘণ্টা দুয়েক মেয়েকে পড়তেই হয়। এ বার পরীক্ষা এত সকালে হওয়ায় পড়ার সময় নেই।’’ এক পরীক্ষার্থীর বাবা বলেন, ‘‘আমি থাকি উলুবেড়িয়ায়। ছেলে কলকাতার হস্টেলে থাকে। ছেলেকে পৌঁছতে ভোর পাঁচটায় বেরিয়েছি।’’
ভোরে গাড়ি পাওয়া যাবে কি না, সেই আশঙ্কায় অনেকে এসেছেন গাড়ি ভাড়া করে। হিন্দু স্কুলের সামনে কয়েক জন পরীক্ষার্থীর অভিভাবকেরা জানালেন, তাঁরা ঘটকপুকুর থেকে গাড়ি ভাড়া করে সাড়ে ছ’টায় বেরিয়েছেন। এক অভিভাবক বলেন, ‘‘ভোরে কুয়াশা ছিল না, সেটাই বাঁচোয়া।’’ কয়েক জন পরীক্ষার্থীর অভিভাবক হোলি চাইল্ড স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে জানালেন, দেড় হাজার টাকায় গাড়ি ভাড়া করতে হয়েছে।
তবে সকাল সকাল পরীক্ষা শুরু হওয়ায় খুশি অটোচালক সন্দীপ কুর্মি। মেয়ে স্নেহা কুর্মিকে বেথুন স্কুলের সামনে অটো থেকে নামিয়ে বললেন, ‘‘মেয়ে ভোরে উঠে পড়ে নিয়েছে। আগে পরীক্ষা শেষ হওয়ায় বাড়ি ফিরে আবার পড়ার সুযোগ পাবে।’’
এ দিন পরীক্ষা চলাকালীন বেলগাছিয়ার উর্দু হাইস্কুলের ছাত্রী সাবা সেলিম অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সাবার আসন পড়েছে উল্টোডাঙার সারদাপ্রসাদ ইনস্টিটিউট ফর গার্লসে। পরীক্ষা দেওয়ার সময়ে তার হাত কাঁপতে থাকে। স্কুল কর্তৃপক্ষ ঠিক করেন, সাবা উত্তর বলে দেবে। অন্য কেউ লিখে দেবেন। ছাত্রীটি তা-ও পেরে ওঠেনি। পর্ষদ জানিয়েছে, সে চাইলে আজ, শনিবার প্রথম ভাষার পরীক্ষা দিতে পারে।