দাবি: ঘুড়িতে দ্রুত নিয়োগের বার্তা লিখছেন চাকরিপ্রার্থীরা। সোমবার, মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির পাদদেশে। —নিজস্ব চিত্র।
ধর্মতলা চত্বরে মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির নীচে এসএসসি-র উচ্চ প্রাথমিক চাকরিপ্রার্থীদের হাতে নানা রঙের ঘুড়ি। সে সবে লেখা, ‘দ্রুত নিয়োগ চাই’। সেই ঘুড়ি তাঁরা আকাশে ওড়াতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ময়দান এলাকায় ঘুড়ি ওড়ানো বারণ বলে সেই ইচ্ছে পূরণ হল না তাঁদের। তবে শহরতলির যে সব জায়গায় ঘুড়ি ওড়ানো নিয়ে বিধিনিষেধ নেই, সেখানে ‘নিয়োগ চাই’ লেখা ঘুড়ি উড়ল। উচ্চ প্রাথমিকের ওই চাকরিপ্রার্থীরা জানালেন, প্রতিটা উৎসব-পার্বণ তাঁদের পথেই কাটে। এ বার বিশ্বকর্মা পুজোর দিনটাও তার ব্যতিক্রম হল না। তবে সঙ্গে অন্য রূপে থাকল বিশ্বকর্মা পুজোর অন্যতম আকর্ষণ— ঘুড়ি।
মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির পাদদেশে শুধু উচ্চ প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীরাই নন, বসে রয়েছেন এসএসসি-র প্রাথমিক, গ্রুপ-সি, গ্রুপ-ডি চাকরিপ্রার্থীরা এবং রাজ্য সরকারের গ্রুপ-ডি চাকরিপ্রার্থীরাও। তাঁরা জানাচ্ছেন, গত বারের মতো এ বারও হয়তো পুজোও তাঁদের ধর্না মঞ্চেই কাটবে। বিশ্বকর্মা পুজোয় ঘুড়ি ওড়ানোর মধ্যেও তাই রইল সেই বিষাদের আবহ।
উচ্চ প্রাথমিকের এক চাকরিপ্রার্থী সুশান্ত ঘোষ বলেন, ‘‘ময়দানে ঘুড়ি ওড়ানো নিষেধ, তা আমরা জানতাম না। ময়দান থানার পুলিশের পক্ষ থেকে বারণ করায় আমরা তাঁদের নির্দেশ মেনেছি। কিন্তু তত ক্ষণে আমাদের ঘুড়ির উপরে নিয়োগের দাবি নিয়ে লেখা হয়ে গিয়েছে। তাই আমরা ঘুড়ি হাতে নিয়ে প্রতীকী ভাবে উড়িয়েছি। তবে শহরতলিতে যে চাকরিপ্রার্থীরা নিয়োগের দাবি নিয়ে ঘুড়িতে লিখেছেন, তাঁরা সেই ঘুড়ি উড়িয়েছেন।’’ সুশান্তের কথায়, দীর্ঘ ন’বছর সাত মাস উচ্চ প্রাথমিকের নিয়োগ আটকে আছে। ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশে ১৩৩৩৪ জন প্রার্থীর মেধা তালিকা সম্প্রতি প্রকাশ করেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন। কিন্তু নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার শুনানি সম্পন্ন হয়নি। আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকায় এখনও কাউন্সেলিং শুরু হয়নি। এক চাকরিপ্রার্থী বলেন, ‘‘মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির পাদদেশে আমাদের ২৮৯ দিন কেটে গেল। দীর্ঘদিন বসে থাকতে থাকতে অনেকের মধ্যেই অবসাদ চলে এসেছে। বিশ্বকর্মা পুজোর দিন তাই ঘুড়িতে লিখে আর প্রতীকী ভাবে উড়িয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করলাম।’’ উচ্চ প্রাথমিকের আর এক চাকরিপ্রার্থী বলেন, ‘‘আমরাও কাটা ঘুড়ির মতো ঘুরে বেড়াচ্ছি গত ন’বছর ধরে। গোঁত্তা খেয়ে পড়েও উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা চলছে। বিশ্বকর্মা পুজোর দিনও আমরা এই বার্তাই পৌঁছে দিতে চেয়েছি প্রশাসনকে।’’