— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
কোথাও কাটছাঁট হয়েছে বাজেটে। পুজোর খাওয়াদাওয়া থেকে শুরু করে বাইরের শিল্পীদের এনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান— সবই বন্ধ রাখা হচ্ছে এ বছর। কোথাও আবার পুজোর আয়োজন হলেও সেখানেও থাকছে প্রতিবাদের স্বর। মণ্ডপ সাজছে ‘গুড টাচ, ব্যাড টাচ’-এর পোস্টার থেকে শুরু করে বিভিন্ন সচেতনতামূলক প্রচারে। থাকছে মেয়েদের আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণে জোরও। পুজো বন্ধ না করলেও আর জি কর-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে এ বছর পুজোর আয়োজনে রাশ টেনেছে শহরের একাধিক আবাসন।
আর জি কর মেডিক্য়াল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক-ছাত্রীর খুন এবং ধর্ষণের প্রতিবাদে গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে রাস্তায় নেমে চলেছে প্রতিবাদ। প্রায় প্রতিদিনই শহরে একাধিক মিছিল থেকে শুরু করে প্রতিবাদ সংগঠিত হচ্ছে। এই আবহে দুর্গাপুজোর জাঁকজমক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিভিন্ন মহল। আগেই শহরের একাধিক বারোয়ারি পুজো কমিটি অনুষ্ঠান কাঁটছাটের রাস্তায় হেঁটেছে। এ বার একই পথে হাঁটছে শহরের একাধিক আবাসনও।
আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদের রেশ টেনেই পুজোর মণ্ডপ সাজাচ্ছে রাজারহাটের ডিরোজিয়ো কলেজ সংলগ্ন কালী পার্কের একটি আবাসন। রাজস্থানের একটি প্রাসাদের
আদলে মণ্ডপ করার পরিকল্পনা থাকলেও আর জি করের ঘটনার পরে তা বাতিল করা হয়েছে। পরিবর্তে গ্রামবাংলার চিত্রে সাজিয়ে তোলা
হচ্ছে মণ্ডপ। সেখানে থাকছে ‘গুড টাচ, ব্যাড টাচ’ সংক্রান্ত একাধিক
পোস্টার। এ ছাড়া, মেয়েদের আত্মরক্ষায় পারদর্শী করতে বারুইপুরের একটি হোমের ৫০ জন কিশোরীকে ক্যারাটে প্রশিক্ষণ দেওয়ার দায়িত্ব নিচ্ছে আবাসনের
উৎসব কমিটি। কমিটির অন্যতম সদস্য অমিত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা কেউই চাইনি যে কোনও রকম জাঁকজমক বা উৎসব হোক। এ বছর আমরা বাইরের শিল্পীদের নিয়ে উৎসবও বন্ধ রাখছি।’’
পুজো হলেও এ বছর উৎসব বন্ধ রাখা হচ্ছে মুকুন্দপুরের একটি বহুতল আবাসনেও। বাইরের শিল্পীদের নিয়ে আসা বন্ধ করার পাশাপাশি আবাসনের বড়রাও এ বছর কোনও অনুষ্ঠান করবেন না বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। চার দিনের খাওয়াদাওয়াও সংক্ষিপ্ত করা হচ্ছে। এই আবাসনের পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা সুবীর বসাক বলেন, ‘‘এ বছরটা আর যা-ই হোক, উৎসব করার মতো অবস্থা নেই। পুজো তো আর বন্ধ করা যায় না, তাই পুজোর নিয়মে সেটা হবে। তবে বাকি সব কাটছাঁট করা হচ্ছে। চার দিনের পরিবর্তে শুধু অষ্টমীতে ভোগের আয়োজন করা হচ্ছে এ বছর।’’ একই পথে হেঁটেছে ই এম বাইপাসের রুবি মোড় সংলগ্ন একাধিক আবাসন।
আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে এক ধাক্কায় দুর্গাপুজোর বাজেট কমিয়েছে গড়িয়াহাট সংলগ্ন ম্যান্ডেভিলা গার্ডেন্সের একটি আবাসন। যে কোনও ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধ রাখা হচ্ছে। এমনকি, প্রতি বছর বিসর্জনে জাঁকজমকের ব্যবস্থা থাকলেও এ বার তা বাদ গিয়েছে। আবাসনের উৎসব কমিটির অন্যতম রঙ্গন কোলে বললেন, ‘‘এ বছর আমরা সব ধরনের অনুষ্ঠান কমিয়ে এনেছি। বাজেটও উল্লেখযোগ্য ভাবে কমানো হয়েছে। সেই জন্য আমরা সরকারি অনুদানও নিচ্ছি না।’’
তবে প্রতিবাদ জানালেও পুজো পুরনো নিয়মেই করা হবে বলে জানাচ্ছে শহরের একাধিক আবাসন। বায়না থেকে শুরু করে সমস্ত পরিকল্পনা মাস দুই আগে হয়ে যাওয়ায় তাতে কোনও বদল আনা হয়নি, জানাচ্ছেন উদ্যোক্তারা।
টালিগঞ্জের নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু রোডের একটি আবাসনের অন্যতম উদ্যোক্তা বললেন, ‘‘আমরাও নিজেদের মতো প্রতিবাদে শামিল হয়েছি। রাস্তায় থেকেছি। তবে পুজোর আয়োজন তো আগেই হয়ে গিয়েছে। তাই ইচ্ছা থাকলেও সেখানে বদল করা যাচ্ছে না। পুজোর নিয়মেই
পুজো হবে।’’