—প্রতীকী চিত্র।
গলায়, পায়ে মোটা চেন বাঁধা বাঁদরছানাকে কোলে নিয়েছেন এক তরুণী। কিন্তু বাঁদরটি ঝিমিয়ে পড়ে যাচ্ছে, চোখ বন্ধ। বাঁদরটির মুখ টেনে ধরে সোজা করার চেষ্টা করছেন তাকে দেখাশোনা করা এক ব্যক্তি। কারণ, বাঁদর কোলে নিয়ে তরুণীর ছবিটি ভাল হওয়া চাই!
শেক্সপিয়র সরণি থানা এলাকার অন্তর্গত, ক্যামাক স্ট্রিটের এক নাইটক্লাবে বাঁদর নিয়ে এই বিনোদনের ছবি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় নানা মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বন্যপ্রাণ রক্ষা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কয়েকটি সংগঠন পুলিশের কাছে ওই নাইটক্লাবের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ এফআইআর রুজু করেছে বলে সূত্রের খবর। তবু প্রশ্ন উঠছে, বিনোদনের জন্য বন্যপ্রাণের ব্যবহার যেখানে নিষিদ্ধ, সেখানে এমন ঘটে কী করে? পুলিশ বা বন দফতর কি কোনও নজরদারি চালায় না?
বন্যপ্রাণ রক্ষা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্তদের দাবি, শহরের একাধিক পানশালা, নাইটক্লাবে বিনোদনের নামে এমন ঘটে। জানাজানি হলে কিছু দিন আলোচনা হয়, তার পরে ফের যে-কে-সেই! আরও অভিযোগ, কোনও নাইটক্লাবে ম্যাকাও বেঁধে রেখে ‘থিম’ হিসাবে ব্যবহার হয়। তেল-ঝোলমাখা হাতে পাখির গায়ে-মাথায় হাত বোলানো, এমনকি যেমন খুশি খাবার খাওয়াতেও দেখা যায়। বন্যপ্রাণ রক্ষা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত চৈতালি ঘোষ বললেন, ‘‘কিছু পানশালা, নাইটক্লাবে পোষা নিষিদ্ধ পশুও ব্যবহার করা হয়। কুমিরছানা, কচ্ছপ তো থাকেই, অতীতে কোনও ক্লাবে হানা দিয়ে দেখা গিয়েছে, মত্তদের মধ্যে নিষিদ্ধ প্রজাতির মাকড়সা ছেড়ে রাখাও!’’
বন্যপ্রাণ রক্ষা নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে রাধিকা বসু বলেন, ‘‘যে কোনও বিনোদনের জন্য বন্যপ্রাণীর ব্যবহার নিষিদ্ধ। একান্তই ব্যবহার করতে হলে অ্যানিমাল ওয়েলফেয়ার বোর্ড অব ইন্ডিয়া থেকে লাইসেন্স নিতে হয়। নানা নিয়ম মেনে চলতে হয়। ওই নাইটক্লাবে কোনও নিয়মই পালন করা হয়নি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘প্রিভেনশন অব ক্রুয়েলটি টু অ্যানিম্যালস অ্যাক্ট, ১৯৬০ (পিসিএ) এবং পারফর্মিং অ্যানিম্যালস রেগুলেশন রুলস, ২০০১ অনুযায়ী নাইটক্লাবটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছে। একাধিক ধারায় মামলা হতে পারে।’’ ‘পিপল ফর এথিক্যাল ট্রিটমেন্ট ফর অ্যানিম্যালস’-এর (পেটা) দিল্লিতে নিযুক্ত আইনজীবী বলেন, ‘‘বাঁদর অত শান্ত দেখা যায় না। কলকাতার ওই ভিডিয়ো দেখে পশু চিকিৎসকদের ধারণা, ওকে কিছু খাওয়ানো হয়েছে, যাতে ঝিমিয়ে থাকে। এই ধরনের ড্রাগের ব্যবহার ক্ষতিকারক। পুলিশের দ্রুত কড়া পদক্ষেপ করা উচিত।’’
লালবাজার জানিয়েছে, ওই নাইটক্লাবের কর্তাদের ডেকে পাঠানো হয়েছে। আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ওই ক্লাবের অবশ্য দাবি, বাঁদরটি তারা আনেননি। ক্লাবে ঢোকার মুখে বাঁদর নিয়ে বসে ছিলেন কিছু লোক। ক্লাবে আগত ব্যক্তিদের কাছে বাঁদর দিয়ে রোজগার করেন তাঁরা। যদিও প্রশ্ন, নিরাপত্তারক্ষী থাকা সত্ত্বেও ক্লাব কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া বাঁদর নিয়ে কেউ কী ভাবে বসতে পারেন? এর উত্তর মেলেনি।