প্রতীকী ছবি।
পুজোর সময়ে হাফ ডজন বাংলা ছবি মুক্তি পাচ্ছে। বড় বাজেটের হিন্দি ছবিও আছে। অথচ সিনেমা হলে গিয়ে দেখা গেল, একটিও চলছে না। সব হলের ঝাঁপ ফেলা!
শহরে এমনই পরিস্থিতি তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ, ফিল্ম এগজ়িবিটরেরা সিনেমার টিকিটে সার্ভিস চার্জ বাড়াতে চান। এর ফলে টিকিটের দাম কিছুটা বাড়তে পারে। কিন্তু ফিল্ম এগজ়িবিটরদের তরফে খবর, রাজ্য সরকারের লিখিত সম্মতি না দেখাতে পারলে মুম্বই কিংবা বিদেশি ছবির ডিস্ট্রিবিউটরেরা সার্ভিস চার্জের বিষয়টি মানতে নারাজ। সে ক্ষেত্রে তারা সিনেমাই দেবে না বলে শোনা যাচ্ছে। বাংলার প্রযোজক-ডিস্ট্রিবিউটরদেরও একই পথে হাঁটতে পারেন বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ দিকে, চার্জ যোগ করার ব্যাপারে এগজ়িবিটরেরাও অন়়ড়।
আজ, শুক্রবারই মুক্তি পাচ্ছে বড় ব্যানারের দু’টি ছবি ‘সুই ধাগা’ এবং ‘পটাখা’। সরকারি তরফে কোনও মীমাংসা না হওয়ায় এগজ়িবিটরেরা এ নিয়ে এই সপ্তাহেই কোনও পদক্ষেপ করছেন না। এগজ়িবিটরেরা জানান, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে বিষয়টি জানানো হলে তিনি এখনই কোনও সিদ্ধান্ত নিতে নিষেধ করেছেন। তবে এগজ়িবিটরদের বক্তব্য, ৫ অক্টোবরের মধ্যে নিষ্পত্তি না হলে তাঁরাও ধর্মঘটের পথ নিতে পারেন।
এগজ়িবিটরদের বক্তব্য, সিনেমা হলের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এই সার্ভিস চার্জ অত্যন্ত জরুরি। মহারাষ্ট্র, গোয়া, গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে এই চার্জ নেওয়া হয়। কোথাও টিকিট পিছু ২০ টাকা, তো কোথাও ২৫ টাকা। সংশ্লিষ্ট সরকারের লিখিত সম্মতিতেই তা হয়। এ রাজ্যেও একটি সার্ভিস চার্জ নেওয়া হয়। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হলের ক্ষেত্রে ৫ টাকা, যে সব হলে ব্লোয়ার চলে সেখানে আড়াই টাকা এবং যেখানে পাখা চলে, সেখানে ২ টাকা। ২০০১ সাল থেকে এ ব্যবস্থা চলে আসছে। ইস্টার্ন ইন্ডিয়া মোশন পিকচার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ইম্পা) এগজ়িবিটর সেকশনের চেয়ারম্যান রতন সাহার বক্তব্য, ‘‘আমরা এটা যথাক্রমে ১০, ৫ এবং ৩ টাকা হারে বাড়াতে চাইছি। যে ভাবে দিন দিন খরচ বাড়ছে, তাতে এটা খুবই জরুরি।’’ ইম্পা-র এই সিদ্ধান্তের আওতায় কিন্তু মাল্টিপ্লেক্স পড়ছে না।
গত জানুযারি মাস থেকেই এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। সম্প্রতি নন্দনে এই সংক্রান্ত একটি বৈঠকও করেন এগজ়িবিটরেরা। সেখানে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস উপস্থিত ছিলেন। আলোচনায় ছিলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, শ্রীকান্ত মোহতা, নন্দনের সিইও মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সেখানে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সার্ভিস চার্জ বাড়ানোর বিষয়ে মৌখিক সম্মতি দেওয়া হয় বলে বৃহস্পতিবার জানান ইম্পা-র সভাপতি কৃষ্ণা দাগা। ‘‘বাংলার ডিস্ট্রিবিউটরদের সঙ্গে না হয় আমরা একটা বন্দোবস্ত করে নিলাম। কিন্তু সরকার লিখিত মঞ্জুরি না দিলে হিন্দি, ইংরেজি ডিস্ট্রিবিউটরেরা সার্ভিস চার্জে আপত্তি জানাচ্ছে। সার্ভিস চার্জ যোগ না করলে এগজ়িবিটরদের পক্ষে হল চালানো সম্ভব নয়। আগে বাংলায় ৬৮৫টি সিনেমা হল ছিল, এখন সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১৯২। আর যাতে সিনেমা হল বন্ধ না হয়, তার জন্য রক্ষণাবেক্ষণের খরচটা খুব জরুরি,’’ বক্তব্য ইম্পা-র সদস্য শ্যামল দত্তের।
বাংলার প্রযোজক এবং ডিস্ট্রিবিউটরেরা এই মুহূর্তে কোনও সিদ্ধান্তে যাচ্ছেন না। এখনই কোনও বাংলা ছবিও মুক্তি পাচ্ছে না। কিন্তু পুজোর আগে বিষয়টির নিষ্পত্তি না হলে বঞ্চিত হতে পারেন দর্শকেরা।