R G Kar Hospital Incident

পাশে কাউকে পাওয়া যাবে তো? নিরাপত্তাহীনতার ভয়েই বাড়ছে রাগ

সেক্টর ফাইভের তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদের একটি সংগঠন আবার দাবি করেছে, সব দিক থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত অনেকেই বাড়ি থেকে কাজ করতে চাইছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২৪ ০৮:০৬
Share:

খনও যেন ভয় আর আতঙ্কের ঘোর কাটিয়ে বেরোতে পারছে না শহর কলকাতা। —ফাইল চিত্র।

এক সপ্তাহের বেশি কেটে গিয়েছে। এখনও যেন ভয় আর আতঙ্কের ঘোর কাটিয়ে বেরোতে পারছে না শহর কলকাতা। রাতের জনজীবনের জন্য বিখ্যাত যে সব জায়গা, সেগুলি কার্যত ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে ন’টা বাজতে না বাজতেই। এর মধ্যেই স্বাধীনতা দিবসের রাতে অফিস থেকে বেরোতে অনেকটাই দেরি হয়েছিল পাঁচ নম্বর সেক্টরের একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী এক তরুণীর। নিজের মনোরোগ চিকিৎসককে তিনি জানিয়েছেন, রাত তখন ১১টা বেজে গিয়েছে। অফিস চত্বর প্রায় জনশূন্য। গাড়ি রাখা আছে যেখানে, সেই পার্কিং লটে পৌঁছে গাড়ি নিয়ে বেরোতে হবে। বহু বার এর চেয়েও বেশি রাতে গাড়ি নিয়ে ফেরার অভিজ্ঞতা থাকলেও সে দিন বুক কেঁপে গিয়েছিল ওই তরুণীর। তিনি বলছেন, ‘‘শুধু মনে হচ্ছিল, ওই অন্ধকারে ফাঁকা জায়গায় যদি কেউ লুকিয়ে থাকে? যদি অনেকে বেরিয়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে, কী করব? যদি হামলাকারী কোনও সহকর্মীই হন?’’ সে রাতে কোনও মতে বেরিয়ে এলেও আতঙ্ক পিছু ছাড়ছে না তাঁর।

Advertisement

কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আর জি করে এক পড়ুয়া-চিকিৎসককে খুন এবং ধর্ষণের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই মুহূর্তে এমনই গণ-আতঙ্ক তৈরি হয়েছে বলে মত মনোরোগ চিকিৎসকদের বড় অংশের। তাঁদের দাবি, আতঙ্কে যাঁরা ভুগছেন, তাঁদের বড় অংশই কর্মরত। অনেকেই কর্মক্ষেত্রে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করার দাবি জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন কর্তৃপক্ষকে। তাঁদের দাবি, আগামী ১০ অক্টোবর ‘বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস’। এ বছরের থিম— কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য। কিন্তু যদি নিরাপত্তাই না থাকে, তা হলে মানসিক স্বাস্থ্য ভাল থাকবে কী ভাবে?

সেক্টর ফাইভের তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদের একটি সংগঠন আবার দাবি করেছে, সব দিক থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত অনেকেই বাড়ি থেকে কাজ করতে চাইছেন। এই পরিস্থিতিতেই উঠে আসছে রাতের ডিউটিতে মহিলাদের কাজের সময় কমানোর সরকারি ভাবনাচিন্তার দিকটি। যার প্রতিবাদও হচ্ছে নানা মহল থেকে।

Advertisement

মনোরোগ চিকিৎসক রিমা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আর জি করের ঘটনাটি শুধু যে মহিলাদেরই নাড়িয়ে দিয়েছে, তা নয়। বহু পুরুষও সমান ভাবে আতঙ্কিত। যখন একটি খুন এবং ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, সেখানে পুরুষেরা মনে করেন, ধর্ষণের শিকার না হলেও খুন তো হতেই পারেন। তাই আলাদা করে মহিলাদের কাজের সময় কমানোর প্রশ্ন এটা নয়। বরং তাতে বিভেদ এবং সমস্যা বাড়বে। এর চেয়ে অনেক বেশি জরুরি সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।’’

গত এক সপ্তাহে সমাজমাধ্যমের বিভিন্ন পোস্ট বিশ্লেষণ করে সাইবার গবেষকদের একটি সংগঠন রিপোর্ট তৈরি করেছে। যা তারা পাঠাতে চলেছে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কাছে। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, এই মুহূর্তে সমাজমাধ্যমে সবচেয়ে বেশি পোস্ট করা হচ্ছে নিজের ভয়ের কথা। প্রাথমিক পর্যায়ে যে রাগ এবং ক্ষোভ প্রকাশ পাচ্ছে, তার আড়ালেই রয়েছে তেমন অভিজ্ঞতা। রিমা বলেন, ‘‘বহু ক্ষেত্রেই তীব্র রাগের আড়ালে থেকে যায় ভয়। এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতার ভয় এবং সেই ভয় কোথাও জানিয়ে প্রতিকার না পাওয়ার আতঙ্ক তীব্র রাগের সৃষ্টি করছে।’’

মনোরোগ চিকিৎসক দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘কর্মক্ষেত্রকে অনেকেই সুরক্ষিত বলে মনে করেন। যেটাকে মানুষ সুরক্ষিত ভাবছে, সেখানেই এমন ঘটলে সবচেয়ে বেশি ভয়ের ধাক্কা আসে। এখনও আমরা ভয়ের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছি। তদন্তে যত নতুন তথ্য উঠে আসবে, তত ভয় আরও বেশি করে ঘিরে ধরবে।’’

দেবাঞ্জনের দাবি, এই সময়ে ‘ফিয়ার অব মিসিং আউট’ বা কোনও গুরুতর তথ্য অজানা থেকে যাচ্ছে বলে মনে হতে শুরু করে। এই মনে হওয়া থেকে সর্বক্ষণ হয় সমাজমাধ্যম, নয়তো গণমাধ্যমের সামনে সময় কাটানো হয়। তাঁর কথায়, ‘‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সমাজমাধ্যমে প্রচারে সুরাহা তো মেলেই না, উল্টে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগলে কাউকে বলার মতো জায়গা নেই বলে যে ধারণা রয়েছে, সেটাই আরও চেপে বসে। করোনাকালেও এমন দেখা গিয়েছিল। ভাল পরিস্থিতি যে ফের তৈরি হতে পারে, সেই আশাই হারিয়ে ফেলেছিলেন অনেকে। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রশাসনের এমন পদক্ষেপ করা উচিত, যাতে মানুষ ভাল কিছুর আশা করতে পারেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement