Ultadanga Flyover

Ultadanga flyover: দ্বিতীয় বার ফাটল, ফের কি বন্ধের মুখে উল্টোডাঙা উড়ালপুল

স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরে ন’মাস যেতে না যেতেই আবার ফাটল-আতঙ্ক উল্টোডাঙা উড়ালপুলে। ফাটল চোখে পড়ার পর থেকেই এ নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০২২ ০৫:৪০
Share:

বিপজ্জনক: লেক টাউন থেকে বাইপাসের দিকে যাওয়ার সময়ে দেখা যাচ্ছে উল্টোডাঙা উড়ালপুলের এই ফাটল। বুধবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরে ন’মাস যেতে না যেতেই আবার ফাটল-আতঙ্ক উল্টোডাঙা উড়ালপুলে। মঙ্গলবার বিকেলে ওই ফাটল চোখে পড়ার পর থেকেই এ নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে নানা মহলে। বুধবার সকালে সেই ফাটল সরেজমিন দেখতে সেখানে যান পুরসভা ও ‘কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’-র (কেএমডিএ) আধিকারিকেরা। উড়ালপুলটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব রয়েছে কেএমডিএ-র উপরেই। ফাটলের জেরে ফের উড়ালপুল বন্ধ থাকবে কি না, উঠতে শুরু করেছে সেই প্রশ্ন। যদিও কেএমডিএ সূত্রের খবর, এ নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

Advertisement

তবে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী তথা কেএমডিএ-র চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, ‘‘রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। অনেক সময়ে ধাতুর প্রসারণের জন্য ছেড়ে রাখা জায়গাকে ফাটল বলে ভুল করেন অনেকে। সবটা দেখে নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’

কেএমডিএ-র আধিকারিকেরা এ দিন জানিয়েছেন, বাইপাস থেকে লেক টাউনের দিকে যাওয়ার পথে গোলাঘাটার কাছে উড়ালপুলে ফাটলের মতো দেখা গিয়েছে। সেখানে একটি স্তম্ভের পাশের অংশটি খালি চোখে দেখলে মনে হচ্ছে, ফাটল কিছুটা বড় হয়েছে। স্তম্ভের পাশের যে ইটের গাঁথনি, সেটিও কিছুটা হেলে রয়েছে বলে মনে হতে পারে। এই ধারণা থেকেই ঝুঁকি না নিয়ে এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে স্তম্ভটির কম্পাঙ্ক পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। বোঝার চেষ্টা হয়েছে, সেটি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত।

Advertisement

তৈরি হওয়ার পর থেকে গত ১১ বছরে একাধিক বার খবরে এসেছে উল্টোডাঙা উড়ালপুল। এর গঠনমূলক ত্রুটির অভিযোগও উঠেছে বার বার। উল্টোডাঙা উড়ালপুলটি তৈরি করেছিল ‘ম্যাকিনটোশ বার্ন’। ২০১১ সালে তারা কাজ শেষ করার পরে সাধারণের জন্য সেটি খুলে দেওয়া হয়। এর ঠিক দু’বছরের মাথায়, ২০১৩ সালের মার্চ মাসে উড়ালপুলের একটি ডেক ভেঙে নীচের খালে পড়ে যায়। একটি লরি বেপরোয়া গতিতে যাওয়ার সময়ে উল্টোডাঙা উড়ালপুলের রেলিংয়ে ধাক্কা মারে। তার জেরেই ডেকটি ভেঙে নীচে পড়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছিল কেএমডিএ। লরির চালক ও খালাসি গুরুতর জখম হন।

এর প্রায় দেড় বছর বাদে, ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে সংস্কারের পরে ফের খুলে দেওয়া হয় উল্টোডাঙা উড়ালপুল। কিন্তু তার পরেও সমস্যা পিছু ছাড়েনি। ২০১৯ সালের জুলাইয়ে এই উড়ালপুলে ফাটল দেখা যায়। তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরীক্ষা করেন কেএমডিএ এবং পুরসভার আধিকারিকেরা। সেই সময়ে চার দিন ওই উড়ালপুলে যান চলাচল বন্ধ রেখে সংস্কারের কাজ করা হয়। তার পরে গত নভেম্বরে আরও এক প্রস্ত যান চলাচল বন্ধ রেখে উড়ালপুলের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছিল।

তার পরেও নতুন করে ফাটল দেখা যাওয়ার অভিযোগ ওঠায় প্রশ্ন উঠেছে, কী করে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরেই এত দ্রুত এমন ফাটল দেখা দিতে পারে? কেএমডিএ-র কর্তাদেরও প্রশ্ন, যে উড়ালপুলের অন্তত ৩০ বছর টিকে থাকার নিশ্চয়তা দিয়েছিল সেটির নির্মাণকারী সংস্থা, সেটির ঘন ঘন এই পরিস্থিতি হয় কী করে? ফলে নির্মাণকারী সংস্থার পাশাপাশি এ ক্ষেত্রে কেএমডিএ কর্তৃপক্ষেরও কি কোনও দায় নেই— সেই প্রশ্নও তুলছেন অনেকে।

যদিও কেএমডিএ-র এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘দায় রয়েছে বলেই দ্রুত পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। অন্য যে জায়গাগুলিতেও ফাটল দেখা যাওয়ার অভিযোগ উঠছিল, সেগুলি ঠিক নয়। তবে সবটাই রিপোর্ট আকারে সেতু বিষয়ক কমিটির কাছে পাঠানো হচ্ছে। এর পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এখনই আতঙ্কের তেমন কিছু নেই।’’

এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, ফাটল দেখতে আসা জনতার মধ্যেও রয়েছে প্রবল আতঙ্ক। গোলাঘাটের আশপাশের এলাকা থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা দলে দলে আসছেন উড়ালপুলের ফাটল দেখতে। এমনকি, উড়ালপুলের উপরেও মোটরবাইক, গাড়ি থামিয়ে ফাটল দেখার উৎসাহও প্রবল। এমনই এক মোটরবাইক-আরোহীর মন্তব্য, ‘‘এই উড়ালপুল তো দেখছি, খোলার চেয়ে বন্ধই বেশি থাকে। আবার মানুষ মারা যাওয়ার চেয়ে পাকাপাকি ভাবে বন্ধ করে দেওয়াই ভাল।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement