উৎসাহী: মহাকাশ বিষয়ক প্রদর্শনীতে পড়ুয়ারা। বুধবার, বিধান শিশু উদ্যানে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
যার কাঁধে চেপে চন্দ্রযান-২ মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিল সেই ‘বাহুবলী’ (জিএসএলভি মার্ক থ্রি) রকেটের ক্ষুদ্র সংস্করণ দর্শকদের বোঝাচ্ছিল অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া অরিত্র সাহা। ইসরোর তৈরি এই রকেট কী ভাবে মহাকাশে উৎক্ষেপণের কাজ করে, রকেটের সর্বোচ্চ কত ওজন, কতই বা তার গতি, তার কোথায় লাগানো ছিল ল্যান্ডার বিক্রম, সবটাই গড়গড় করে বলছিল কলকাতার এক ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের পড়ুয়া। পাশেই তার বন্ধু সাগ্নিক চক্রবর্তী তখন দেখাচ্ছিল ইসরোর তৈরি অন্য ল্যান্ডারের ক্ষুদ্র সংস্করণ।
ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর স্পেস অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার আমদাবাদ এবং বিধান শিশু উদ্যানের যৌথ উদ্যোগে মহাকাশ বিষয়ক প্রদর্শনী ও প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে উল্টোডাঙার বিধান শিশু উদ্যানে। যা চলবে আগামী ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। সেখানেই বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনায় আগ্রহী পড়ুয়ারা ভিড় করেছে। কেউ তাদের তৈরি রকেট, উপগ্রহের মডেল নিয়ে প্রদর্শনীতে এসেছে। কেউ বা এসেছে শিক্ষক-শিক্ষিকা বা অভিভাবকদের সঙ্গে প্রদর্শনী দেখতে।
বিভিন্ন রকেটের মডেল নিয়ে প্রদর্শনীতে হাজির হয়েছেন ইসরোর বিজ্ঞানী-ইঞ্জিনিয়ারেরাও। এক বিজ্ঞানী-ইঞ্জিনিয়ার অরিন্দম মাল দেখাচ্ছিলেন, মাইক্রোয়েভ ইমেজিং স্যাটেলাইট নামে একটি উপগ্রহ। দেশের সুরক্ষার কাজে ব্যবহার করা হয় এই উপগ্রহটি। তাঁর কথায়, ‘‘ছোটদের মহাকাশ নিয়ে উৎসাহী করতে এই প্রদর্শনী। ওদের প্রশ্নগুলি যতটা সম্ভব সহজ ভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছি।’’ অন্য বিজ্ঞানী রণজিৎ দে বলেন, ‘‘যে রকেটে চাপিয়ে চন্দ্রযান-২ মহাকাশে পাঠানো হয়েছিল, তার একটা স্কেল ইমেজ (ছোট সংস্করণ) আমরা ইসরো থেকে নিয়ে এসেছি। যা দেখতে পড়ুয়াদের খুব উৎসাহ দেখা গিয়েছে।’’
শুধু বিজ্ঞানীরাই নন, রকেট-উপগ্রহের ছোট সংস্করণ কী ভাবে মহাকাশে কাজ করে তা বোঝানোর দায়িত্বে ছিল কলেজ পড়ুয়াদেরও। এ রকমই দুই কলেজ পড়ুয়া অনন্যা বিশ্বাস ও নবনীতা গোস্বামী দেখাচ্ছিলেন, ইসরো ২০১৪ সালে মঙ্গলে একটি উপগ্রহ পাঠিয়েছিল। যার কাজ মঙ্গলের চার ধারে ঘুরে ছবি তোলা ও বিভিন্ন তথ্য পৃথিবীতে পাঠানো। ওই যানের ক্রিয়াকলাপ দর্শকদের সহজ করে বোঝাচ্ছিলেন দুই ছাত্রী।
প্রদর্শনীতে আসা ব্যারাকপুরের এক স্কুলছাত্র শঙ্খদীপ দাস বলে, ‘‘ইসরোর চন্দ্রযান-২ নিয়ে অনেক খবর রাখতাম। তার রকেটের মডেল দেখতে পেয়ে খুব ভাল লাগছে।’’ প্রদর্শনীর পাশাপাশি চলছে বিজ্ঞান সংক্রান্ত কুইজ, বিতর্ক, তাৎক্ষণিক বক্তৃতা। বিধান শিশু উদ্যানের সম্পাদক গৌতম তালুকদার বলেন, ‘‘বিভিন্ন জেলা থেকে স্কুল পড়ুয়া, শিক্ষক-শিক্ষিকারা প্রদর্শনীতে আসছেন। আটশোর বেশি পড়ুয়া তিন দিন ধরে এসেছে। এ ছাড়াও মহাকাশ নিয়ে উৎসাহীদের ভিড়ও হয়েছে।’’