প্রতীকী ছবি।
গ্রাহকের পাসওয়ার্ড জেনে নিয়ে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হাতানোর ঘটনা নতুন নয়। এ বার পড়ুয়াদের পাসওয়ার্ড জেনে অনলাইন ক্লাসে ঢুকে পড়ার অভিযোগ উঠল অজ্ঞাতপরিচয় কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে। অভিযোগ, ভিডিয়ো বন্ধ করে রাখায় শিক্ষকেরা বুঝতে পারছেন না যে বহিরাগতেরা ক্লাসে যোগ দিয়েছে। সবার অজান্তে এ ভাবে জেনে নেওয়া হচ্ছে পড়ুয়াদের ব্যক্তিগত তথ্য, ক্লাসের পড়া। ক্লাসের পরিবেশও নষ্ট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।
সম্প্রতি লা মার্টিনিয়ার স্কুলের একটি অনলাইন ক্লাসে বহিরাগত কেউ ঢুকে পড়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। এ ভাবে পড়ুয়া এবং শিক্ষকদের ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি বা ক্লাসে পড়ানোর বিষয়বস্তু চুরি করা হচ্ছে কি না, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়ে। লা মার্টিনিয়ারের সচিব সুপ্রিয় ধর জানান, যে পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে অনলাইন ক্লাসে ঢুকতে হয়, কোনও পড়ুয়া সেই পাসওয়ার্ড অন্য কাউকে বা বন্ধুবান্ধবকে দেওয়াতেই সম্ভবত এই বিপত্তি। সুপ্রিয়বাবু বলেন, ‘‘বিষয়টি ঠিক কী হয়েছিল জানতে তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছে। ওই ক্লাসের বেশ কিছু স্ক্রিনশটও পাওয়া গিয়েছে। বিষয়টি পাসওয়ার্ড শেয়ারিং না হ্যাকিং, তার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট বিশেষজ্ঞ কমিটিকে দিতে বলা হয়েছে।’’
এই সমস্যায় পড়েছিল সাউথ পয়েন্ট স্কুলও। স্কুলের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য কৃষ্ণ দামানি বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের পাসওয়ার্ড অন্য কারও কাছে চলে যাওয়ায় নবম ও দশম শ্রেণির ক্লাসে এই সমস্যা এক বার হয়েছিল। এখন আমরা অনেক সতর্ক। বহিরাগতেরা যেন ক্লাসে ঢুকতে না পারে, তার জন্য ক্লাসের আইডি ও পাসওয়ার্ড নিয়মিত বদলানো হচ্ছে।’’
বহিরাগত ঢুকে পড়ার সমস্যা ঠেকাতে কিছু স্কুল আবার অনলাইন ক্লাসের জন্য যে অ্যাপ ব্যবহার করা হত, সেটিই বদলে ফেলেছে। ন্যাশনাল ইংলিশ স্কুলের প্রিন্সিপাল মৌসুমী সাহা বলেন, ‘‘বহিরাগতেরা ঢুকে ভিডিয়ো বন্ধ করে রেখে স্মার্ট বোর্ডে কিছু লিখে ফেলছে, এমন ঘটনা হয়েছে। তাই এখন অনলাইনে ক্লাসের জন্য যে অ্যাপ ব্যবহার করতাম সেটি পাল্টে ফেলেছি। আগে আমাদের একটিই পাসওয়ার্ড ছিল। কিন্তু এখন পড়ুয়ারা পাসওয়ার্ড পাল্টে নিতে পারে। ওদের ঘন ঘন পাসওয়ার্ড পাল্টে ফেলার কথা বলেছি। এর ফলে অন্য কারও কাছে পাসওয়ার্ড চলে যাওয়ার আশঙ্কা কমেছে।’’ ডিপিএস রুবি পার্ক স্কুল কর্তৃপক্ষ আবার জানিয়েছেন, কারা ক্লাস করছে, সেই ব্যাপারে নজরদারি করার জন্য শিক্ষকদের একটি দল রয়েছে। কেউ ক্লাসে ভিডিয়ো বেশি ক্ষণ বন্ধ করে রেখে দিলে বা অনুপস্থিত থাকলে ফোন করে তার কারণ জিজ্ঞাসা করা হয়। এমনকি, প্রতিটি অনলাইন ক্লাসে ঢোকার আগে শিক্ষকের অনুমতিও নিতে হয়।
সাইবার বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, অনলাইন ক্লাসের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক থাকা প্রয়োজন। সাইবার বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায় জানান, অনলাইন ক্লাসে পাসওয়ার্ড জেনে বহিরাগতদের ঢুকে পড়ার এই সমস্যা প্রায় বিশ্ব জুড়েই হচ্ছে। ক্লাসে ঢুকে স্মার্ট বোর্ডে অশালীন কথা লেখা বা ভিডিয়ো শেয়ার করার ঘটনাও ঘটেছে। অথচ করোনা পরিস্থিতিতে অনলাইন ক্লাসই অনেক পড়ুয়ার প্রধান ভরসা। তিনি বলেন, ‘‘পাসওয়ার্ড যেন অন্য কারও কাছে না যায়, সেটা দেখতে হবে। পড়ুয়াদের মনে রাখতে হবে, এই পাসওয়ার্ড এটিএমের পাসওয়ার্ডের মতোই সুরক্ষিত রাখা প্রয়োজন।’’
বিভাসবাবু জানান, যে শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছেন (হোস্ট) তাঁকেও সতর্ক থাকতে হবে। কেউ ক্লাসে ঢুকলে তাকে হোস্টের অনুমতি নিয়ে ঢুকতে হবে, এমন ব্যবস্থা রাখতে হবে। এমন অ্যাপ ব্যবহার করতে হবে যা অনেক বেশি সুরক্ষিত। পাশাপাশি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, এর পরেও কোনও বহিরাগত ঢুকলে তার আইডি এবং পাসওয়ার্ড জেনে থানায় জানাতে হবে।