অঘটন: দুর্ঘটনায় আহত দুই স্কুলপড়ুয়া (উপরে)। নিজস্ব চিত্র
স্কুলবাস চালকদের বেপরোয়া মনোভাব পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে কতটা প্রাণঘাতী হতে পারত বৃহস্পতিবার সকালে ফের তার প্রমাণ মিলল হাওড়ায়। একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠল হাওড়া সিটি পুলিশের নজরদারি নিয়ে।
এ দিন সকাল ৮টা নাগাদ হাওড়াগামী একটি রামপুর-হাওড়া রুটের একটি বেসরকারি বাসের সঙ্গে একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল বাসের মুখোমুখি সংঘর্যের ঘটনা ঘটে বেলিলিয়াস রোড ও নর্থ ওয়েস্ট বাইপাসের সংযোগস্থলে। এই দুর্ঘটনায় তিন স্কুল পড়ুয়া সহ ৭ জন আহত হন। স্কুল পড়ুয়াদের কয়েক জনের চিবুক বা কপাল ফেটে যায়। গুরুতর আহত হন স্কুলবাসের চালক। তাঁকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ দিন যে জায়গায় দুর্ঘটনাটি ঘটে সেই রাস্তাটি ইংরেজি ‘ওয়াই’ আকৃতির। স্থানীয় ফাঁসিতলা মোড়ের দিক থেকে এসে রাস্তাটি হাওড়ার ডিসি ট্র্যাফিক এবং গোয়েন্দা দফতরের অফিসের সামনের মোড় থেকে দু’ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। একটি রাস্তা গিয়েছে বেলিলিয়াস রোডের দিকে এবং অন্যটি ইস্ট-ওয়েস্ট বাইপাসের দিকে। এই দু’দিকে ভাগ হওয়ার পরে রাস্তার মাঝে একটি কাট আউট করা হয়েছে, যেখান দিয়ে যে সমস্ত গাড়ি ইস্ট-ওয়েস্ট বাইপাস ধরবে সেগুলি ডান দিকে যাবে। আর বেলিলিয়াস রোড ধরতে চাইলে বাঁ দিকের রাস্তা ধরবে।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই জায়গাটি এত গুরুত্বপূর্ণ ও জনবহুল হলেও কদাচিৎ ওই মোড়ে ট্র্যাফিক পুলিশ থাকে। এমনকি সামনে গোয়েন্দা দফতর হলেও রাস্তার উপরে থাকা পুলিশের অধিকাংশ সিসি ক্যামেরা খারাপ হয়ে পড়ে আছে দীর্ঘদিন। এলাকার বাসিন্দা অমরজিৎ সিংহ ও পাপু সিংহ বলেন, ‘‘এই জায়গায় সব ক্যামেরা যেমন খারাপ তেমনই দিনের অধিকাংশ সময়ে ট্র্যাফিক পুলিশ বা সিভিক পুলিশেরও দেখা মেলে না। আমরা পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা করেছি।’’
এ দিন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী পার্থ হাইত বলেন, ‘‘মেয়েকে স্কুলে দিয়ে এসে আমার দোকানের পাশে মোটরবাইক রেখে দাঁড়িয়েছিলাম। বেশ জোরালো একটা শব্দ শুনে দেখি একটি স্কুলবাস পিছন দিকে গড়িয়ে আমার দিকেই আসছে। আমি মোটরবাইক ফেলে ছুটে ডান দিকে সরে যাই। স্কুলবাসটি আমার গাড়িতে ধাক্কা মেরে দোকানের শাটার ভেঙে ভিতরে ঢুকে যায়।’’
অভিযোগ, ফাঁসিতলার মোড়ের দিক থেকে আসা স্কুলবাসটি বেপরোয়া ভাবে ওয়াই আকৃতির মোড় থেকে ডান দিকে বাইপাসে ঢুকে পড়ে। আর তখনই বাইপাস দিয়ে তীব্র গতিতে আসা বেসরকারি বাসটি স্কুলবাসটিকে এসে ধাক্কা মারে। পুলিশ জানায়, দুর্ঘটনার পরে শিশু পড়ুয়ারা আতঙ্কে কাঁদতে শুরু করে দেয়। সংঘর্ষের শব্দে লোকজন ছুটে আসেন। সামনে থাকা পুলিশ অফিসের পুলিশকর্মীরা ছুটে এসে আহতদের উদ্ধারের কাজ শুরু করেন।
হায়দরাবাদ থেকে ওই স্কুলের প্রিন্সিপাল সুমিতা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘দুর্ঘটনার খবর পেয়েছি। আমাদের চালকের কোনও দোষ ছিল না। বেসরকারি বাসটিই ধাক্কা মেরেছে।’’
অবশ্য হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি ট্র্যাফিক অর্ণব বিশ্বাস বলেন, ‘‘স্কুলবাসের চালক কোনও কিছু না দেখে বাইপাসের রাস্তায় ঢুকে পড়ায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। যে বাসটি ধাক্কা মেরেছে সেটির চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ ডিসি ট্র্যাফিক জানান, ওই জায়গায় খারাপ সিসি ক্যামেরা যাতে দ্রুত সারানো যায় তা তিনি দেখবেন। ওই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় সব সময়ে ট্র্যাফিক পুলিশ থাকে কি না তা-ও খোঁজ নিয়ে দেখবেন।